X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ই-কমার্স খাতের ক্যাশ অন ডেলিভারি

হিটলার এ. হালিম
১৬ জানুয়ারি ২০১৭, ২২:০৫আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:৩৪

ই কমার্স সম্প্রতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ই-কমার্সের ক্যাশ অন ডেলিভারি (সিওডি) পদ্ধতি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে। গ্রাহকদের অর্ডার অনুযায়ী পণ্য ডেলিভারি দিয়ে টাকা নিয়ে ফেরার পথে প্রায় ডেলিভারিম্যানদের পড়তে হচ্ছে ছিনতাইকারীর কবলে। এছাড়া  অর্ডার দিয়ে পণ্যের মূল্য পরিশোধ না করা, পণ্য বুঝে নিয়ে ক্রেতার হাওয়া হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। এসব ঘটনায় ই-কমার্সের সঙ্গে জড়িতরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।

প্রসঙ্গত, দেশে ই-কমার্স খাতের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ ৩৫০ কোটি টাকার কিছু বেশি। দেশে ই-কমার্স খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৫ হাজার উদ্যোক্তা রয়েছেন। এছাড়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই খাতে ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেশের খুচরা বাজারগুলোর ২ থেকে ৩ শতাংশ অনলাইনে আনা সম্ভব হলে অনলাইন বাজারের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে আগামী দিনে সিওডিতে ঝুঁকি আরও বাড়বে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রস্তাবিত ই-কমার্স নীতিমালায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্তকরণ, ই-কমার্সে চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগের জায়গা নির্দিষ্ট করা (হোম ডেলিভারি সার্ভিস হিসেবে নয়), পেমেন্ট পদ্ধতি সহজ করাসহ সহায়ক বিষয়গুলো নিয়ে যথাযথ ফোরামে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা গেলে এর ঝুঁকি অনেক কমে যাবে।

সম্প্রতি ই-কমার্সের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ছিনতাইকারী। দিনে দিনে এ ধরনের ঝুঁকি বাড়ছে। দেখা যাচ্ছে, এক জায়গা থেকে অনেক টাকার পণ্য অর্ডার করা হয়েছে। পণ্য পৌঁছে দিয়ে টাকা আনতে গেলে তারা পণ্য রেখে দিচ্ছে ঠিকই; কিন্তু টাকা দিচ্ছে না। আবার অনেক সময় পণ্যের বিনিময়ে টাকা নিয়ে বের হওয়ার পর ছিনতাইকারীর শিকার হচ্ছেন ডেলিভারিম্যান। এ অবস্থা চলতে থাকলে  চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে ই-কমার্স খাত।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হয়েছেন। ক্যাশ ইন ডেলিভারির বিকল্প ভাবারও সময় হয়েছে বলে তারা মনে করছেন। তাদের মতে, যেকোনও অর্ডারের বিপরীতে পেমেন্ট ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নিতে হবে। ই-কমার্স বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যাশ অন ডেলিভারিই বেশ উপযোগী একটা পদ্ধতি। দক্ষিণ এশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো দেশে এ ব্যবস্থা খুবই জনপ্রিয়। তবে ঠিক এর বিপরীত চিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে।

আজকের ডিলের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘যেকোনও দেশে ই-কমার্সের প্রাথমিক ধাপে সিওডি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এরপর যখন ই–কমার্স ভালো অবস্থানে পৌঁছে যাবে, তখন অর্থ দেওয়া-নেওয়া পদ্ধতিকে ডিজিটালাইজড করা যেতে পারে। কেননা অনলাইনে পণ্য কেনাকাটার জন্য মানুষ সিওডিকেই কম ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে।’

ফাহিম মাশরুর আরও বলেন, ‘ডেলিভারি পার্সনের ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত কিছু নেতিবাচক ঘটনা ঘটে। এটা যেকোনও ব্যবসাতেই ঘটতে পারে। তবে আমি অগ্রিম টাকা পরিশোধের বিষয়টি নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। অনেক প্রতিষ্ঠানই অগ্রিম টাকা নিয়ে ক্রেতাদের পণ্য দেয় না। এতে ক্রেতারা প্রতারিত হয়। ফলে অগ্রিম পরিশোধের ব্যাপারে ক্রেতাদের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। যা ই-কমার্স বেড়ে ওঠার পথে বেশ বড় একটি বাধা।’ ই-কমার্সের প্রাথমিক পর্যায়ে বাজার ধরার জন্য ক্যাশ অন ডেলিভারি অত্যন্ত উপযোগী একটা পদ্ধতি বলে তার ধারণা।

চালডাল ডট কমের চিফ অপারেটিং অফিসার জিয়া আশরাফ বলেন, ‘সিওডি বন্ধ করে দিলে দেশে ই-কমার্সের অর্ডার ৮০ ভাগ পড়ে যাবে। তখন এটা টিকিয়ে রাখা মুশকিল হবে। তাই, যে দেশে ই-কমার্সের ৯০ ভাগ সিওডির মাধ্যমে হয়, সে দেশে সিওডি বন্ধ না করে প্রটেকশন দেওয়া উচিত। সিওডিতে প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশ্বাস, পণ্যের মান, পণ্যের ধরন ও সময়মতো পণ্য সরবরাহ বিষয়গুলো জড়িত থাকে। এগুলো নীতি-নির্ধারকদের দেখতে হবে।’

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান প্রিয়শপ ডট কমের প্রধান নির্বাহী আশিকুল আলম খান বলেন, ‘এখন আমাদের মোট সরবরাহের (পণ্য ডেলিভারি) মধ্যে ২-৩ শতাংশের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সিওডির ফলে আসলেই ঝামেলা হয়। ভুয়া অর্ডার আসে, অনেকে পণ্য পেয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে রাখে না, ক্রেতারা জায়গা পরিবর্তন করে, ছিনতাই হয়, অন্য পণ্য রেখে দেয়, ডেলিভারিম্যানদের কাছে অনেক টাকা পেলে পুলিশ ঝামেলা করে।’ এজন্য কোনও একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করে বিষয়টি প্রস্তাবিত নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা গেলে সিওডিতে ঝামেলা কম হবে বলেও তিনি মনে করেন।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর সভাপতি রাজিব আহমেদ বলেন, ‘ধারণা করা হয় ই-কমার্সের অর্ডারের ৯০% চলে ক্যাশ অন ডেলিভারি দিয়ে। এর ফলে কিছু ঝুঁকি অবশ্যই আছে। নিয়মিত টাকা বা পণ্য

ছিনতাই হয়। এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট আসে। ই-কমার্সের ডেলিভারিতে কোনও ইনস্যুরেন্স বা বীমা নেই। তাই ঝুঁকি আসলেই অনেক বেশি।’

 আরও পড়ুন: নব্য জেএমবির নতুন কৌশল: কালোজিরা ও মধু বিক্রি

/এমএনএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক