X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

এত ইন্টারনেট যায় কোথায়?

হিটলার এ. হালিম
৩০ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:৪২আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:০১

ইন্টারনেট

দেশে বর্তমানে প্রায় ৮৫০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৩৫০ জিবিপিএস। একই বছরের আগস্টে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২১ জিবিপিএসে। এই হারে ব্যান্ডউইথ বাড়তে থাকলে এ বছরের শেষ নাগাদ বা আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে তা এক টেরাবাইটে (১০২৪ জিবিপিএস) পৌঁছাবে।

সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, এত ইন্টারনেট (আসলে ব্যান্ডউইথ) কোথায় যাচ্ছে। কী কাজে ব্যবহার হচ্ছে। আগামীতে ইন্টারনেট ব্যবহারের হালচাল কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।

জানা গেছে, দেশে ব্যবহৃত প্রায় ৮৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের মধ্যে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইএসপি) গ্রাহকরা ব্যবহার করেন ৬২০ জিবিপিএস। আর মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ব্যবহার করে ২০০ জিবিপিএস। অবশিষ্ট ৩০ জিবিপিএস ব্যবহার করেন ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। তবে মোট ব্যবহার হওয়া ব্যান্ডউইথের মধ্যে অর্ধেকের বেশি করপোরেট অফিস বা প্রতিষ্ঠান নয়, বাসা বাড়িতে ব্যবহার হয়।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ২০০৬ সালে সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-ইউ-৪-এ যুক্ত হয়। এটি দিয়ে দেশে আসছে ২৫০ জিবিপিএস’র ব্যান্ডউইথ। আর দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-ইউ-৫ দিয়ে আসছে ৪৫০ জিবিপিএস। যদিও দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতা এক হাজার ৫০০ জিবিপিএস। অন্যদিকে, ছয়টি আইটিসি— সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড, ফাইবার অ্যাট হোম, নভোকম লিমিটেড, ওয়ান এশিয়া, বিডি লিংক কমিউনিকেশন লিমিটেড ও ম্যাংগো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেডের মাধ্যমে ভারত থেকে বর্তমানে দেশে আসছে ১০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ।

ডাটালিডসের তথ্য অনুসারে এশিয়ার মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশ হলো  বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, ২০০০ সালে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল সাকুল্যে এক লাখ। অন্যদিকে, ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় আট কোটিতে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা (৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ৯ কোটি ১১ লাখ ৯৪ হাজার। 

জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে ফোর-জির উদ্বোধন হয়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকে এপর্যন্ত ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ৭০-৮০ ভাগ বেড়েছে। আমি যখন দায়িত্ব নিই, তখন ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ছিল ৫০০-৫৫০ জিবিপিএস (গিগা বাইট পার সেকেন্ড)। এখন তা ৮০০ জিবিপিএস ছাড়িয়ে গেছে। আমার জানা মতে, গত দুই ঈদের সময় দেশে আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ অ্যাপের ব্যবহার বাড়ার কারণে। মানুষ ভয়েস থেকে ডাটার দিকে শিফট করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এতে করে বোঝা যায় মানুষ এখন অ্যাপভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে এবং দিন দিন তা বাড়ছে।’

অন্যদিকে, গুগলের ইন্টারনেট ডাটা রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে ফোরজি চালুর পরে ইউটিউব দেখার প্রবণতা ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। এখন এ দেশের প্রায় তিন কোটি মানুষ ইউটিউব দেখেন, যার বড় একটি অংশই হলো বিনোদন।

গুগলের ইন্টারনেট ডাটা রিপোর্ট ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে মোট ব্যান্ডউইথের ৪৬ ভাগ ব্যবহৃত হয় ইউটিউব দেখায়, ফেসবুক ব্যবহার হয় ১৭ ভাগ। এছাড়া, অ্যাপভিত্তিক যোগাযোগেও (ওটিটি-ওভার দ্য টপ) ব্যান্ডউইথের বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল কমে যাওয়ার পেছনে অ্যাপভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যম দায়ী বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধাররা বলছেন, দেশে যখন ৩৫০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হতো, তখন ওই ব্যান্ডউইথের ২০ শতাংশ চলে যেত পর্নোগ্রাফি দেখায়। আর এখন ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পরিমাণ বাড়লেও মোট ব্যান্ডউইথের ২০ শতাংশ পর্নোগ্রাফি দেখায় ব্যবহার হয় না। সরকার তথা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির কড়াকড়ি এবং কয়েকবার পর্নো সাইট বন্ধ করায় দেখার পরিমাণ কমেছে।

জানতে চাইলে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক বলেন, ‘ভালো রেজ্যুলেশনের মুভি দেখা, ইউটিউবে শিক্ষামূলক ভিডিও দেখা, অনলাইনে গেম খেলা, রান্নার অনুষ্ঠান দেখা, হালে নাটক দেখার পরিমাণ বেশি দেখতে পাই আমরা— বাসাবাড়ির ইন্টারনেট ব্যবহারে। বাসায় ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়ার আগে গেমাররা আমাদের কাছে জানতে চান ম্যাক্সিমাম ব্যান্ডউইথ কত পাওয়া যাবে? সিঙ্গাপুর, ইউরোপের বিভিন্ন অনলাইনের গেমস স্পটের ল্যাটেন্সি কেমন?’

তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে আমাদের টার্গেট ৩০ লাখ নতুন গ্রাহক। আমরা দেখেছি মোবাইলে ফোরজি ইন্টারনেট থাকার পরও বাসাবাড়িতে ওয়াই-ফাই সংযোগ চালুর হার বেড়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, ভারতের বিভিন্ন চ্যানেলের ইউটিউব চ্যানেল, বাংলাদেশের দর্শকদের নাটক দেখার পরিমাণ ইউটিউবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞাপনবিহীন নাটকসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান দেখার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।’

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিয়েবাড়ির খাসির মাংস খেয়ে ১৬ জন হাসপাতালে
বিয়েবাড়ির খাসির মাংস খেয়ে ১৬ জন হাসপাতালে
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি