X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিমুখী করছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম

হিটলার এ. হালিম
২৭ এপ্রিল ২০১৮, ২০:০০আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০১৮, ১১:৪৬

মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম শিক্ষাকে সহজ, উপভোগ্য ও আনন্দময় করে তুলতে দেশের বিভিন্ন স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম গড়ে তুলেছে সরকার। প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হলে শিক্ষার্থীদের ‘ইন্টারঅ্যাকশন’ ভালো হতে পারে ভেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। যেখানে সচিত্র পদ্ধতিতে (প্রজেক্টরের মাধ্যমে ভিডিও দেখানো) পড়াশোনোর ফলে শিক্ষার্থীরা আকৃষ্ট হতে শুরু করে। শুরুতে পাইলট আকারে দেশের ৭টি স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম গড়ে তোলা হলেও পরবর্তী সময়ে ৩৮ হাজারের বেশি ক্লাসরুমকে মাল্টিমিডিয়ায় রূপান্তর করা হয়েছে বলে জানা যায়।

এ তো গেলো সরকারি উদ্যোগের কথা। বেসরকারি উদ্যোগে (আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলের উদ্যোগে) দেশে মাল্টিমিডিয়া স্কুল গড়ে তোলা হয়। এর সংখ্যা অন্তত ৩২টি। এসব স্কুলের প্রতিটি ক্লাসরুমই মাল্টিমিডিয়া বলে জানা গেছে। এছাড়া দেশে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে অনলাইন স্কুল। এই সংখ্যা ১০। জাগো ফাউন্ডেশনের গড়ে তোলা এই স্কুলের মূল কার্যালয় ঢাকায়। সেখান থেকেই অনলাইনে একজন দক্ষ শিক্ষক ক্লাস নেন ও তা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার একটি অনলাইনে স্কুলে একই সময়ে (রিয়েল টাইমে) পাঠদান করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন— মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, মাল্টিমিডিয়া স্কুল ও অনলাইন স্কুল দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন সংযোজন; যা শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিমুখী করে তুলছে।

২০১০ সালে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে সাতটি স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১১ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মাধ্যমে ‘আইসিটি ফর এডুকেশন ইন সেকেন্ডারি অ্যান্ড হায়ার সেকেন্ডারি লেভেল’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। চার বছরের ওই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩০৩ কোটি ৬৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এর আওতায় দেশের ২০ হাজার ৫০০ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় একটি করে কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের পরিকল্পনা হয়। এজন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় ল্যাপটপ, ইন্টারনেট মডেম, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও সাউন্ড সিস্টেম।

জানা যায়, সেই সময় মাল্টিমিডিয়া ক্লাস পরিচালনার ডিজিটাল ক্লাসরুম, ডিজিটাল কনটেন্ট, ডিজিটাল ডিভাইস ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদানে দক্ষ শিক্ষকের সংকট তথা অপ্রতুলতার কথা জানানো হয়। প্রয়োজনীয় মেশিন ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে লজিস্টিকস সাপোর্ট দেওয়া গেলেও অভাব দেখা দেয় কনটেন্টের। তখন সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন, শিক্ষকবাতায়ন নামের একটি সাইট কনটেন্টের জন্যে হাব হিসেবে কাজ করবে। দেশের সব ক্যাটাগরির শিক্ষককে একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প তৈরি করে শিক্ষকবাতায়ন। পরবর্তী সময়ে শিক্ষকরা এতে সদস্য হন। এছাড়া সাইটে প্রচুর কনটেন্টও আপলোড করা হয়।

তবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বললেন, ‘সরকার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরি করেছিল। এখন ক্লাসরুম আছে, কিন্তু কনটেন্ট নেই। ডিভাইস আছে, তবে তাতে ব্যবহারের মতো উপাদন নেই। ফলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নিয়ে আশাবাদী হওয়ার মতো তেমন কিছু হয়নি।’

মন্ত্রী জানান, সরকারের আইসিটি বিভাগ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সঙ্গে মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট তৈরি করে। কিন্তু ২০১৫ সালের পরে পাঠ্যসূচি আপডেট করা হয়নি। তিনি মনে করেন, তিন বছর আগের কনটেন্ট দিয়ে এখন শিক্ষার্থীদের পড়ানো সম্ভব নয়।

তবে বেরকারি উদ্যোগ নিয়ে আশাবাদী তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী। তিনি জানান, ১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর গাজীপুরে বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মাল্টিমিডিয়া স্কুল (আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল) উদ্বোধন করেন অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। মোস্তাফা জব্বারের ভাষ্য, ‘পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় এ ধরনের ৩২টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এগুলোর নিজস্ব কনটেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে দুটি স্কুল খুবই ভালো করছে। স্কুল দুটি কলেজ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। অন্য স্কুলগুলোও ভালো করার চেষ্টা করছে।’

ন্যাশনাল হেল্পডেস্ক সূত্রে জানা যায়, এটুআই প্রকল্প দেশের ৩৮ হাজারের বেশি ক্লাসরুমকে মাল্টিমিডিয়ায় রূপান্তর করেছে। প্রায় ৯০ শতাংশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের ৮০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী শিক্ষা সুবিধা নিতে পারছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের মাধ্যমে প্রায় দুই লাখ শিক্ষক কাজ করছেন।

মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের পাঠদানকে সহজ করতে এটুআই একটি ‘অনলাইন মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ তৈরি করেছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমগুলো যেন কোনও ধরনের বাধার সম্মুখীন না হয় এবং নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলতে পারে, সেক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা হিসেবে পালন করবে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। এই সিস্টেমে উঠে আসবে সারাদেশের চিত্র। ফলে কোথাও কোনও সমস্যা হলে তা সমাধানের জন্য দ্রুত উদ্যোগ নিতে পারবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক রমজান আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সারাদেশে খুব বেশি প্রাথমিক স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম যে আছে, তা কিন্তু নয়। যেসব স্কুলে আছে সেগুলোর একটি করে কক্ষ মাল্টিমিডিয়া করা হয়েছে। এজন্য ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, সাউন্ড সিস্টেমসহ বেশকিছু আনুষঙ্গিক উপকরণ দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে বিতরণ করা  হয় ৫০ হাজার ল্যাপটপ। এছাড়া শিগগিরই ওইসব স্কুলের জন্য দেওয়া হবে ৩৭ হাজার ট্যাব। ইতোমধ্যে দরপত্র হয়ে গেছে, ট্যাবগুলো হাতে এলেই আমরা তা পৌঁছে দেবো।’

 

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শরণার্থী আবেদন করা ব্যক্তিকে ইউরোপে ঢোকার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে: ইইউ
শরণার্থী আবেদন করা ব্যক্তিকে ইউরোপে ঢোকার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে: ইইউ
হিন্দুত্ববাদের মন্ত্রে দক্ষিণ ভারত জয় করতে পারবেন মোদি?
হিন্দুত্ববাদের মন্ত্রে দক্ষিণ ভারত জয় করতে পারবেন মোদি?
রাশিয়াকে ঠেকাতে আরও অস্ত্র চাইলেন জেলেনস্কি
রাশিয়াকে ঠেকাতে আরও অস্ত্র চাইলেন জেলেনস্কি
দেশের ব্যাংকগুলো ধ্বংস হচ্ছে, তার উদাহরণ এনআরবিসি: জিএম কাদের
দেশের ব্যাংকগুলো ধ্বংস হচ্ছে, তার উদাহরণ এনআরবিসি: জিএম কাদের
সর্বাধিক পঠিত
আর্জেন্টাইন ক্লাবকে জামাল ভূঁইয়ার ২ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ ফিফার
আর্জেন্টাইন ক্লাবকে জামাল ভূঁইয়ার ২ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ ফিফার
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন
চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় আহত পাইলটের মৃত্যু
চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় আহত পাইলটের মৃত্যু
কিশোরগঞ্জের তিন উপজেলায় বিজয়ী হলেন যারা
কিশোরগঞ্জের তিন উপজেলায় বিজয়ী হলেন যারা
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন