ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার এখন তুঙ্গে। ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট ইত্যাদির পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও অন্যান্য মাধ্যমে প্রচার চলছে। তবে এবারের নির্বাচনি পোস্টারে একটু ব্যতিক্রমও দেখা গেলো। উত্তরের দুই মেয়র পদপ্রার্থীর পোস্টারে হ্যাশট্যাগ (#), ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেখা গেছে। এক প্রার্থীর পোস্টারে কিউআর কোডও (কুইক রেসপন্স) পাওয়া গেছে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বললেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে এ ধরনের আয়োজনে অটোমেটেড প্রযুক্তি ব্যবহারই তো স্বাভাবিক চিত্র। প্রচারযন্ত্র হিসেবে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার বেশি ভোটারের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে। তবে এই মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যাতে কারও বিরুদ্ধে অপপ্রচার, কুৎসা রটাতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখাও জরুরি।
রাজধানীর অনেক এলাকা ঘুরে দেখা গেলো পেশাদার ভিডিওগ্রাফার দিয়ে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগের ভিডিও ধারণের চিত্র। ফেসবুক ও ইউটিউবে পরবর্তী সময়ে সেসব ভিডিওচিত্রই আপ করা হচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের পোস্টারে পাওয়া গেলো হ্যাশট্যাগের (#AtiqForDhaka) ব্যবহার। রয়েছে তার ওয়েবসাইটও (www.atiqfordhaka.com )। এছাড়া ফেসবুক পেজের (/AtiqForDhaka) ঠিকানাও দেওয়া আছে।
আতিকুল ইসলামের নির্বাচনি প্রচারের সমন্বয়কারী জয়দেব নন্দী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে ব্যাপক সুফল পাওয়া যাচ্ছে। কখনও কখনও মাঠের প্রচারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সাড়া পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনের প্রচারে। তরুণদের আকৃষ্ট করা সম্ভব হয়েছে। কোনটা গুজব, কোনটা মিথ্যা তথ্য, তারা তা যাচাই করতে পারছেন। তাদের কোনোভাবেই ভুল বোঝানো যাচ্ছে না। প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটা মেইল পাঠালে সবাইকে সব সময় কানেক্ট করা যায় না। এর পরিবর্তে হোয়াটসঅ্যাপে আমরা দ্রুত যোগাযোগ করতে পারছি। ফেসবুকে যেকোনও তথ্য শেয়ার করা যাচ্ছে। প্রার্থীর পরের দিনের কর্মসূচিও জানানো যাচ্ছে। আমাদের মেয়র প্রার্থী আগামীতে কী করবেন, কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তার ভিডিও করে আমরা প্রকাশ করতে পারছি। ইশতেহার জানাতে পারছি। অল্প সময়ে অনেকের কাছে পৌঁছতে পারছি, তথ্যপ্রযুক্তি না থাকলে যা সম্ভব হতো না।’
এবার চমক হিসেবে পাওয়া গেলো কিউআর কোডের ব্যবহার। উত্তরের মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পোস্টারে কিউআর কোড দেখা গেছে। তবে কিউআর কোড স্ক্যান করে কিছু পাওয়া যানি। স্ক্যান রিপোর্ট জানায়, এই কোডটির স্ক্যান লিমিট শেষ হয়েছে। সাপোর্ট সেন্টারে যোগাযোগ করে লিমিট বাড়াতে বলা হয়েছে। এছাড়া তাবিথ আউয়ালের পোস্টারে রয়েছে ফেসবুক পেজের লিংক (/TabithAwal.ForMayor/)। সেখানে রয়েছে তার নির্বাচনি ইশতেহারসহ অনেক কিছু। আছে তার ওয়েবসাইট (www.tabithawalformayor), ও দলীয় ওয়েবসাইটের ঠিকানা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের পোস্টারে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের কোনও কিছু উল্লেখ না থাকলেও ফেসবুকে রয়েছে তার সরব উপস্থিতি। রয়েছে ইউটিউব চ্যানেলও। ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে (/BarristerSheikhFazleNoorTaposh.official/) তার প্রতিদিনের কর্মসূচি প্রকাশ করা হয়। রয়েছে গণসংযোগের ভিডিও।
আরেক মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনেরও (Ishraque.ForMayor) রয়েছে ফেসবুকে সরব উপস্থিতি। তিনি নিজের আইডি ও ভেরিফায়েড পেজে প্রতিদিনের কর্মসূচি প্রকাশ করছেন। তাতে গণসংযোগের ভিডিও এবং স্থিরচিত্র আপ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মাঝে ফেসববুক লাইভও করছেন তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও ফাইবার অ্যাট হোমের চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘এখন অটোমেশনের সময়। সবাই চায় প্রযুক্তি ব্যবহার করতে। সেই কারণে নির্বাচনের প্রার্থীরা প্রচারের বিকল্প মাধ্যম হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তিকে বেছে নিয়েছেন। এখনকার তরুণরা টেকসেবী। এজন্য প্রার্থীরা জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যম বেছে নিয়েছেন প্রচারের জন্য।’
তিনি মনে করেন, নির্বাচনের ফলের ওপর প্রযুক্তির ব্যবহার কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটা সময়ই বলে দেবে।
সাবির আরও বলেন, এরই মধ্যে যে তরুণদের মধ্যে এটা বেশ সাড়া ফেলেছে, তা বোঝা যায়। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, এবারের ভোটারদের মধ্যে তরুণ ভোটারের সংখ্যা অনেক। তাদের আকৃষ্ট করতে প্রচলিত মাধ্যমে যে পুরোপুরি করা যাবে না, তা প্রার্থীরা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন। প্রার্থীরা পোস্টার ও মাইকের পাশাপাশি এবার ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন। এবারই প্রথম নির্বাচনে হ্যাশট্যাগ, কিউআর কোডের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘ধরা যাক কোনও প্রার্থী একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করলেন অনলাইনে। এটা খুঁজে বের করা বেশ কষ্টের। কিউআর কোড থাকলে চট করে তা স্ক্যান করে দেখা যায়। এটা একটা বড় সুবিধা। তবে কেউ যাতে এই মাধ্যমকে অপব্যবহার না করেন, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।’