X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘দেশি কোম্পানিগুলোকেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে দিন’

শামীম আহসান
০২ জানুয়ারি ২০১৭, ২০:১২আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০১৭, ১৬:৩৯

শামীম আহসান সরকারি নীতির কারণেই আলীবাবার উত্থান, যা মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য চীনকে কঠিন করে তুলেছে। আলিবাবাকে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে যে পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন ছিল, তার সবই চীনের সরকার তাদের দিয়েছে। ভারতে টাটা, বিড়লা ও রিলায়েন্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও বছরের পর বছর স্থিতিশীল নীতি, স্বচ্ছতা আর প্রযোগিতামূলক কর কাঠামো এবং প্রণোদনা ও ভর্তূকি পেয়ে আসছে। এই বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সরকারের ডিজিটাল ইন্ডিয়া ভিশন সফল করায় সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
শিল্পপতিরা সম্প্রতি ভারতের ডিজিটাল খাতে সাড়ে চার লাখ কোটি রুপি বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির ঘোষণা দিয়েছেন, যা দেশটিতে প্রায় ১৮ লাখ চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক সাফল্যগাঁথার অন্যতম প্রধান অংশই হয়ে গেছে স্যামসাং, যে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ব্যাপক সহযোগিতা আর ভর্তূকির পরই দাঁড়িয়েছে। আমাদের ডিজিটাল ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে ভিশন–২০২১ আর বেশি দূরে নেই, স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবসাগুলোর সৃষ্টি করা সম্ভাবনাও উপেক্ষা করার মতো নয়। উন্নয়ন তরাণ্বিত করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন এবং আসছে বছরগুলোয় আমাদের অর্থনীতির চাকাকে আরও জোরে চালিত করার ক্ষমতা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর রয়েছে।
গত ২০ বছরে স্থানীয় আইটি শিল্পে অগ্রগতি ঘটেছে। শুরুর দিকে প্রযুক্তি সম্পর্কে খুব কম মানুষেরই জানা ছিল এবং এই খাত যে পরবর্তী বছরগুলোয় উন্নয়ন ও বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, তাও ধারণা করতে পারেননি অনেকে। আমাদের এই শিল্পে বর্তমানে দুই হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানে ৭ লাখেরও বেশি মানুষ কাজ করছেন। আমাদের অনেক আইটি প্রতিষ্ঠানই বৈশ্বিকভাবে অবস্থান সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে, হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বমানের ব্যাংকিং সফটওয়্যার তৈরি করছে। ওয়েলস ফারগো ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এনএ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক লিমিটেড, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, এইচএসবিসি বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের তৈরি সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। এর বিপরীত দৃশ্যটাই বাংলাদেশে দেখা যায়। তবে এ ব্যাপারে সচেতনতা এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্ভরতা সৃষ্টি হয়নি এখনও। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যাংকগুলো তাদের সমুদয় ক্রয়ের ৮০ শতাংশ বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে নেয়, যা পীড়াদায়ক।

তথ্যের নিরাপত্তার জন্যই সরকারের উচিত প্রকল্পের কাজগুলো দক্ষতার প্রেক্ষিতে স্থানীয় ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশিদারীত্বে করা। এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড -এর অভাব রয়েছে যা নিয়ে কাজ করা জরুরি। ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বহু দেশেই একটা সরকারি দিক নির্দেশনা রয়েছে, যাতে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি সরকারি কাজ করার নীতিমালার কথা নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে আমাদেরও একই রকম আইন এবং নির্দেশনা দরকার। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগেরই বাংলাদেশে কোনও অফিস নেই এবং দিনের শেষে আসল ও লাভ নিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যায়।

গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে হানা দেয় চীনা হ্যাকাররা। জল্পনা-কল্পনা রয়েছে, সে সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে নেয় তারা। চড়ামূল্যের বিদেশি সফটওয়্যার এবং প্রযুক্তি ব্যবহারকারী বেশ কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকেও টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হ্যাকাররা। আমাদের স্থানীয় আইটি প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চমানের প্রযুক্তি এবং সেবা দিয়ে থাকে। এরপরও আমরা প্রচুর অর্থ ব্যয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞ আনছি। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে নিজেদের স্পর্শকাতর তথ্যগুলো উন্মুক্ত করে তাদের সেবা নিচ্ছি।

সরকারের দিক থেকেও বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তূলনামূলক বেশি সুবিধা ভোগ করছে। সরকারের বড় বড় প্রকল্পগুলো বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে। এসব প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যারগুলোয় তেমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে না। সেই সঙ্গে এসব বিক্রেতার বিক্রয়োত্তর সেবার মানও নিম্ন। এসব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে উন্মুক্ত আমাদের নিজস্ব এবং স্পর্শকাতর তথ্যগুলো এখন হুমকি হয়ে উঠেছে। তথ্যের নিরাপত্তার জন্যই সরকারের উচিত প্রকল্পের কাজগুলো দক্ষতার প্রেক্ষিতে স্থানীয় ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশিদারীত্বে করা। এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড -এর অভাব রয়েছে যা নিয়ে কাজ করা জরুরি। ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বহু দেশেই একটা সরকারি দিক নির্দেশনা রয়েছে, যাতে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি সরকারি কাজ করার নীতিমালার কথা নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে আমাদেরও একই রকম আইন এবং নির্দেশনা দরকার। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগেরই বাংলাদেশে কোনও অফিস নেই এবং দিনের শেষে আসল ও লাভ নিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যায়।

বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করতে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ স্থানীয় অংশীদার থাকতে হবে। স্থানীয় এবং বিদেশি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সুযোগের সমতা নিশ্চিতে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা উচিত।

বাংলাদেশে দারুন সম্ভাবনাময় বাজার দেখে বিদেশি ই-কমার্স কোম্পানিগুলো অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাজারদখলের চেষ্টা করছে এবং অপেক্ষাকৃত ছোট স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পথে বসানোর পাঁয়তারা করছে। এই বিদেশি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে সহজেই ঢুকে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে, যারা প্রায়ই প্রাইস ও ক্যাপিটাল ডাম্পিংয়ের মাধ্যমে বাজার দখল করার অপচেষ্টা চালায়। দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করতে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ স্থানীয় অংশীদার থাকতে হবে। স্থানীয় এবং বিদেশি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সুযোগের সমতা নিশ্চিতে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা উচিত। কিন্তু এটা অত্যন্ত হতাশার যে, সংশ্লিষ্ট সরকারি মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো এখনও প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

নতুন বছরটা স্থানীয় আইটি শিল্পের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর বছর হতে পারে। এই শিল্পের বিকাশে কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালে এসব বিষয়ে মনোযোগ দেবে এবং তাদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা আসবে বলে আমি আশাবাদী।
নতুন বছরটা হোক বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাফল্যের বছর।

লেখক: ফেনক্স ভেঞ্চার ক্যাপিটালের জেনারেল পার্টনার এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইকুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে (ভিসিপিইএবি) -এর সভাপতি, বেসিসের সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক।

/এইচএএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা