X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফেসবুককে কোথায় নিতে চান জাকারবার্গ?

পান্থ রহমান রেজা
১৪ মে ২০১৭, ১৭:২৭আপডেট : ১৪ মে ২০১৭, ১৭:২৭

জাকারবার্গ মাসখানেক আগের কথা। হঠাৎ খবর বেরুলো, সরকার ফেসবুক বন্ধ করে দিচ্ছে। সেই খবর শুনে অনেকের প্রতিক্রিয়া ছিল দেখার মতো! সবার সঙ্গে সবার যে যোগাযোগ, তার কী হবে! খুব স্বাভাবিক। কারণ, ফেসবুক আজ বিপুলসংখ্যক মানুষকে একটি পরিবারের মধ্যে নিয়ে এসেছে। মানুষের জীবনে এর প্রভাব অনেক বেশি। অথচ এর শিশুকাল এখনও পেরোয়নি। বরং দিন দিন নানা ধরনের ফিচার যোগ হওয়ায় এটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।


এই অপ্রতিরোধ্য হওয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়ে দাঁড়াবে ফেসবুক? অনেকে অনেক কথা বলেছেন, বলবেন। তবে মাস দুয়েক আগে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ জানিয়েছেন, তার স্বপ্নকথা! জাকারবার্গের স্বপ্ন নিয়ে এই লেখা।
ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখ। বিল্ডিং গ্লোবাল কমিউনিটি শিরোনামে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার শব্দের একটা পোস্ট লেখেন জাকারবার্গ। লেখাটির বেশিরভাগ অংশেই আছে ভুয়া খবর, ফিল্টার বাবল, সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের ফেসবুক ব্যবহার করে যোগাযোগ এবং কীভাবে ফেসবুক সম্প্রদায় ও তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা দেবেন, সেটা নিয়ে। এর বাইরে আরও একটি বিষয় নিয়ে তিনি অনেক কথা বলেছেন। সেটি হলো এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
ফেসবুকে ইতোমধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার শুরু হয়েছে। বিশেষ করে এর নিউজফিডে। মানে আপনি কোন খবর দেখবেন আর কোনটি দেখতে পাবেন না, সেটা নির্ধারণ করে দিচ্ছে এআই। এছাড়া ফটো স্ক্রিনিং, ফেসিয়াল রিকগনিশন, সেফটি চেকের মতো ফিচারেও যুক্ত হয়েছে এআই প্রযুক্তি। আগামীদিনে এর ব্যবহার আরও যে বাড়বে, সে ইঙ্গিত রেখেছেন জাকারবার্গ তার লেখায়। এর ফলে সাইবার অপরাধ, বুলিং, অশ্লীলতা, সাম্প্রদায়িকতার মতো বিষয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নজর আরও বাড়বে।
তিনি লিখেছেন, একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া তৈরি ও তার স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণ করতে এআই প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া জরুরি। আর এই স্ট্যান্ডার্ড বা মানদণ্ড নির্ধারণ করবে ফেসবুক ব্যবহারকারীরাই। অর্থাৎ যিনি যে এলাকার বাসিন্দা, তিনি তার এলাকার স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণ করবেন, এমনটাই জানিয়েছেন জাকারবার্গ। প্রতি মাসে ফেসবুক ব্যবহারকারীর দুই বিলিয়ন পোস্ট এআই প্রযুক্তি স্ক্যান করে, সেগুলোতে আপত্তিকর কিছু আছে কিনা, তা দেখতে।
আবার ফেসবুকে মানুষজন কী করছে, কী নিয়ে কথাবার্তা বলছে, সেটা জানতেও এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। যেমন কেউ একজন বা একটা গ্রুপ সাম্প্রদায়িক বার্তা, প্রোপাগান্ডা বা সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে বার্তা ব্যবহারের কাজে ফেসবুক ব্যবহার করলো। তাদের যেন খুব সহজে এবং দ্রুততার সঙ্গে চিহ্নিত করা যায়, সেজন্য এআই-এর সাহায্য নেবে বলেও জানিয়েছেন জাকারবার্গ। তবে তিনি এও জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে এগুলোর কিছু অংশ নিয়ে কাজ হলেও আরও কিছু আসতে অনেক সময় লেগে যাবে।
বিশ্বজুড়েই এ সময়ের একটি আলোচিত বিষয় হচ্ছে ফেক নিউজ বা ভুয়া সংবাদ। আর এই ভুয়া সংবাদগুলো আমজনতার কাছে পৌঁছে দিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে ফেসবুক। এ জন্য ফেসবুকের সমালোচনাও কম হয়নি। জাকারবার্গও বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে কথা বলেছেন। বিল্ডিং গ্লোবাল কমিউনিটি লেখাতেও এ বিষয়ে ফেসবুকের অবস্থান এবং এর সমাধানে কী করতে চান, সে সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। ভুয়া সংবাদকে তিনি স্প্যামের মতোই আপদ মনে করেন। স্প্যামের বিরুদ্ধে যেভাবে লড়াই করছেন, ভুয়া সংবাদের বিরুদ্ধেও তেমন লড়াই করবেন বলে জানিয়েছেন।
বিশ্ব আজকে সন্ত্রাসবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মহামারী, উদ্বাস্তু সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। কারও একার পক্ষে এই সমস্যা দূর করা সম্ভব নয়। একটি দেশে যুদ্ধ লাগলে, উদ্বাস্তু হয়ে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবেশী দেশে গিয়ে ওঠে। কোনও একটি দেশে ভাইরাস আক্রমণ করলে, সেটা পাশের দেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারও একার পক্ষে সম্ভব না হলেও অসংখ্য মানুষ ফেসবুকে স্বেচ্ছাসেবামূলক অনেক উদ্যোগ বা সাপোর্ট গ্রুপে যোগ দিচ্ছে, যেন তারা সেগুলো নিয়ে কাজ করতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তহবিল সংগ্রহ করতে অথবা প্রয়োজনীয় কাঠামো তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই একটি নিরাপদ কমিউনিটি গড়ে তুলতে জাকারবার্গ ফেসবুকে আরও বেশি বিনিয়োগ করবেন বলে জানিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে পাশের দেশ নেপালের ভূমিকম্পের সময় ফেসবুকের সেফটি চেক টুলস চালুর ব্যাপারটির কথা বলা যায়। ওই সময়ে এই সেফটি চেকের মাধ্যমে বন্ধুবান্ধব বা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল, আমি নিরাপদ আছি।
জাকারবার্গ জানিয়েছেন, ফেসবুক চেষ্টা করছে কমিউনিটির সদস্যদের নাগরিক দায়িত্ব পালনের কাজে যুক্ত করতে। উদাহরণ হিসেবে তিনি সম্প্র্রতি মার্কিন নির্বাচনের কথা উল্লেখ করেছেন। সে নির্বাচনে ফেসবুকের মাধ্যমে ২ লাখের বেশি মানুষ ভোটের জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন। ভোটও দিয়েছেন। আগামী দিনে সব দেশের ভোটাররা যেন ভোটদানে উৎসাহিত হন, সেজন্য টুল উন্নয়নে আরও কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। আর এর মধ্যে গণতান্ত্রিকায়নের প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করেন তিনি।
এছাড়া ফেসবুক শুধু প্রযুক্তি কিংবা মিডিয়াই নয়। পৃথিবীর বিপুল সংখ্যক মানুষের একটি কমিউনিটিও বটে। তাই তাকে মেনে চলতে হয় কিছু স্ট্যান্ডার্ড। কিন্তু এটি যেহেতু পৃথিবীব্যাপী একটি কমিউনিটি, এখানে সবার সাংস্কৃতিক মানদ- এক নয়। এশিয়া কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে যেটা অশ্লীল, ইউরোপ-আমেরিকায় সেটা হয়তো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই জাকারবার্গ জানিয়েছেন, ক্যালফোর্নিয়ায় বসে হয়তো সারাবিশ্বের সাংস্কৃতিক মানদ--এর বিচার করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য ফেসবুক তার ব্যবহারকারীর কাছে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের অশ্লীলতা নির্ধারণের জন্য মাঝেমধ্যে কিছু প্রশ্ন করবে। সেই ভিত্তিতে একটি কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণ করা হবে।
জাকারবার্গ বিল্ডিং গ্লোবাল কমিউনিটি লেখা শেষ করেছেন এই বলে, ফেসবুকে আমাদের কাছে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, একটি সামাজিক কাঠামোর উন্নয়ন করা, যা মানুষকে একটি শক্তিশালী গ্লোবাল কমিউনিটি উপহার দেবে। আর সেই কমিউনিটির মানুষ হিসেবে সবাই সবার জন্য কাজ করবে।
/এইচএএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী