এক ক্যাবলেই তিন সেবা। ভয়েস (ল্যান্ডফোন), ডাটা (ইন্টারনেট) এবং ভিডিও (আইপি টিভি)—এই সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) সীমিত আকারে দিচ্ছে দুটি সেবা। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকলেও আইপি টিভি সেবা এখনও চালু করতে পারেনি বিটিসিএল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সেবাটি চালুর বিষয়ে পরিকল্পনা করেছে সংস্থাটি। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এক নির্দেশনা জারির পরেও দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো (আইএসপি) এই সেবা দিতে পারছে না। যদিও আইপি টিভি সেবাদানের প্রস্তুতি রয়েছে আইএসপিগুলোর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা জারি, তথ্য মন্ত্রণালয়ের আইপি টিভির লাইসেন্স প্রদানের উদ্যোগ ইত্যাদি কারণে এক ধরনের জট লেগেছে এই সেবাদানের ক্ষেত্রে। আইএলডিটিএস পলিসিতে আইএসপিগুলো আইপি টিভি ও আইপি টেলিফোন সেবা দিতে পারবে, এমনটা বলা থাকলেও বাধা রয়েছে। আইএসপিগুলো আইপি টিভি সেবা দিতে না পারায় এক ক্যাবলে তিন সেবাদানের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, বিটিসিএল এ প্রকল্পের নাম দিয়েছে ১৭১ কেএল বা এক লাখ ৭১ হাজার। দুই বছরের মধ্যে সব গ্রাহককে এই সেবার আওতায় আনার কথা থাকলেও এখনও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। ফলে মোট গ্রাহকের বড় একটা অংশ এই সেবার বাইরে রয়ে গেছে। ২ লাখ ৩৯ হাজার গ্রাহক ‘একের ভেতর তিন’ এই সুবিধা নিতে পারবেন বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে সুইচ বোর্ডের উদ্বোধন, সুইচ-বোর্ড ও যন্ত্রপাতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। কিছু কিছু এলাকার মানুষ এই সেবা সীমিত আকারে পাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিটিসিএল-এর একজন পরিচালক বলেন, আমাদের দুটি সেবা ভয়েস ও ইন্টারনেট চালু হয়েছে। আইপি টিভি এখনও চালু হয়নি। তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে সেবাটি চালু করা হবে বলে তিনি জানান। জানা গেছে, প্রকল্পটি জাইকা ও ১৭১ কেএল-এর মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। তিনি জানান, জিপনের (জিপিওএন) সক্ষমতা এক লাখ ২৬ হাজার হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৬৫০টি সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। জানা গেছে, অবকাঠামোগত জটিলতা, ক্যাবল সেবাকেন্দ্রে না পৌঁছানোসহ আরও অনেক কারণে সংযোগ সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কপার ক্যাবলের ব্যবহার সীমিত রেখে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে গ্রাহকের এলাকা পর্যন্ত, কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভবন, এমনকি বাসা পর্যন্তও সংযোগ স্থাপন করা হবে। অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ বেশি পরিবহন হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের সেবা এর মাধ্যমে প্রদান সহজ হবে।
এনজিএন-ভিত্তিক সফট-সুইচের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টেলিফোন ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা যাবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বমানের টেলিযোগাযোগ সেবা, যেমন ফাইবার টু দ্য বিল্ডিং, ফাইবার টু দ্য হোম ও ফাইবার টু দ্য অফিস সেবা দেওয়া সহজ হবে। ফলে গ্রাহকরা একই সঙ্গে ভয়েস, ভিডিও এবং ডাটা সেবা উপভোগ করতে পারবেন।
জানা যায়, এরই মধ্যে সুইচের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়েছে। উত্তরা, গুলশান, শেরেবাংলা নগর, রমনা, মগবাজার, নীলক্ষেত, মিরপুর, বাবুবাজার, চকবাজারসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছুসংখ্যক টেলিফোন চালু হয়েছে।
আইপি টিভি সেবা ভিএএস বা ভ্যাস সেবা হিসেবে গণ্য করা হবে। এসব ভিএএস সেবা পেতে গ্রাহককে আলাদা আলাদা টাকা ব্যয় করতে হবে। তবে কত টাকা প্রয়োজন হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে চুক্তি হলেই ভয়েস, ডাটা এবং ভিডিও সেবার জন্য অর্থ নির্ধারণ বা প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হবে।
জানতে চাইলে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সভাপতি আমিনুল হাকিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এই সেবা (আইপি টিভি ও ভিওডি বা ভিডিও অন ডিমান্ড) দিতে প্রস্তুত, কিন্তু বিটিআরসি একটি নির্দেশনা জারি করে সেবাদান কার্যক্রমে এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। ফলে আমরা সেবা দিতে পারছি না। নির্দেশনা পেলে আমরা এক মাসের ভেতরে সেবা দিতে পারবো।’
আইএসপি অপারেটরগুলো এই সেবা দিতে না পারলেও মোবাইলফোন অপারেটরগুলো এই সেবা দিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক এই সেবা দিচ্ছে। অথচ প্রযুক্তিবিষয়ক সব প্রস্তুতি থাকার পরও আমরা সেবা দিতে পারছি না।’
আমিনুল হাকিম আরও বলেন, ‘আইএলডিটিএস পলিসিতে রয়েছে—আইপি টিভি ও আইপি টেলিফোনিক সেবা আইএসপিগুলো দিতে পারবে। কিন্তু দিতে পারছে না। ফলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর তথা একটা বড় অংশের গ্রাহক এই সেবা পাচ্ছেন না।’ তিনি আরও জানান, তথ্য মন্ত্রণালয় আইপি টিভির লাইসেন্স বা নিবন্ধন নেওয়ার জন্য দরখাস্ত আহ্বান করেছিল। বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে তদন্তও হয়েছে। নিবন্ধন বা লাইসেন্স কবে দেবে, সে বিষয়ে অগ্রগতির কোনও খবর জানা নেই।