X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারনেটের দাম কমানোর উদ্যোগ আটকে আছে ‘কিন্তু’ ‘যদি’ এবং ‘তবে’র মধ্যে

হিটলার এ. হালিম
০৯ মার্চ ২০১৬, ১৪:২০আপডেট : ০৯ মার্চ ২০১৬, ১৫:২২

ইন্টারনেটের গতি বাড়লেও দাম কমছে না অনেক দিন ধরেই সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে ইন্টারনেটের দাম কমানো হবে বলা হলেও তার বাস্তবায়ন হতে দেখা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, মন্ত্রীদের ঘোষণার পরও ইন্টারনেটের দাম কমেনি। বরং জানা গেছে, ইন্টারনেটের দাম কমানোর উদ্যোগ বর্তমানে আটকে আছে ‘কিন্তু’ ‘যদি’ এবং ‘তবে’–র মধ্যে। এদিকে, প্রযুক্তিপ্রেমীরা দিন গুনছেন, কবে ইন্টারনেটের দাম কমবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের অপেক্ষা, ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন। অথচ কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না বলে মনে করছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইন্টারনেটের দাম কমাতে গত বছর সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ায় সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি, মোবাইলফোন অপারেটর ও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বা আইএসপিগুলো এক হচ্ছে। যদিও ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য এর আগে একাধিকবার ব্যান্ডউইথের দাম কমানো হয়েছে। কিন্তু প্রত্যাশানুযায়ী ইন্টারনেটের দাম কমেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেবল ব্যান্ডউইথের নয়, দাম কমাতে হবে ইন্টারনেটের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বিভিন্ন উপাদানেরও। সংশ্লিষ্ট উপাদানগুলোর দাম আনুপাতিক হারে কমানো হলেই কেবল গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমানো সম্ভব হবে। যদি ব্যান্ডউইথের দাম একেবারে ‘জিরো’ করে ফেলা হয় তাহলেও ইন্টারনেটের দাম কমবে না।
এদিকে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য কমিয়ে সাধারণ জনগণের নাগালের ভেতরে নিয়ে আসা এখন আমার অন্যতম বৃহৎ লক্ষ্য। আশা করি, অতি শিগগিরই আমরা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে আনার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারব।

গত বছর অনুষ্ঠিত ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ইন্টারনেটের দাম সহনীয় পর্যায়’ আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এক বছর পার হয়ে গেলেও অগ্রগতি খুবই সামান্য।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গত বছর একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘ইন্টারনেটের দাম সরকার বেঁধে দেবে।’

কিন্তু এখনও দাম বাঁধা হয়নি। দেশে মোবাইলফোনের ভয়েস কলের উচ্চসীমা ও নিম্নসীমা বেঁধে দেওয়া হলেও ইন্টারনেটের দাম কখনও বিটিআরসি বেঁধে দেয়নি। বিষয়টি সামনে উদাহরণ হিসেবে রেখে পলক বলেন, ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দিলে গ্রাহকরা কম দামে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব বলেন, এটা চূড়ান্ত হলে আইএসপিগুলোকে কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে হবে। মানসম্মত সেবাও দিতে হবে। আপনি (আইএসপি) গ্রাহককে কী কী সেবা (ইন্টারনেট সেবা) দেবেন, তা আগেই স্পষ্ট করতে বলতে হবে। ভলিউম ও গতির বিষয়েও উল্লেখ থাকতে হবে। তবে, কোনওভাবেই ‘কোয়ালিটি অ্যাডজাস্ট’ করা যাবে না। তিনি উল্লেখ করেন, আগামী দিনে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি বড় একটি ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। ভবিষ্যতে সাইবার সিকিউরিটি ইস্যু কিভাবে থাকবে, ‘আপার অ্যান্ড’ এবং ‘লোয়ার অ্যান্ড’ এসব বিষয় থাকতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইন্টারনেটের মূল্য বেঁধে দেওয়া না হলেও ‘লোয়ার স্ল্যাব’ (নিম্ন সীমা) বেঁধে দেওয়া হবে। এটা অনুসরণ করা হলে গ্রাহক ভালোমানের ইন্টারনেট সেবা পাবেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটাই কস্ট মডেলিং। কস্ট মডেলিং করা হলে কিছু বিষয়ের ওপর দাম নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। ফলে গ্রাহকরা সেই সুবিধা পাবেন।

জানা যায়, কস্ট মডেলিং করার আগে গাইডলাইন তৈরি করা হচ্ছে। যদিও গাইডলাইন তৈরির আগে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবির কাছ থেকে প্রস্তাবনা আহ্বান করা হয়েছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনটি লিখিত প্রস্তাবনাও দিয়েছিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে। ইন্টারনেটের দাম কমানোর বিষয়টিও প্রস্তাবনায় ছিল। এর ফলে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে ইন্টারনেটের দাম কমানোর বিষয়টি সামনে আসে।

ওই প্রস্তাবনার বিষয়ে আইএসপিএবির সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, দাম কমানোর কিছু হয়নি। তবে কস্ট মডেলিংয়ের বিষয়ে আলাপ হয়েছে। সরকার একজন পরামর্শক নিয়োগ করে কস্ট মডেলিং করিয়ে নিলেই পারে। ফলে দাম নির্দিষ্ট করা থাকলে এবং সমন্বয় সাধনের ফলে ইন্টারনেটের দাম কমতে বাধ্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যান্ডউইথ পরিবহনে কতগুলো বিশেষ পক্ষ জড়িত থাকে। এর মধ্যে রয়েছে, ইন্টারনেট ট্রানজিট (আইপি ক্লাউড), বিদেশি ডাটা সেন্টারের ভাড়া, ল্যান্ডিং স্টেশন ভাড়া, কেন্দ্রীয় সার্ভারে পরিবহন খরচ, গেটওয়ে ভাড়া, আইএসপি প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয়, এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানের আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক ভাড়া, ইন্টারনেট যন্ত্রাংশের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক, বিটিআরসির রাজস্ব ভাগাভাগি ইত্যাদি। সময় এসেছে, আনুপাতিক হারে এ সব বিষয়ের খরচ কমানোর। তাহলেই যদি ইন্টারনেটের দাম কমে।

এবার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে, ইন্টারনেটের দাম কমাতে কী কী করণীয় রয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলছে, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছ থেকে বিশেষ করে আইএসপিগুলোর সংগঠন আইএসপিএ-বির কাছ থেকে প্রস্তাবনা চাওয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, সংগঠন জানাবে কী কী ব্যবস্থা নিলে ইন্টারনেটের দাম গ্রাহক পর্যায়ে কমবে।

এদিকে, বিটিআরসি ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণে অনেক দিন ধরে কাজ করছে। ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন পর্যায়ে দাম বেঁধে দিতে ‘কস্ট মডেলিং'-এর পথে অগ্রসর হয়েছে সংস্থাটি। ইন্টারনেটের দাম বেঁধে দেওয়ার ব্যাপারটি ঝুলে আছে 'একজন সিনিয়র পরামর্শক নিয়োগ' না হওয়ায়। ফলে যুগোপযোগী 'টেলিকম ইকোনমিকস অ্যান্ড কস্ট মডেলিং' সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিটিআরসি ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর একজন সিনিয়র পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠায়। ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে একটি তাগাদাপত্রও পাঠায়। অন্যদিকে, ১১ মার্চ বিটিআরসি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ প্রস্তাবিত পরামর্শকের বেতন-ভাতার পরিমাণ, অর্থপ্রদানের খাত, অনুমোদিত বাজেটে সংশ্লিষ্ট খাতে অর্থের সংস্থান আছে কি না—ইত্যাদি তথ্য জানতে চেয়ে ‌‌‌চিঠি দিলে কমিশনে ১৯ মার্চ তার উত্তর পাঠায়। এখন পর্যন্ত কোনও অনুমোদন না আসায় বিটিআরসি নিয়োগের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না।

বিটিআরসি জানাচ্ছে, গত ৭ বছরের ব্যান্ডউইথের দাম কমেছে ৯০ শতাংশ। সংস্থাটির দাবি গত এক বছরে মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম কমেছে ৩০ শতাংশেরও বেশি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত! ব্যান্ডউইথের ৯০ শতাংশ দাম কমানোর বিপরীতে ইন্টারনেটের দাম কমেছে মাত্র ৩০ শতাংশ। ব্যান্ডউইথের যে দাম কমানো হয়েছে তা ইন্টারনেটে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য।

/এমএনএইচ/আপ-এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
রানা প্লাজায় নিহতদের ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ
রানা প্লাজায় নিহতদের ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৫
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৫
জেলা আ.লীগ সম্পাদকের প্রতিদ্বন্দ্বী সভাপতির ছেলে, আছেন ছাত্রলীগ সম্পাদকও
উপজেলা নির্বাচনজেলা আ.লীগ সম্পাদকের প্রতিদ্বন্দ্বী সভাপতির ছেলে, আছেন ছাত্রলীগ সম্পাদকও
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…