মোবাইল ইন্টারনেটে থ্রিজি ও ফোরজি কয়েকদিন বন্ধ (স্বল্প সময়ের জন্য চালুও ছিল) থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ফেসবুকনির্ভর উদ্যোক্তারা। ফেসবুকের ওপর নির্ভর করে দেশে গড়ে ওঠা এফ-কমার্স উদ্যোক্তাদের পেজগুলোর ভিউ মোবাইল থেকে বেশি হওয়ায় সেগুলো একেবারে বন্ধের উপক্রম হয়েছে। অন্যদিকে, মোবাইল ইন্টারনেটের রাজস্ব ২২-২৪ ভাগ কমেছে আর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে ১০-২০ ভাগ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি মোবাইল ইন্টারনেটে থ্রিজি ও ফোরজি বন্ধ রাখার ফলে এই সমস্যা হয়েছে। প্রথমবার ২৭ ডিসেম্বর রাতে বিটিআরসি দেশের সব মোবাইল ফোন অপারেটরকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখতে বললেও ২৮ ডিসেম্বর সকালে থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্ক খুলে দেওয়া হয়। পরে ২৯ ডিসেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে বিটিআরসি আবারও থ্রিজি ও ফোরজি বন্ধের নির্দেশ দেয়। এবার নির্দেশ দেওয়া হয় ৩০ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত শুধু টুজি খোলা থাকবে। তবে মধ্যরাতে কমিশন ফের নির্দেশ পাঠিয়ে পুরো মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। এসময় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু ছিল। ৩০ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ রাখার কথা থাকলেও এদিন সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে থ্রিজি ও ফোরজি খুলে দেওয়া হয়। তবে রাত ১০টার দিকে ফের নির্দশনা পাঠিয়ে বন্ধ করা দেওয়া হয় থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট।
থ্রিজি ও ফোরজি নেওয়ার্ক বারবার আসা-যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ফেসবুক কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এফ-কমার্স উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের সংগঠন ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে স্বাভাবিকভাবে ই-কমার্স উদ্যোগগুলোর সমস্যা হয়। ডেলিভারি সিস্টেমেও বড় সমস্যা হয়।’ তিনি মনে করেন, থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখার সময় ফেসবুকনির্ভর বিজনেস পেজগুলো যদি খোলা রাখার ব্যবস্থা রাখা যায়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণটা কম হবে। দেশে ৫০ হাজারের বেশি এফ-কমার্স পেজ থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় কোনও ইস্যুতে ইন্টারনেট বন্ধ করা হলে অবশ্যই আমরা সেই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাবো। পাশাপাশি এই বিষয়টির প্রতিও সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানাই।’ তিনি জানান, থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট বন্ধ রাখার পাশাপাশি ডিজিটাল পেমেন্ট সেবাগুলোও বন্ধ রাখার ফলে পেজগুলোর উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ফেসবুকনির্ভর উদ্যোগ ইংরেজি শেখার প্ল্যাটফর্ম সার্চ ইংলিশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী রাজিব আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তাদের পেজে প্রতিদিন সয়ংক্রিয় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৩ লাখ হলেও বর্তমানে তা ২ লাখে নেমে এসেছে। থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় এই সমস্যা হয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের পেজে অংশগ্রহণকারীরা যুক্ত হয় বলে সংখ্যাটা বেশি কমেনি বলেও তিনি জানান।
এদিকে, মোবাইলফোন অপারেটরগুলো সূত্রে জানা গেছে, এই কয়েকদিনে ইন্টারনেট খাতের রাজস্ব কমেছে। এভাবে চলতে থাকলে মোট রাজস্ব আয়ে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তারা মনে করছেন। নিজের নাম ও পরিচয় উদ্ধৃত না করার শর্তে এক মোবাইল ফোন অপারেটরের শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এই কয়েকদিনে তাদের ইন্টারনেটের রাজস্ব ২২-২৪ ভাগ কমে গেছে।
জানা গেছে, অফিসিয়াল কাজ তেমন না থাকায় (বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও অফিস বন্ধ থাকায়) ব্রডব্যান্ড (উচ্চগতি) ইন্টারনেটের ব্যবহার তেমন একটা বাড়েনি। তবে বাসা-বাড়িতে এই সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। জানতে চাইলে দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক বলেন, ‘এই কয়েকদিনে অফিস বন্ধ থাকায় বাণিজ্যিক ব্যবহার কমলেও বাসা-বাড়িতে ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে।’ বৃদ্ধির পরিমাণ ১০-২০ ভাগ বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, ‘ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবহারকারী তো সীমিত। এজন্য হঠাৎ করে খুব বেশি বাড়ার সুযোগ কম।’
আরও জানা যায়, বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা (মূলত হবে সংযোগ) ৯ কোটি ১৮ লাখ ১৮ হাজার। এর বেশির ভাগই মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ। আর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ।