X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারনেটের দাম কমাতে লোক দেখানো অনুরোধ!

হিটলার এ. হালিম
২১ জুলাই ২০১৬, ০২:২৩আপডেট : ২১ জুলাই ২০১৬, ১১:১২

ইন্টারনেট প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর অন্যতম টার্গেট এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দাম বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগের কথা বলা হলেও এখনও দেশে ইন্টারনেটের দাম কমেনি। দাম না কমানোয় ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচও কমেনি। গ্রাহকদের অভিযোগ, তারা উচ্চমূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিও মনে করে, ‘ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে এখনও ইন্টারনেটের বাজার মূল্য বেশি। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের স্বার্থে ইন্টারনেটের দাম কমানো আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
কিন্তু তারপরও দেশে ইন্টারনেটের দাম কমে না। বরং দাম কমে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের। অথচ দেশের ইন্টারনেট সেবা দাতাদের মোট খরচের মাত্র ৬ থেকে ৭ শতাংশ ব্যয় হয় ব্যান্ডউইথ ক্রয়ে।
বিটিআরসিও ইন্টারনেটের দাম কমানোর বিষয়ে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা পর্যাপ্ত নয় উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন,সংস্থাটি ইন্টারনেট সেবাদাতাদের ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য যে অনুরোধ করেছে তা লোক দেখানো। কস্ট মডেলিং করে ইন্টারনেটে দাম বেঁধে দিয়ে (উচ্চসীমা ও নিম্নসীমা) নির্দেশনা জারি করলে সবাই তা মানত। ইন্টারনেট সেবাদাতাদের শুধু অনুরোধ করায় বিষয়টি আলোর মুখ দেখছে না।আর গ্রাহকরাও কম দামে ইন্টারনেট পাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, এই অনুরোধ না করে শুধু ব্যান্ডউইথের দাম না কমিয়ে বরং এর সঙ্গে আরও যেসব উপাদান জড়িত সেসবের আনুপাতিক হারে দাম কমালে ইন্টারনেট সেবাদাতারা এমনিতেই কম দামে ইন্টারনেট সেবা দিতে পারেন।

অতি সম্প্রতি বিটিআরসি দেশের সব ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে ইন্টারনেটের দাম কমানোর অনুরোধ জানিয়ে ‍দু’টি চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠি দু’টোর কারণে বিতর্ক জন্ম নিয়েছে। বলা হচ্ছে চিঠি দু’টো লোক দেখানো। এর আগে একবার বিটিআরসি ইন্টারনেটের দাম ঠিক করে দিয়ে নির্দেশনা জারি করেছিল এবং গ্রাহকরা তার সুফল পেয়েছিল। এবার সে ধরনের কিছু না করে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ করার ফলে ইন্টারনেটের দাম কমানোর কোনও  উদ্যোগ দৃশ্যমান হচ্ছে না। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য কমিয়ে সাধারণ জনগণের নাগালের ভেতরে নিয়ে আসা এখন আমার অন্যতম লক্ষ্য। আশা করি, অতি শিগগিরই আমরা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারব।

গত বছর অনুষ্ঠিত ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ইন্টারনেটের দাম সহনীয় পর্যায়’ আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও গত বছর একটি অনুষ্ঠানে বলেন,‘ইন্টারনেটের দাম সরকার বেঁধে দেবে।’ কিন্তু এখনও দাম বেঁধে দেওয়া হয়নি। দেশে মোবাইলফোনের ভয়েস কলের উচ্চসীমা ও নিম্নসীমা বেঁধে দেওয়া হলেও ইন্টারনেটের দাম কখনও বিটিআরসি বেঁধে দেয়নি। বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে রেখে পলক বলেন, ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দিলে গ্রাহকরা কম দামে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।

নথি পর্যালোচনা করে দেখে গেছে, গত ৩০ মার্চ বিটিআরসির সিস্টেম ও সার্ভিস বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেশের সব মোবাইলফোন অপারেটরের প্রধান নির্বাহীদের বরাবর পাঠানো হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়,ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ইন্টারনেটের মূল্য হ্রাস করার নিমিত্ত বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গ্রাহকের কাছে এখনও ইন্টারনেটের বাজারমূল্য বেশি বলে প্রতীয়মান হয়। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের স্বার্থে ইন্টারনেটের দাম কমানো আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাহক স্বার্থ বিবেচনায় রেখে ইন্টারনেট সেবার মূল্যহ্রাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

এছাড়া গত ৩১ মে বিটিআরসি থেকে সব মোবাইলফোন অপারেটর, ওয়াইম্যাক্স সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, সব ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠনকে পাঠানো চিঠিতে  আগামী ১৫ দিনের মধ্যে গ্রাহক স্বার্থ বিবেচনায় ইন্টারনেট সেবার মূল্য কি প্রক্রিয়ায় কতটা হ্রাস করা হবে তা লিখিতভাবে কমিশনের কাছে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়।

গত এপ্রিলে মোবাইল, ফিক্সড, ব্রডব্যান্ডসহ সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম কমাতে নির্দেশনা দিয়েছিল সরকার। দীর্ঘদিন ইন্টারনেটের দাম না কমায় গ্রাহকদের স্বার্থে এই উদ্যোগ নিয়ে বিটিআরসিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে এ ব্যাপারে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নির্দেশনা পেয়ে শুধু মোবাইলফোন অপারেটরগুলোকে চিঠি পাঠায় বিটিআরসি। নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সেই চিঠিতে অপারেটরগুলোকে ইন্টারনেটের দাম কমাতে বলা হয়েছে। হলেও কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে দাম কমানো হবে সেসব কিছুই চিঠিতে উল্লেখ ছিল না।

জানতে চাইলে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি মো.আমিনুল হাকিম বলেন, এভাবে ইন্টারনেটের দাম কমানো সম্ভব নয়। এর সঙ্গে যেসব উপাদান রয়েছে (ব্যান্ডউইথ ছাড়াও আরও অনেক কিছু) সেসবেরও দাম কমাতে হবে। তা না হলে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমবে না। তিনি বলেন, ইন্টারনেট সেবাদানের একটা বড় মাধ্যম হলো মাটির নিচ সেবা ক্যাবলের মাধ্যমে সেবাদান পদ্ধতি বা এনটিটিএন সেবা। এনটিটিএন ভাড়া ২০০৯ সালে যা ছিল এখনও তাই রয়েছে। সবকিছুর দাম কমলেও এনটিটিএন ভাড়ার দাম কমেনি। সেই চড়া দামই রয়ে গেছে। তিনি মনে করেন, এনটিটিএন –এর ভাড়া কমাতে হবে নয়তো আরও লাইসেন্স দিয়ে একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করে দিতে হবে। তাহলেই গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমানো সম্ভব হবে।

 

আরও পড়তে পারেন: ঢাকা থেকেই নিখোঁজ ৭২ জন

আরও পড়তে পারেন: ‘নিখোঁজ’ তালিকার ওজাকি কি কানাডায়?

/এনএস/এমএসএম /

 

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা