X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণ ও ধর্ষকাম: মনস্তত্ত্বে পৌরুষ নির্মাণ

সাদিয়া নাসরিন
০৮ নভেম্বর ২০১৬, ১১:৪২আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০১৬, ২১:৪০

সাদিয়া নাসরিন দেশে কোনও যুদ্ধাবস্থা নেই, তবু আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের প্রতিটি মা এখন মেয়েকে বুকে নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটায়। আমার সোনার বাংলাদেশ অবরুদ্ধ আজ আগ্রাসী পৌরুষের হাতে। মধ্যবয়সী নারী, তরুণী, কিশোরী থেকে আড়াই-তিন-পাঁচ বছরের শিশু, সবাই নিরন্তর শিউরে পথ চলছে সবুজে মিশে থাকা ধর্ষকামী, হিংস্র পুরুষের ভয়ে। গ্রাম, শহর, রাস্তা, খেলার মাঠ, ফসলের মাঠ, হলুদের ক্ষেত, যানবাহন, হাসপাতাল, কর্মক্ষেত্র, সেনানিবাস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, থানা, নিজের ঘর—এক ইঞ্চি জায়গাও আর বাকি নেই যেখানে একটু নিরাপত্তা পাওয়া যাবে। কোথাও কেউ নেই, কোথাও কিছু নেই যাকে আঁকড়ে ধরে আমাদের কন্যারা, বাঁচতে পারে এই মড়ক থেকে।
কী নির্মম এক অসঙ্গতিপূর্ণ বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এই সময়! যখন  নারীর প্রতি বঞ্চনা, নির্যাতন, বৈষম্যের ইতিহাসকে বদলে দিয়ে সম্ভাবনার নতুন ইতিহাস গড়ার স্বীকৃতি হিসেবে এই দেশে জাতিসংঘের ভারি ভারি পুরস্কার আসছে ঠিক সেই সময় এ দেশে আক্ষরিক অর্থেই ধর্ষণের সর্বগ্রাসী মড়ক লেগেছে। গত ৯ মাসের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতি মাসে গড়ে ৫২ জন নারী ও শিশু ধর্ষিত হয়েছে। ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৩০১ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৬৯ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৯৩ জনকে, ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছে ৩২ জন শিশু এবং ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে ১৬৫ জন শিশু। পরিসংখ্যানের বাইরে প্রতিদিন প্রতিটি ঘরে শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে নিজেদের বড় আব্বা-ছোট আব্বা-মেঝ আব্বা-দাদাভাই-নানাভাই-মামা-খালু-ফুফা-আঙ্কেল, স্যার, হুজুরদের হাতে।
এই শঙ্কার দেশে, অবিশ্বাসের দেশে তোকে কোথায় লুকোবো কঙ্কাবতী আমার? কাছেই স্কুল, তবু শক্ত করে মুঠো ধরে স্কুলে দিয়ে আসি। বাসার দারোয়ান, ড্রাইভার, স্কুলের গার্ড সবাইকে ভয় পাই। কৃষকের মেয়ে মাঠে যাবে—সে আর কোনও ভয় পাচ্ছে না, ভয় পাচ্ছে ধর্ষণের; শহরের মেয়েটি স্কুলে বা কলেজে যাবে—সে ভয় পাচ্ছে ধর্ষণের; গার্মেন্টস এর মেয়েটি কাজে যাবে—ভয় পাচ্ছে ধর্ষণের, কাজ শেষে মেয়েটি রাতে বাসে বা ট্রেনে ঘরে ফিরবে—ভয় পাচ্ছে ধর্ষণের; মেয়েকে ঘরে রেখে মা বাইরে যাবে—সে আর কোন ভয় পাচ্ছে না, ভয় পাচ্ছে ধর্ষণের। একা পুরুষ দেখলে নারী ভয় পাচ্ছে ধর্ষণের, দলবদ্ধ পুরুষ দেখলেও নারী ভয় পাচ্ছে ধর্ষণের। সুজান গ্রিফিন এর মতো বাংলাদেশের প্রতিটি কন্যার ভবিষ্যত বলছে ‘আমি কখনোই ধর্ষণের ভয় থেকে মুক্ত থাকতে পারিনি’।

দুঃসময়ে যে যেমন পারে নিদান নিয়ে আসে। এই ধর্ষণ মড়ক ঠেকাতে কেউ ধর্ষকের লিঙ্গ কেটে ফেলতে চাইছেন, কেউ কেমিক্যাল ক্যাসট্রেশন এর কথা বলছেন। এই প্রক্রিয়ায় কখনও কখনও কাজ হতে পারে হয়তো। তবে রোগটা যেখানে, ঠিক সেই সেখানটাতেই ওষুধটা পড়া জরুরি। এটা তো প্রমাণিত সত্য যে, এই ধর্ষকাম, আগ্রাসন, হিংস্রতা শুধুমাত্র পুরুষের লিঙ্গে তৈরি হয়নি।  বরং এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ পুরুষের মগজে ‘পৌরুষ’ নামে এই ধর্ষকাম আর আগ্রাসন এর বীজ বপন করেছে, তাকে যত্ন করেছে, বড় করেছে।

সেই ‘পৌরুষ’ এর ফল ভোগ করছি আমরা নারীরা। ধর্ষণকে তাই শুধুমাত্র মানসিক রোগ বলে একপাশে সরিয়ে রাখলে আর চলবে না। সময় এসেছে ধর্ষিতার থেকে ধর্ষকের দিকে মনোযোগ দেওয়ার। ধর্ষণ ও এর মনস্তত্ত্ব বুঝতে হবে লৈঙ্গিক সম্পর্ক ও রাজনীতি এবং পুরুষের সামগ্রিক মূল্যবোধের আলোকে। আমাদের বুঝতে হবে এই পুরুষদের মনস্তত্ত্ব কীভাবে কাজ করে, তাদের চিন্তা, আচরণ এবং কল্পনাশক্তির ওপর পুরুষতন্ত্র কী ধরনের প্রতিক্রিয়া করে।

কেইট মিলেট প্রথম বলপ্রয়োগ নামে ধর্ষণ বিষয়টি আলোচনা করেন এবং দেখান যে, ‘নারীর ওপর পুরুষের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কৌশলগুলোর একটি হচ্ছে ধর্ষণ’। এই যে বিশাল সংখ্যক পুরুষ, যারা প্রতিনিয়ত শিশু ও নারীদের ধর্ষণ করছে, নৃশংসতা করছে, হত্যা করছে, তা কিন্তু পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে করছে না। বরং নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য, পরিস্থিতিকে নিজের পক্ষে নিয়ে আসার জন্য হিংস্রতার আশ্রয় নেওয়াটা এই পুরুষদের কাছে একটা সঠিক পদক্ষেপ এবং পৌরুষের প্রকাশ। কারণ, ধর্ষণ যতোটা না অবদমিত কামের প্রকাশ, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রকাশ নারীবিদ্বেষের।

এই ধর্ষকাম আর নারীবিদ্বেষ আমরাই তৈরি করেছি আমাদের ছেলেদের মনস্তত্ত্বে। দুটো সন্তানের ভেতরে  লিঙ্গের বিভাজন তৈরি করে একজন কে বলেছি, তুমি ছেলে, তুমি পবিত্র, শক্তিশালী, তেজস্বী, উচ্ছৃঙ্খল, শৌর্যশীল, কর্তৃত্বকারী। সে দেখলো, তার ‘শিশ্ন’ নামক একটি অঙ্গ আছে যার কোনও ভয় নেই, লজ্জা নেই বরং গর্ব আছে, শৌর্য আছে। সে দেখলো শিশ্নের নাম দেওয়া হয়, খেলা করা হয়, ঘুঙুর পরানো হয়, পূজা করা হয়, অগ্রভাগের চামড়া কর্তনের উৎসব করা হয়। এর পাশাপাশি সে নিজ ঘরেই দেখেছে ‘স্ত্রীলিঙ্গের’ ভার নিয়ে মেয়েদের ভীত হয়ে, কুঁকড়ে থেকে, বিব্রত, লজ্জিত, অবাঞ্ছিত, অসহায়, অধস্তন হতে। সে জেনেছে, মেয়ে অপবিত্র, তাকে শরীর লুকিয়ে রাখতে হয়, নত হতে হয়, লজ্জাশীল হতে হয়। পুরুষতান্ত্রিক লিঙ্গপাঠ এভাবেই তাকে ধীরে ধীরে করে তুলে প্রবল পরাক্রমশালী পুরুষ, যার যৌনতা নির্ভর করে কেবল তার স্বাধীন এবং  স্বয়ংসম্পূর্ণ লিঙ্গের ওপর, নারী সেখানে ‘কর্ম’ মাত্র।

পুরুষতন্ত্র যৌনক্ষমতাকে সম্মানিত করেছে, পুরুষ তাকে ক্যাপিটালাইজ করেছে। এই সমাজ এমন করে পুরুষ নির্মাণ করেছে যেখানে পুরুষের সমস্ত শক্তি, বিশ্বাস, সাহস ওই একটি লিঙ্গে পড়ে থাকে। যৌনতাকে কীভাবে পৌরুষের-মূল শক্তি হিসেবে প্রকাশ করে তা পথের মোড়ে মোড়ে যৌনশক্তিবর্ধক ওষুধের প্রকাশ্য বিজ্ঞাপন ও বেচাকেনা দেখলেই বোঝা যায়। যে সমাজের বিজ্ঞাপনচিত্রে যৌনসক্ষমতাকে ‘আসল পুরুষ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যে সমাজে শান্ত ছেলেরাও ‘মাইয়ালি বা মেয়েলি’ বলে আগ্রাসী পুরুষের ঘৃণা আর র‍্যাগিং এর শিকার হয়, সে সমাজ বাই ডিফল্ট ধর্ষক তৈরির কারখানা। এখানে লিঙ্গ ফ্যাক্টর নয়, ফ্যক্টর হলো ‘পৌরুষ’; ধর্ষণ লিঙ্গ করে না, করে পৌরুষ।

ব্রাউনমিলান এর ভাষায়, ‘‘পুরুষতন্ত্র  ‘পৌরুষ’কে দেখে যে মুগ্ধ চোখে, তাতে গড়ে উঠে এমন গণমনস্তত্ত্ব—যা ধর্ষণকে উৎসাহিত করে। পুরুষের মধ্যে কেউ কেউ ধর্ষণের কাজটি করে, সবাই করে না; তবে সব পুরুষই সম্ভাব্য ধর্ষণকারী’’। যে পুরুষ ধর্ষণ করে, যে ধর্ষণের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতে চায়, যারা ধর্ষকদের রক্ষা করতে চায়, যারা রগরগে কাহিনী ছেপে নিউজ ভ্যালু বাড়ায়, যারা ধর্ষককে আইনি সেবা দেয়, যারা জিজ্ঞাসাবাদের নামে মেয়েটিকে বারবার ধর্ষণ করে, যারা ভিক্টিম ব্লেইমিং করে তারা সবাই তখন ধর্ষকামী পুরুষের কাতারে দাঁড়িয়ে যায়।

এভাবে মনস্তত্ত্বে পৌরুষের বড়শি গিলে আটকে যায় সাইফুল, পরিমল, বদরুল, পান্না মাস্টার, মানিক আর পুরুষতন্ত্র তাদের শিকার করে। এই পুরুষের কাছে যৌনতা যখন যুদ্ধজয়ের আবেদন তৈরি করে, তখন নারীর প্রত্যাখান বা অস্বীকার তাদের মধ্যে ভয়াবহ ইগো সংকট তৈরি করে। যেহেতু পৌরুষ হেরে যেতে শেখেনি, ‘আমি না পেলে আর কেউ পাবে না’—এই আত্মশ্লাঘা তাদের হিংস্র করে। তারা কোপায়, এসিড মারে, ধর্ষণ করে, যৌনাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কেটে দেয়, মেরে ফেলে। এই নৃশংসতার পেছনে আত্মতৃপ্তির চেয়ে বেশি কাজ করে ক্ষমতা, নিয়ন্ত্রণ, জয় করা এবং অধীনস্ত করার মনস্তত্ত্ব। যৌনতা এখানে সাফল্যের সমার্থক, যা এক সময় প্রায় জুয়া খেলায় পরিণত হয়। যৌনবৃত্তি  কিংবা ভালোবাসাহীন দাম্পত্য, এসব ও ধর্ষণেরই বিভিন্ন লুকানো রূপ।

যে সমাজে ‘পৌরুষ’ মানে লজ্জাহীনতা আর রুচিহীনতার বোধ তৈরি করে সে সমাজে ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গে বিকৃতিও তৈরি হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই পুরুষরা নির্লজ্জের মতো প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগ করতে দ্বিধা করে না, প্রকাশ্যে যৌনাঙ্গে আঁচড়ায়, যৌনাঙ্গ দেখিয়ে ভয় দেখায়, বা নির্বিকার চিত্তে খালি গায়ে ঘুরে বেড়ায়, অর্ধনগ্ন হয়ে সাঁতার কাটে। লিঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের কুৎসিত উল্লাসের সৃষ্টি হয়েছে পৌরুষের ক্ষমতার কাছে নারীত্বের আত্মসমর্পন থেকে। কেবল লিঙ্গ নয়, বরং সমস্ত পৌরুষত্ব দিয়ে নারীকে ধর্ষণ করে পুরুষ। একটি মেয়েকে জোর করে, কষ্ট দিয়ে ধর্ষক যে আনন্দ পায়, মেয়েটি ব্যথায় চিৎকার করলে ধর্ষকের যে বিকৃত উল্লাস হয়, সে আনন্দ ক্ষমতার, দমন-নিপীড়নের। অসহায় নারী হাতে পায়ে ধরে বাঁচার আঁকুতি করবে, যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাবে, করুণা ভিক্ষা করে বলবে, ‘বাবারা, আমার মেয়েটা ছোট, একজন একজন করে আসো’—তবেই না পৌরুষের মহান সম্মান টিকে থাকবে। নারীত্ব হেরে গেলে পৌরুষ আনন্দ পায়, জিতে যায়।

এই মড়ক থেকে রক্ষা পেতে চাইলে পুরুষের মনস্তত্ত্ব থেকেই জীবাণু দূর করতে হবে, ঠিক এখানেই কাজ করতে হবে আমাদের। যে সমাজ, লিঙ্গপাঠ শিখিয়ে শিশুর দেহে পৌরুষ বপন করে তাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে গোড়াতেই। প্রথমেই ঘর থেকেই শুরু হোক প্রতিরোধ। আপনার ছেলেকে সন্তান হিসেবেই বড় করুন, তার মগজে পৌরুষ ভরে দেবেন না। শক্তিমান, সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, হিরো ইত্যাদি শব্দগুলোর সঙ্গে  শিশুটির মনের ভেতরে তার ওই ছোট্ট লিঙ্গ নিয়ে কোনও ফ্যান্টাসি, ক্রেডিবিলিটি, আনন্দ অথবা ভীতি তৈরি করবেন না। এই রঙ মেয়েদের, ওই রঙ ছেলেদের, অথবা এই খেলা ছেলেদের, ওই খেলা মেয়েদের এই বিভাজনে তাকে ফেলবেন না। তাকে শক্তির সঙ্গে নয়, মানবিক বোধের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। তাকে ধৈর্যশীল হতে শেখান, তার আবেগকে প্রশমিত হতে দিন।

তার ভেতরে লজ্জার বোধ তৈরি করে দিন। তাকে শিক্ষা দিন যেন সে কোনও ভাবেই নগ্ন-অর্ধনগ্ন/খালি গায়ে না থাকে। না, মানে না। তাকে শেখান শিশ্ন তার শরীরের একটা অঙ্গ মাত্র, এটি নিয়ে খেলা বন্ধ করুন। যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে হিস্যু করে লিঙ্গ সুবিধা নিতে দেবেন না শিশুকে, আপনিও নিবেন না। শরীরের ব্যক্তিগত সীমানা চিনতে শেখান। ওকে বুঝিয়ে বলুন, এই ব্যক্তিগত সীমানায় অন্যের প্রবেশ নিষেধ, দরকার না হলে আপনারও। যত দ্রুত সম্ভব নিজের শরীর পরিষ্কার করার কাজ তাকে শিখিয়ে দিন। আপনার শিশুকে বলুন, বড়-ছোট-মাঝারি কোনও আব্বার কাছেই সে নিরাপদ নয়। আপনার সন্তানকে অভয় দিন, তার অপ্রয়োজনীয় কথাও শুনুন, তাকে প্রশ্ন করতে দিন, উত্তর দিন। বিকৃত পৌরুষকে মোকাবিলা করার সাহস আর আত্মবিশ্বাস আপনার শিশুকে আপনিই দিতে পারবেন।

মনে রাখবেন, আপনার হাতেই সে হয়তো পুরুষ হবে, নয়তো মানুষ হবে। তাই পরীক্ষা পাশের যুদ্ধের মতোই সমান গুরুত্ব দিয়ে এই যুদ্ধ করতে হবে আপনাকে। আপনি, আমি যদি নিশ্চিত করতে পারি আমাদের সন্তান আর যাই হোক, ধর্ষক বা ধর্ষকামী হবে না, তবে এই দেশের একটি মেয়েও আর পুরুষের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকবে না। মনে রাখবেন আগে আমাদের ছেলেদের বাঁচাতে হবে এই ধর্ষকামী পৌরুষ নির্মাণের নষ্ট রাজনীতি থেকে। ছেলে বাঁচলে তবেই কন্যারা বাঁচবে।

অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার প্রবণতাকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করতে হবে। ধর্ষণ কোনো ভাবেই ব্যক্তিগত বা সামাজিক ইস্যু নয়, এটা রাজনৈতিক ইস্যু। মনে রাখতে হবে ধর্ষণের উৎপত্তি শক্তিচর্চা আর লৈঙ্গিক রাজনীতি থেকে, যা নারী-পুরুষের শক্তি সম্পর্কের সঙ্গে জড়িত। তাই যতদিন না পর্যন্ত ধর্ষণের (আবার বলি, ধর্ষণের, শুধু ধর্ষকের নয়) বিচার প্রক্রিয়ার পুরুষতান্ত্রিক ফাঁকগুলো বন্ধ করার জন্য রাজনৈতিক কমিটমেন্ট তৈরি না হবে, যতদিন পুঁজিবাদী রাজনীতিকে উপেক্ষা করে পর্নসাইট নিষিদ্ধ না করা হবে, ততদিন ধর্ষণ মহামারির প্রকোপ কমবে না। যেখানে শাজনীন ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের জন্য ট্রান্সকমের মতো প্রভাবশালী পরিবারকে একযুগ আইনি লড়াই করতে হয়, সেখানে অতি দরিদ্র, সাধারণ পরিবার কীভাবে বিচার পাবে?

সব কিছুর পরেও সবাইকে নেমে আসতে হবে অফলাইনে, হার্ডকভারে। সামাজিক প্রতিরোধের বিকল্প নেই। পৃথিবীর সব ধর্ষক কারও না কারও ভাই, কারও স্বামী, কারও পিতা, কারও সন্তান--দেশ ছাড়া, গোত্র ছাড়া, পরিবার ছাড়া তারা আসমান থেকে নাজিল হয়নি। তারা আমাদেরই আশেপাশে আছে। তাদের প্রতিহত করতে হবে সমুখেই। গণ প্রতিরোধ গড়ে কীভাবে এই দেশে ইয়াসমিন, সীমার ধর্ষণ ও হত্যার বিচার করতে বাধ্য করা হয়েছিল সে উদাহরণ আমাদের সামনে আছে। তাই, ধ্বংসের বার্তা নিয়ে নেমে আসি মিছিলে, কথা হোক প্রতিবাদে, পথ হোক প্রতিরোধে।

লেখক: প্রধান নির্বাহী, সংযোগ বাংলাদেশ

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মুজিবনগর দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
মুজিবনগর দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
আইইউবিতে অনুষ্ঠিত হলো জলবায়ু বিজ্ঞানী সালিমুল হক স্মারক বক্তৃতা
আইইউবিতে অনুষ্ঠিত হলো জলবায়ু বিজ্ঞানী সালিমুল হক স্মারক বক্তৃতা
আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণ: ২ আসামির স্বীকারোক্তি
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণ: ২ আসামির স্বীকারোক্তি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ