X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হাজার কোটি’ টাকা আয়ের স্বপ্ন কত দূর?

হিটলার এ. হালিম
১৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৭:৫৬আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ২০:৪৩

১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হাজার কোটি’ টাকা আয়ের স্বপ্ন কত দূর? ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাজার কোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন নিয়ে দুই বছরের বেশি সময় আগে হাতে নেওয়া লার্নিং-আর্নিং প্রকল্পের কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। যদিও এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সাল পর্যন্ত। একসঙ্গে পুরো কাজ করার কথা থাকলেও পদ্ধতিগত কিছু জটিলতার সৃষ্টি হওয়ায় এই প্রকল্পটি ৩টি ভাগে শেষ হতে যাচ্ছে বলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রথম ভাগের কাজ সম্পন্ন হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগের কাজ শুরু হয়েছে মাত্র। প্রথম ভাগের কাজের অভিজ্ঞতা আমলে নিয়ে আইসিটি বিভাগ দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগের কাজ আরও বিস্তৃত পরিসর, উচ্চমান, বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং সময়ের চাহিদা অনুযায়ী কোর্স দিয়ে সাজিয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিটি বিভাগের একাধিক সূত্র।
২০১৪ সালের শুরুতে ১৮০ কোটি টাকা বাজেট নিয়ে তরুণদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দিয়ে হাজার কোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে শুরু হয় লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক প্রকল্প। এই প্রকল্পে সারাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিপ্রেমী তথা ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি বলব যে, আমরা এখন ঠিক পথেই এগোচ্ছি। টার্গেট ঠিক করায় কাজ করতে সুবিধা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এই কাজ তিনটি পর্যায়ে শেষ করতে যাচ্ছি। প্রথম পর্যায়ে আমরা ২০ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছিল ৩ দিন। দ্বিতীয় পর্যায়ে আমরা ১৩ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেব। ৫০ দিনের মেয়াদের এই কোর্সে ২০০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যেন তারা ঘরে বসেই অনলাইনে কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী ৬ মাসের মধ্যে অনলাইন মার্কেট প্লেসে অনেকে নিবন্ধিত হবে, তাদের আয়ের সুযোগ তৈরি হবে। আমরা একটি ভালো ফল পাব।’ তিনি জানান, ‘লার্নিং-আর্নিং মেলা আয়োজনের ফলে প্রচার, প্রচারণার কাজটি ভালোভাবেই হচ্ছে। সাড়া ভালো। অনলাইনে অনেকে নিবন্ধন করছে। সবাইকে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া না গেলেও তারা অনলাইনে সংযুক্ত হতে পারছে। টেন মিনিটস স্কুলের মতো আমরা বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল কনটেন্ট সংগ্রহ করছি। নিবন্ধিতরা সেসব কনটেন্ট একসেস করতে পারছে। ফলে তাদের জ্ঞানের দিকটাও সমৃদ্ধ হচ্ছে।
আইসিটি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের প্রশিক্ষণের আগে সারাদেশে লার্নিং-আর্নিং মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এতে করে সারাদেশ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছে আইসিটি বিভাগ। মেলায় এসে অনেকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারছে, তাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। ফলে পরবর্তী সময়ে আগ্রহীরাও নতুন এই কর্মখাতে যুক্ত হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট মনে করেন, দেশের প্রায় ১ লাখ তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সার আউটসোর্সিং খাতে যে আয় করছেন তাদের বেশিরভাগই নিজ যোগ্যতার ভিত্তিতে। তবে এ ধরনের প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে যেসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে সেগুলো এবং লার্নিং-আর্নিং প্রকল্পের প্রথম ভাগের মূল্যায়নের পক্ষে মত দিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। মূল্যায়নের ফল বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী সময়ে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, আউটসোর্সিং আয়ের জন্য দেশে ৫৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার (পরবর্তী সময়ে এ সংখ্যা বাড়ানো হয়) তৈরির উদ্যোগ নেয় সরকার। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক এ প্রকল্পের জন্য আইসিটি বিভাগ এজন্য বরাদ্দ পায় ১৮০ কোটি টাকা। এই টাকা ব্যয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরি করে ২ বছর পরে আইসিটি বিভাগ ১ হাজার কোটি টাকা আয়ের পরিকল্পনা করে।
জানা গেছে, ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণের জন্য আইসিটি বিভাগ সে সময় ৩০৫কোটির বেশি টাকা চেয়েছিল সরকারের কাছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এ দাবিকে অস্বাভাবিক বলে ১৮০ কোটি টাকা দেওয়া যেতে পারে বলে মত দেয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় খাতভিত্তিক কার্যক্রম ও ব্যয় পর্যালোচনা করে ১২৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হিসেবে চিহ্নিত করে। এ প্রকল্পের বিপরীতে ১৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকার বেশি অর্থ বরাদ্দ দিতে রাজি হয়নি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। পরে আইসিটি বিভাগ ‘রিভাইজড’ প্রস্তাবনা জমা দিলে ১৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সেই সময়ের আইসিটি বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেছিলেন, ‘এই টাকা ব্যয় করে আমরা দুই বছর পর ১ হাজার কোটি টাকা আয় করে দেখাব।’ তিনি উল্লেখ করেছিলেন, ‘গত বছর (২০১৩ সালে) ফ্রিল্যান্সিংয়ে আমাদের দেশের তরুণরা আয় করেছে ৪-৫ কোটি ডলার। এর আগের বছর আয় করেছে ২ কোটি ডলারের মতো।’
তবে এই লক্ষ্য অর্জনের পথে কয়েকটি প্রতিবন্ধকতার কথাও তিনি উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘ইংরেজিতে দুর্বলতা আউটসোর্সিং আয়ের ক্ষেত্রে বড় বাধা। তরুণরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশের ভাষার একসেন্ট পুরোপুরি বুঝতে ব্যর্থ হওয়ায় আমাদের দেশে কলসেন্টারগুলো ব্যবসা আনতে পারছে না। এ বাধা কাটিয়ে উঠতে পারলে তরুণদের আয়ের পরিমাণ বাড়বে।’ প্রতিবন্ধকতা দূর করতে নজরুল ইসলাম খান দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি কম্পিউটার ল্যাব ও ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান।
পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ২০১৬ সালে সারাদেশে ২ হাজার কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব তৈরি করেছে আইসিটি বিভাগ। আরও ৮ শতাধিক ল্যাব তৈরি হওয়ার পথে। এসব ল্যাবে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সাররা বিভিন্ন দেশের ভাষা শেখার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আরও কমলো সোনার দাম  
আরও কমলো সোনার দাম  
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না