X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

২০১৭ সালের মধ্যে দেশেই মোবাইল তৈরি করবে সিম্ফনি: রেজওয়ানুল হক

হিটলার এ. হালিম
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৯:১৬আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ২০:০৭

রেজওয়ানুল হক (১)

 

সিম্ফনি মোবাইলের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ও বাংলাদেশ মোবাইলফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) সহ-সভাপতি রেজওয়ানুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে জানালেন, ২০১৭ সালের মধ্যে দেশেই নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে মোবাইলফোন সেট তৈরির পরিকল্পনা করছে সিম্ফনি।     

 

বাংলা ট্রিবিউন: আইএমইআই ডাটাবেজ সম্পর্কে জানতে চাই।

রেজওয়ানুল হক: ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) হলো মোবাইলফোনের অপরিহার্য একটি উপাদান। এটি দিয়েই গ্রাহকের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। বিষয়টি একটু পরিস্কার করে বলি, ১০ লাখ মোবাইলফোন সেট যদি আমদানি করতে হয় তাহলে ১০ লাখ আইএমইআই  নম্বর টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিতে জমা দিতে হয়। কখনও তা একসেল শিটে, কখনওবা ফাইলে করে। এই রেকর্ড কিন্তু বিটিআরসি কখনও সেন্ট্রালাইজড করছিল না। বিএমপিআইএ (বাংলাদেশ মোবাইলফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন)                 একটা সার্ভার করে দেবে। যে সার্ভারের মাধ্যমে বিটিআরসিকে আমরা যে অ্যাপ্লিকেশনটা করি সেই এনওসিটা অটোমেশন হবে। এই এনওসি একটা সফটওয়্যারের মাধ্যমে আমরা বিটিআরসির কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে নেব। এনওসি অটোমেশনের অর্থ হলো, আপনি ১০ লাখ আইএমইআই  নিচ্ছেন তার তথ্য কিন্তু ডাটাবেজে থেকে যাচ্ছে। ফলে এই ১০ লাখ আইএমইআই  -এর একটা সেন্ট্রাল ডাটাবেজ হচ্ছে যা বিটিআরসি-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ একসেস (ব্যবহার বা ঢুকতে পারাটা) করতে পারবে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যদি আইএমইআই  দেখতে চায় বা বুঝতে চায় যে, এগুলো কোথা থেকে আসে, কোথায় ব্যবহার হচ্ছে সব দেখা সম্ভব।

একজন মোবাইলফোন ব্যবহারকারীও চাইলে দেখতে পাবেন তার আইএমইআই  নম্বরটি ভ্যালিড কিনা। এসব নিয়েই আমরা একটা সেন্ট্রাল ডাটাবেজ তৈরি করছি। আগে আমরা এটিই করতে চাই (সব আইএমইআই  নম্বরের একটা ডাটাবেজ।) পরে আমরা আইএমইআই  রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় আসব ।

প্রতি বছর যে সংখ্যক মোবাইলফোন সেট বৈধ পথে দেশে আমদানি হচ্ছে সেগুলো সেন্ট্রাল আইএমইআই  ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত হবে। যে সেটগুলো অবৈধ পথে দেশে আসে সেগুলোর আইএমইআই  নম্বর ওই ডাটাবেজে না থাকায় ওই সেটগুলো চালু করা যাবে না। ফলে গ্রে পথে দেশে আসা সেট আর চালু হবে না। এমনকি নকল আইএমইআই  নম্বরের ফোনসেট দেশে এনেও তা আর চালু করা যাবে না। ফোনসেট চালু করতে হলে আগে ওই ডাটাবেজের সংরক্ষিত তথ্যের সঙ্গে মিলতে হবে এবং আইএমইআই নম্বর হতে হবে আসল

বাংলা ট্রিবিউন: অবৈধ পথে মোবাইলফোন আমদানি বা মোবাইল চুরি বোধে আইএমইআই  ডাটাবেজ কতটা সহযোগিতা করবে?

রেজওয়ানুল হক: শতভাগ সহযোগিতা করবে। প্রতি বছর যে সংখ্যক মোবাইলফোন সেট বৈধ পথে দেশে আমদানি হচ্ছে সেগুলো সেন্ট্রাল আইএমইআই  ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত হবে। যে সেটগুলো অবৈধ পথে দেশে আসে সেগুলোর আইএমইআই  নম্বর ওই ডাটাবেজে না থাকায় ওই সেটগুলো চালু করা যাবে না। ফলে গ্রে পথে দেশে আসা সেট আর চালু হবে না। এমনকি নকল আইএমইআই  নম্বরের ফোনসেট দেশে এনেও তা আর চালু করা যাবে না। ফোনসেট চালু করতে হলে আগে ওই ডাটাবেজের সংরক্ষিত তথ্যের সঙ্গে মিলতে হবে এবং আইএমইআই নম্বর হতে হবে আসল।

বাংলা ট্রিবিউন: গত ৬ ফেব্রুয়ারি এই ডাটাবেজের উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল।

তারিখটা একটু পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এন্ড থেকে আমরা রেডি কিন্তু বিটিআরসি কিছুটা সময় চেয়েছে। আশা করছি, মার্চের প্রথম সপ্তাহে আমরা এই উদ্বোধন করতে পারব।     

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশে প্রতিবছর মোট কত ফোনসেট আমদানি হয়?

রেজওয়ানুল হক: বর্তমানে স্মার্টফোনের চাহিদাই বেশি। একটা পরিসংখ্যান দিই। ২০১৫ সালে দেশে মোট ২ কোটি ৬০ লাখ মোবাইলফোন সেট আমদানি হয়েছে। এর ২৩ ভাগ অর্থাৎ ৬০ লাখ হলো স্মার্টফোন। আমাদের ধারণা ২০১৬ সালে মোবাইলফোন আমদানির সংখ্যা হবে ৩ কোটি।

আরেকটু পিছনে ফিরে যাই, ২০১৩ সালে ২৫ লাখ, ২০১৪ সালে ৪০ লাখ, ২০১৫ সালে ৬০ লাখ স্মার্টফোন দেশে আমদানি হয়েছে। ২০১৬ সালে তা হতে পারে ৯০ লাখ অর্থাৎ মোট ফোনের ৩০ শতাংশ। আমরা হিসাব করে দেখেছি, প্রতি বছর স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৫০ শতাংশ। আমাদের ধারণা, দেশে বর্তমানে সক্রিয় মোবাইলফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ কোটি (অনেকের একাধিক সিম থাকায় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি)। এর মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ (দেড় কোটির কিছু বেশি) স্মার্টফোন ব্যবহার করে।

রেজওয়ানুল হক (২)

বাংলা ট্রিবিউন: দেশে কোন ধরনের ফোনের চাহিদা বেশি?

রেজওয়ানুল হক: যত ফোন দেশে আসে এরমধ্যে ৪ থেকে ৮ হাজার টাকা দামের মোবাইলফোনের (স্মার্টফোন) চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আমরা এই দামটাকে ‘মিড এন্ড’ বলি।

বাংলা ট্রিবিউন: ফিচার বা বারফোন দেশের মানুষ আর কতদিন ব্যবহার করতে পারবে বলে আপনার মনে হয়?

ফিচার ফোনের চাহিদা অন্তত আরও ছয় বছর থাকবে। তবে বাংলাদেশে এই ফোনের ব্যবহার শেষ হতে ৭-৮ বছর লেগে যেতে পারে। এরপরে আর ফিচারফোন দেখা যাবে না। কারণ, উৎপাদকরা ৫-৬ বছরের মধ্যে ফিচারফোন বাদ দিয়ে স্মার্টফোন উৎপাদনে চলে যাবে

রেজওয়ানুল হক: এ ফোনের চাহিদা অন্তত আরও ছয় বছর থাকবে। তবে বাংলাদেশে এই ফোনের ব্যবহার শেষ হতে ৭-৮ বছর লেগে যেতে পারে। এরপরে আর ফিচারফোন দেখা যাবে না। কারণ, উৎপাদকরা ৫-৬ বছরের মধ্যে ফিচারফোন বাদ দিয়ে স্মার্টফোন উৎপাদনে চলে যাবে।

বাংলা ট্রিবিউন: গ্রে বা চোরাই ফোনের মার্কেট সাইজ সম্পর্কে যদি ধারণা দেন।

রেজওয়ানুল হক: মোবাইলফোন মার্কেটের ১৫ শতাংশ গ্রে মার্কেটের দখলে। আমাদের জানা মতে, তিনভাবে দেশের গ্রে মার্কেটে মোবাইল সেট ঢুকছে।

এক. মোবাইল সেটগুলো খুলে যন্ত্রাংশ আকারে এনে দেশে সংযোজন করা হচ্ছে। এগুলোকে রিফারবিশ সেটও বলা হয়।

দুই. লাগেজে ভরে আনা হয়।

তিন. বেশি দামের ফোনসেট কম দাম দেখিয়ে আনা হয়। ধরা যাক, একটি ফোন সেটের দাম ১০ ডলার। কিন্তু ঘোষণাপত্রে দেখানো হলো ৫ বা ৬ ডলার। কারণ দামের ওপর শুল্ক ধরা হয় বলে দাম কম দেখালে শুল্কের পরিমাণ কমে আসে। এভাবেও অনেকে সুযোগটা নিয়ে থাকে।

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশে কতগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা মোবাইলফোন আমদানি করে?

রেজওয়ানুল হক: নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিতে মোবাইলফোন আমদানিকারক হিসেবে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা শতাধিক। তবে এরমধ্যে ৫২-৬০টি প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে মোবাইলফোন আমদানি করে। অবশিষ্টগুলো অনিয়মিতভাবে কাজটি করে থাকে। তবে নিয়মিত আমদানির মধ্যে ১০-১২টি ব্র্যান্ড ভালো করছে। এগুলোই দেশি ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।

আমাদের বিএমআই পিএ –তে সদস্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৫টি।     

বাংলা ট্রিবিউন: সিম্ফনির মার্কেট শেয়ার কত?

রেজওয়ানুল হক: সার্বিকভাবে বললে বলা যায়, মোট মার্কেটের ৪০ শতাংশ। আর পৃথকভাবে বললে, স্মার্টফোনে ৫০ শতাংশ আর ফিচারফোন বা বারফোনে ৩৮ শতাংশ। দিনদিন সিম্ফনির বাজার বড় হচ্ছে। প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক।

বাংলা ট্রিবিউন: সিম্ফনি কবে নাগাদ দেশে মোবাইলফোন উৎপাদনে যাবে?

রেজওয়ানুল হক (৩)

রেজওয়ানুল হক: ২০১৭ সালের মধ্যে দেশের মাটিতে মোবাইলফোন উৎপাদনে যেতে পারব বলে আশা করছি। তবে তার আগে কিছু বিষয় নিষ্পত্তি হতে হবে। মোবাইলফোন সেটের আমদানি শুল্ক বর্তমানে ২৫ শতাংশের মতো। অন্যদিকে রম্যাটেরিয়ালসের গড় (ব্যাটারি, চার্জার, ক্যামেরার আলাদা আলাদা শুল্ক) আমদানি শুল্ক ৩৫ শতাংশের মতো। সরকার এসব বিষয়ে আন্তরিক। আশা করি বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

২০১৭ সালের মধ্যে দেশের মাটিতে মোবাইলফোন উৎপাদনে যেতে পারব বলে আশা করছি

বাংলা ট্রিবিউন: একটি মোবাইলফোন কতদিন ব্যবহার করা উচিত?

রেজওয়ানুল হক: অন্তত ৩ বছর হওয়া উচিত। তবে আমরাতো বলতেই পারি এক বছর হলে ভালো। কিন্তু দেশের সামগ্রিক বিষয়গুলোও দেখতে হবে। সে কারণে সব মিলিয়ে ৩ বছর হলো একটা আদর্শ সময়।  

বাংলা ট্রিবিউন: একটি মোবাইলফোন কিভাবে ব্যবহারকারীর জীবন বদলে দিতে পারে?

রেজওয়ানুল হক: হালে মোবাইলফোন মানুষের আয়ের উৎস হওয়াতে অর্থনীতিও বদলাতে শুরু করেছে। জিডিপিতে অবদান রাখতে শুরু করেছে। আগামীদিনে অর্থনীতির সম্পূর্ণ ইকোসিস্টেমকে পারচালনা করবে মোবাইলফোন। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এগোচ্ছি। চাইলে দেশের সবাইকে কম্পিউটার, ল্যাপটপ দেওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু সবাইকে অন্তত একটা করে স্মার্টফোন দেওয়া সম্ভব। ওই স্মার্টফোন দিয়ে তিনি তার শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সেবা, সরকারি সেবা গ্রহণ এবং পাসপোর্ট, ভর্তি ফর্ম পূরণ ইত্যাদি করে বহুমুখী সেবা উপভোগ করতে পারবেন।

/এইচএএইচ/      

সম্পর্কিত
বাংলা ট্রিবিউনকে ওয়াসিকা আয়শা খান‘নারীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন, এর নেপথ্যে শেখ হাসিনা’
‘মেয়েদের নিয়ে কেউই ঝুঁকি নিতে চায় না’
নারী দিবস উপলক্ষে একান্ত সাক্ষাৎকারে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী১৫ বছরে নারী শক্তির জাগরণ হয়েছে
সর্বশেষ খবর
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!