X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক

‘কোনওভাবেই আঙুলের ছাপ অপরাধীদের হাতে যাওয়া সম্ভব নয়, সুযোগও নেই’

হিটলার এ. হালিম
১২ মার্চ ২০১৬, ১১:৫১আপডেট : ১২ মার্চ ২০১৬, ১১:৫১

আঙুলের ছাপ

গুজব রটেছে- বিদেশি বেনিয়াদের হাতে আঙুলের ছাপ তুলে দিতেই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের একটি কৌশলী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ ও যাচাই করা হচ্ছে এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ডাটাবেজ থেকে তা কোনওভাবেই কোনও বেনিয়াগোষ্ঠী বা অপরাধীদের হাতে যাওয়া অসম্ভব, এমনকি কোনও সুযোগও রাখা হয়নি।

বায়োমেট্রিক পদ্ধতির বিষয় বিতর্ক তৈরি হওয়ায় গত রবিবার ডাক টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তার দফতরে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে বিশষজ্ঞরা এই বিষয়ে মত দেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কমিশনার জহুরুল হক, মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস) ব্রি. জে. এমদাদ উল বারী, নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতান জামান মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিন, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ডিএনএ ল্যাব ও আইটি ফরেনসিক ল্যাব প্রকেল্পর প্রধান) শেখ মো. রেজাউল হায়দার, সিআইডির পুলিশ সুপার (আইটি ফরেনসিক) আলীমুজ্জামান, মোবাইলফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবিরসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

আঙুলের ছাপের নিরাপত্তা বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতান জামান মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিন বলেন, আমাদের যে সিস্টেমটি করা আছে তা শুধু আঙুলের ছাপ ভেরিফাই করার জন্য। এটা সরাসরি সার্ভারে নয়, সা্র্ভারের বাইরে একটা অ্যাপ্লিকেশন ইন্টারফেস দিয়ে কল করা হয়। শুধু ভেরিফাই করে রিপোর্টটা যায়। এটা অন্যের হাতে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই, সুযোগও নেই। কারণ আমাদের কমপ্লায়েন্স ইস্যু আছে, আইনের ইস্যু আছে। আমরা সিস্টেমটা যেভাবে ডেভেলপ করেছি, তাতে করে কেউ চাইলেও এটা নিতে পারবে না। অহেতুক কথা ছড়ানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এটা করাই হয়েছে নাগরিকদের সুবিধার জন্য, ভেরিফাই করার জন্য। সারা পৃথিবীতেই এটা হচ্ছে।

তিনি উল্লেখ করেন, এই পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের জন্য আমরা কাউকে কোনও পিনকোড (পাসওয়ার্ড) দিচ্ছি না। কারণ পিনকোড চুরি হতে পারে। যে কারণে পিনকোড হিসেবে আমরা আঙুলের ছাপটাই নিচ্ছি। এটা আদান-প্রদানের কোনও সুযোগ নেই। আইনেও নেই, সিস্টেমেও নেই।

আঙুলের যে ছাপ দেওয়া হচ্ছে তা মোবাইলফোন অপারেটররা তাদের ডিভাইসে সংরক্ষণ করে কিনা, সুযোগ আছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্নও ওঠে বৈঠকে। এর জবাব তারানা হালিম নিজেই দেন। তিনি বলেন, আঙুলের ছাপ হলো একটা বাইনারি সংখ্যা বা ডিজিটাল কোড যা ফিজিক্যালি ব্যবহার করা সম্ভব নয়। ফিজিক্যালি এটা প্ল্যান্টও করাও সম্ভব নয়। কোথাও ক্রাইম সিন হলে সেখান থেকে ফিজিক্যালি ফিঙ্গার প্রিন্ট (আঙুলের ছাপ) সংগ্রহ করা হয়। সেটা ডিজিটালি বা বাইনারি নয়।

এ ব্যাপারে টিআইএম নূরুল কবির বলেন, এনআইডি ডাটাবেজ ব্যবহারের জন্য প্রতিটা মোবাইলফোন অপারেটরের সঙ্গে পৃথক পৃথক চুক্তি হয়েছে। এনআইডির ডাটাবেজ ব্যবহারের জন্য একটি এপিআই কনফিগার করে দেওয়া হয়েছে। একজন গ্রাহককে সিম নিবন্ধনের জন্য এনআইডির কপি ও ছবি নিয়ে সেন্টারে বা এজেন্টের কাছে যেতে হবে। সেখানে এনআইডি নম্বর এবং জন্ম তারিখ যখন সিস্টেমে দেওয়া হবে তখন সেখান থেকে একটি রেসপন্স আসবে যে, এটা তাদের ডাটাবেজে আছে। তখন ডিভাইস দিয়ে আঙুলে ছাপ সংগ্রহ করে অনলাইনে ভেরিফাই করা হবে, যে আঙুলের ছাপ আগে থেকেই এনআইডি ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা আছে। এর বাইরে আর কিছু হচ্ছে না।

তখন সিআইডির শেখ মো. রেজাউল হায়দার বলেন, এজেন্টের কাছে গিয়ে যেটা দেওয়া হচ্ছে সেটা স্টোর হচ্ছে কিনা? সেটা আপনাদের (মোবাইলফোন অপারেটর) সার্ভারে স্টোর করা হচ্ছে কিনা। হলে কিন্তু আমরা ডাউট (সন্দেহ) করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এনআইডি ডাটাবেজ থেকে ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে কিছু করা শুধু সিনেমাতেই সম্ভব। বাস্তবে কিছু করা সম্ভব নয়।

এই প্রশ্নের জবাবে তারানা হালিম বলেন, মোবাইলফোন অপারেটরদের সার্ভারে ফিঙ্গার প্রিন্ট স্টোর করার কোনও সফটওয়্যার নেই। এর জন্য যে বিশাল বিনিয়োগ প্রয়োজন তা-ও করা হয়নি বলে আমি জেনেছি।

ব্রি. জে. এমদাদ উল বারী বলেন, ফিঙ্গার প্রিন্ট্ সংগ্রহ করার জন্য ডিভাইসটিতে যে অ্যাপটা দেওয়া হয়েছে সেটা কাজই করবে না যতক্ষণ সেটা এনআইডি ডাটাবেজের সঙ্গে কানেক্ট হবে। ওই প্রোগ্রামের মধ্যে ফিঙ্গার প্রিন্ট স্টোরেজের কোনও সুযোগ রাখা হয়নি। তাতে কোনও মেমোরি কার্ড নেই। তিনি উল্লেখ করেন, রেগুলেটরের আসপেক্ট থেকে আমরা অপারেটরদের বলেছি, কোথাও ফিঙ্গার প্রিন্ট স্টোর করা যাবে না। এই রেগুলেশনটা দেওয়ায় তারা আইনগতভাবে ‘লায়াবল’ হয়ে আছে। এর অন্যথা কিছু হলে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারব।

তিনি জানান, এর আগেও গ্রাহকরা তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট মোবাইল অপারেটরদের দিয়েছেন, হার্ডকপিতে। এছাড়া আরও অনেক তথ্যই রয়েছে মোবাইলফোন অপারেটরদের কাছে কিন্তু সেসব নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। কারণ তখন ফিঙ্গার প্রিন্ট ভেরিফাই করার কোনও কার্যকর পদ্ধতি ছিল না। এজন্য কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। এখন যখন অনলাইনে নেওয়া হচ্ছে, এ কারণেই আওয়াজটা উঠেছে। বিশেষ মহল থেকে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। কারণ এটা কর্যকরভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, এ বিষয়টি (ফিঙ্গার প্রিন্ট) গত এক থেকে দেড় বছর ধরে মিডিয়ায় ঘোরাঘুরি করছে তখনও বিষয়টি নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেননি।

তিনি বলেন, ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে সিম নিবন্ধনের বিষয়ে আরও বলা হচ্ছে পৃথিবীর আর কোথাও ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। আমার উত্তর হচ্ছে, তাদের সিম নিবন্ধন পদ্ধতি অনেক শক্তিশালী। তাদের সিম ভেরিফিকেশনও অনেক কড়া। তাদের সোশ্যাল সিকিউরিটি সিস্টেমও খুবই শক্তিশালী। যেটা আমরা করতে পারিনি। তিনি প্রশ্ন করেন, আমাদের দরকার হচ্ছে কেন? কারণ আমাদের একটি এনআইডি ডাটাবেজ রয়েছে। আমাদের যে এনআইডি কার্ডটা আছে সেটা অস্থায়ী। এটা অন-স্পট ভেরিফাই করা যায় না। এটা কপি করা যায়। এজন্য আমাদের দরকার হয়েছে, এনআইডিতে যে ফিঙ্গার প্রিন্ট আছে সেটার সঙ্গে যাচাই করা। তবে তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের স্মার্টকার্ড হয়ে গেলে আর এসবের প্রয়োজন হবে না।

বৈঠকে জানানো হয়, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন শুরু হওয়ার পরে মোবাইলফোন ভিত্তিক অপরাধ কমেছে, হুমকি-ধমকিও কমেছে। এটাই আসলে একটি মহল সহ্য করতে পারছে না। অনেকের কালো টাকা আয়ের পথও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কেন তারা এটা মেনে নেবে।

এ প্রসঙ্গে তারানা হালিম বলেন, আমি জানি কারা এই প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। যারা হুমকিদাতা, যারা চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল) ব্যবসায়ীরা এসব গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। কারণ সিম নিবন্ধনের এই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পারলে তারাই সবচেয়ে লাভবান হবেন।

তিনি আরও বলেন, এটা অনলাইন ভেরিফিকেশন, অফলাইন নয়। ফলে আঙুলের ছাপ অন্য কারও হাতে তুলে দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। ব্যক্তির তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে মানে আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে।তিনি উল্লেখ করেন, কোনওভাবেই অপরাধীদের হাতে ফিঙ্গার প্রিন্ট যাওয়া সম্ভব নয়। সুযোগও রাখা হয়নি।

/এইচএএইচ/এএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা