X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল দুনিয়ায় দাপুটে উপস্থিতি বাংলার

হিটলার এ. হালিম
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৯:৫৯আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২০:০১

ডট বাংলা

বাংলা ভাষার ডিজিটালাইজেশন নিয়ে সাম্প্রতিককালের দুটো ভালো খবর রয়েছে। প্রথমটি হলো- ডট বাংলা ডোমেইন অর্জন। দ্বিতীয়টি হলো-তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে ১৬টি টুলস তৈরির উদ্যোগ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই দুটি উদ্যোগ পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা গেলে ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা ভাষার উপস্থিতি দাপটের সঙ্গে বাড়বে এবং ডিজিটাল মাধ্যমে (ডিভাইসে) বাংলা ভাষা লেখা ও পড়া আরও সহজ এবং প্রাঞ্জল হবে।

গত বছরের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বরাদ্দ পায় কান্ট্রিকোড টপ লেভেল ডোমেইন ডট বাংলা। ডিজিটাল দুনিয়ায় সংশ্লিষ্ট দেশের ডোমেইনই হলো সেই দেশের জাতীয় পতাকা। ডট বাংলা প্রাপ্তির ফলে এখন ডিজিটাল দুনিয়ায় উড়বে বাংলাদেশের পতাকা। এরফলে বাংলায় সংশ্লিষ্ট ডোমেইনের নাম লিখে প্রবেশ করা যাবে কাঙ্ক্ষিত সাইটে। বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) তত্ত্বাবধানে ডট বাংলার নিবন্ধন চলছে। অনলাইনের পাশাপাশি একুশে গ্রন্থমেলায় বিটিসিএল-এর স্টলেও ডট বাংলার নিবন্ধন চলছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির পরিচালক (জনসংযোগ ও প্রকাশনা) মীর মোহাম্মদ মোরশেদ।

অন্যদিকে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উন্নয়নে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এজন্য সরকারকে ‘১৬টি কম্পোনেন্ট তথা টুলস’ কিনতে হবে। এরজন্য আইসিটি বিভাগ ১৫৩ কোটি ২০ লাখ টাকার একটি প্রস্তাব দিয়েছে বলে আইসিটি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। ১৬টি কম্পোনেন্ট বা টুলসের মধ্যে রয়েছে বাংলা কার্পাস, বাংলা ওসিআর, বাংলা স্পিচ টু টেক্সট, টেক্সটু টু স্পিচ, জাতীয় বাংলা কি-বোর্ড, বাংলা স্টাইল গাইড, বাংলা ফন্ট, বাংলা মেশিন ট্রান্সলেটর। এগুলো ব্যবহার করা সম্ভব হলে ডিজিটাল দুনিয়া এবং ডিভাইসে আরও ভালোভাবে এবং সহজে বাংলা ভাষায় লেখা, পড়া, অনুবাদ সহজ হবে।

যদিও দেশেই এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে বাংলা ওসিআর (বই বা পত্রিকা স্ক্যান করে তা সরাসরি এমএস ওয়ার্ডে কনভার্ট করার প্রযুক্তি)। দেশীয় সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টিম ইঞ্জিন তৈরি করেছে এই ওসিআর।

এদিকে স্মার্টফোনের জন্য দেশে তৈরি হচ্ছে বাংলায় অ্যাপস। সরকার মোবাইলফোনের কি-প্যাডে বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক করেছে। ফলে সব মোবাইলফোনেই বাংলা লেখা ও পড়া যাচ্ছে। দেশে আমদানি হওয়া কম্পিউটার, ল্যাপটপের কি-বোর্ডে থাকছে বাংলা। কোনোটার কি-বোর্ডে বাংলা হরফ মুদ্রিত থাকছে, কোনোটায়  আবার সফটওয়্যার আকারে থাকছে। কম্পিউটারে বাংলা লেখন পদ্ধতির উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বারের বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের পেটেন্ট লাভের পর থেকে এই ব্যবস্থা দেশে চালু হয়েছে। তিনি জানান, দেশের ৯৯ ভাগ কম্পিউটারে বাংলা লিখতে বিজয় সফটওয়্যার ব্যবহার হয়।

 

ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা জনপ্রিয় হয়েছে ইউনিকোড ও অভ্র আসার পর থেকে। এরমধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় হলো বিজয় ইউনিকোড। অভ্রও প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে পছন্দের আরেক নাম। বিজয়ের উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান,আগে উইন্ডোজ ফরম্যাটে বাংলা জনপ্রিয় হলেও হালে ‘বিজয় বাংলা’ জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে ম্যাক, উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম লিনাক্সেও।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও বাংলা সর্বাধিক জনপ্রিয়। যদিও তাতে ইউনিকোড ও অভ্র দিয়ে লিখতে হয়। এর সব নিয়ম-কানুন ও শর্ত ইংরেজিতে। তবে আশার কথা হলো, বাংলাদেশে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা দেখে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তার যাবতীয় কনটেন্ট (নিয়ম-কানুন ও শর্তাবলী) বাংলায় তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

ইংরেজি অনুবাদ সমস্যা দূর করতে বিখ্যাত সার্চ জায়ান্ট গুগল বাংলায়ও অনুবাদ অপশন চালু করেছে। তবে বাংলার ‘স্টক অব ওয়ার্ড’ পর্যাপ্ত না হওয়ায় গুগল বাংলাদেশের একাধিক কমিউনিটি গ্রুপ সারাদেশে গুগল শব্দ ভাণ্ডারে বাংলা শব্দ যোগ করার একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ। এই আয়োজনে সরকারের আইসিটি বিভাগের সঙ্গে ছিল বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান বলেন, ‘আমরা ওই আয়োজনে সাত লাখের বেশি বাংলা শব্দ ও বাক্যাংশ যোগ করতে সক্ষম হই। যদিও আমাদের টার্গেট ছিল চার লাখ। এখনও গুগলে বাংলা অনুবাদ পূর্ণতা লাভ করেনি। বাংলা শব্দ যোগ করার প্রক্রিয়াটি এখনও চলমান। আস্তে আস্তে বাংলা গুগলেও দাপট দেখাতে শুরু করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।    

দেশে বাংলায় ই-বুক তৈরির হিড়িক পড়েছে। মুদ্রিত বইয়ের পাশাপাশি ই-বুকের বেশ জনপ্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। ঢাকায় চলমান একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক ই-বুক প্রকাশের খবর পাওয়া গেছে। পুরনো বইয়ের পাশাপাশি নতুন বইয়েরও ই-বুক ভার্সন তৈরি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

মোস্তাফা জব্বার জানান, তথ্যপ্রযুক্তি তথা কম্পিউটারে বাংলা লেখার শুরুটা একেবারেই সাধারণভাবে হয়। ১৯৮৬ সালে দেশের কম্পিউটারে বাংলার জন্ম হয়। ওই বছরই ডেস্কটপ পাবলিশিং (ডিটিপি) প্রযুক্তিতে ঢাকা কুরিয়ার প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৮৭ সালের ১৬ মে কম্পিউটারে কম্পোজ করা বাংলা পত্রিকা (আনন্দপত্র) প্রকাশের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলার প্রবেশ করে ডিটিপি বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটায়। অন্যদিকে ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় বাংলা কি-বোর্ড ও সফটওয়্যার প্রকাশ হয়। এরপর তো সবই ইতিহাস।

/এইচএএইচ/এপিএইচ/

আরও পড়ুন: 

পাড়ায় পাড়ায় শিশুদের শহীদ মিনার

ব্যাংক খাতে উপেক্ষিত বাংলা ভাষা

 

ফেসবুকজুড়ে একুশের গান, একুশই প্রাণ

 

ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী সেই আম গাছটির শেষ রক্ষা হয়নি

 

একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলে গেছে পুলিশ!

বিজ্ঞাপনে বদলে গেছে একুশ!

ব্রিটেনে যতো শহীদ মিনার

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়তে হবে’
‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়তে হবে’
প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর
প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর
উত্তাল চুয়েট, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
উত্তাল চুয়েট, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না