X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী পরিবারতন্ত্রের বিরতিপর্ব

নাদীম কাদির
৩১ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:৪৩আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:৫২

নাদীম কাদির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে একঝাঁক তরুণ নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তবে দলের মধ্যে দাবি সত্ত্বেও নেতৃত্বে আসেননি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র।
দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সঠিক পছন্দ। কারণ তিনি দলে সক্রিয়, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং রসাত্মবোধপূর্ণ একজন মানুষ। তার মন্তব্যে চিন্তার ছাপ রয়েছে। দলের মধ্যে শক্তি সঞ্চার করে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার চ্যালেঞ্জে তার জন্য শুভ কামনা।
অনেকে আমাকে বলেছেন, শেখ হাসিনা কিছু সক্ষমতা কিংবা অন্য কিছুর ভিত্তিতেই বঙ্গবন্ধুর নাতি-নাতনিদের দলে নিয়ে আসবেন। হ্যাঁ! এটাই স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত। যেটা প্রত্যাশিত ছিল না তা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সদয় ব্যাখ্যায় তারা পুরোপুরি বাদ পড়ে যাবেন এমন কিছু।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর দুই দৌহিত্র- সজীব ওয়াজেদ জয় এবং রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিক; দুজনই ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। জয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা। রিদওয়ান একটি গুরুত্বপূর্ণ থিংক-ট্যাঙ্ক সিআরআই পরিচালনা করছেন।
উপমহাদেশের রাজনীতির ইতিহাস হচ্ছে পরিবার কেন্দ্রিক। পিতার মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা নেতৃত্বে উঠে এসেছেন কারণ আওয়ামী লীগের দলকে ঐক্যবদ্ধ করার মতো একজন নেতার প্রয়োজন ছিল। তিনি শুধু দলকে ঐক্যবদ্ধই করেননি বরং দলের ভেতরকার বিদ্রোহ থামিয়েছেন। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো দলকে ক্ষমতায় এনেছেন।
ভারতের গান্ধী পরিবার এবং পাকিস্তানের ভুট্টো পরিবারেও পরিবারতন্ত্র রয়েছে। তা সেটা দলকে সুফল দিক আর না-ই দিক।
রাহুল গান্ধী কোনও অগ্রগতি অর্জন করতে পারেননি। বিলাওয়ালও তেমন দৃশ্যমান নন। তার মানে দাঁড়াচ্ছে রাজনীতিতে জনপ্রিয় হতে পরিবারের শিকড় তাদের সাহায্য করছে না।
দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রদের স্পটলাইটের বাইরে রেখেছেন। তারা কাজ করছেন। যখন প্রয়োজন হবে তখন তাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসা হবে।
এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন এবং রিদওয়ানের মা শেখ রেহানা সরাসরি রাজনীতি থেকে দূরে থাকছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, ‘আমার নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসি।’
নিহত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ফ্যামিলি ট্রি-এর দিকে তাকান। ১৯৯১ সালে তার স্ত্রী একজন গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মাধ্যমে বিস্ময় তৈরি করেন। কিন্তু তাদের ক্ষয়প্রাপ্ত হত্তয়া দেখতে দীর্ঘ সময় লাগেনি। তিনি যখন রাজনীতির স্পটলাইটে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন তার পুত্ররা তখন ব্যস্ত ‘হাওয়া ভবন’ তৈরি করে অবৈধ অর্থ উপার্জনে।

এর ফল ছিল দুঃখজনক। দেশ কিংবা দল অথবা মা-বাবার সুনামের জন্য কোনও অবদান না রেখেই তার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমানের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে তারেক রহমান লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশে ফিরে আদালতের মুখোমুখি হতে বেশ ভয় পাচ্ছেন।

সহজে ক্ষমতায় আরোহণ এবং এর যশ-খ্যাতি প্রকৃতপক্ষে জিয়াউর রহমানের পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কার্যত বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করা এবং আজেবাজে মন্তব্য ছাড়া তাদের কোনও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। এই বাজে মন্তব্যের মধ্যে বঙ্গবন্ধুও রয়েছেন; যেটা বিএনপি’র মধ্যেই অনেকে গ্রহণ করেন না।

উভয়েই সঠিক শিক্ষা এবং বেড়ে ‌ওঠা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

এর বিপরীতটা ঘটেছে বঙ্গবন্ধুর পরিবারে। তারা সুশিক্ষিত, ভদ্র এবং দেশের সবচেয়ে সম্মানিত পরিবারের সদস্য হয়েও দলীয় লোকজনের সঙ্গে মার্জিত ব্যবহার করেন।

ক্ষমতা থাকুক আর নাই থাকুক; তারা বাস্তব দুনিয়া সম্পর্কে জানেন। কারণ ১৯৭৫ সালের পর নানা জটিলতার মধ্যে তারা বিদেশের মাটিতে বেড়ে উঠেছেন। তারা যে পর্যায়ে রয়েছেন সেখানে যেতে নিজেদের আইকন মায়েদের মতো তাদেরও লড়াই করতে হয়েছে। এটা কোনও শর্টকাট পথ ছিল না।

আমার বিশ্বাস শেখ হাসিনা এটা বুঝতে পারেন। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রদের তিনি তখনই নেতৃত্বে আনবেন যখন তাদের দক্ষ নেতা হিসেবে দেশের জন্য প্রয়োজন হবে।

লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ