X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্যান্ট চুরি মামলার আসামি সাংবাদিক নাজমুল!

হারুন উর রশীদ
২১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৩:০৩আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৭, ১৫:৩৭

হারুন উর রশীদ সাভারের সাংবাদিক নাজমুল হুদা প্রায় একমাস ধরে কারাগারে আটক আছেন। গতমাসে তাকে আটকের পর তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে একটি মামলা দেয় পুলিশ। আর সেই মামলায় রিমান্ডেও নেয়। এখন আবারও নতুন করে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। সেই চেষ্টার রসদ হিসেবে নাজমুলকে আরও পাঁচটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, যার একটি মামলায়ও নাজমুল এজাহারভুক্ত আসামি নয়। আর এই মামলাগুলোর মধ্যে প্যান্ট চুরির মামলাও রয়েছে!
সাভারের সাংবাদিক নাজমুলকে আমি চিনি প্রায় ১০ বছর ধরে। তখন আমি একুশে টেলিভিশনে কাজ করতাম। একুশে টেলিভিশনে প্ল্যানিং এডিটরের দায়িত্বের বাইরেও আমি ‘একুশের চোখ’ নামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন-এর অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলাম। কখনও কখনও এর রিপোর্টিং-এর কাজও করতাম। নাজমুল হুদা তখনও একুশে টেলিভিশনের সাভার- আশুলিয়া প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করতেন। সাভার আশুলিয়া শিল্প এলাকা এবং গ্রোয়িং সিটি হওয়ায় ওই এলকায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের অনেক বিষয় ছিল। আর সেই সব বিষয় আমাকে জানাতেন নাজমুল। নাজমুলের দেওয়া আইডিয়া নিয়ে অন্তত ১০টি অনুষ্ঠান করেছি আমি। তবে নাজমুল আমার অনেক কাছে আসেন রানাপ্লাজা ধসের সময়।
নাজমুল হলেন সেই একমাত্র সাংবাদিক যিনি রানাপ্লাজা ধসের আগেরদিন ভবনের ফাটলের ফুটেজ ধারণ করেছিলেন। সেদিন রানা বলেছিলেন, ‘এটা কোনও ফাটল নয়, পলেস্তরা খসে পড়েছে।’ একুশে টেলিভিশনে সেই প্রতিবেদন ধসের আগের দিনই প্রচার হয়। আর ধসের দিন সকালে জোর করে শ্রমিকদের ভবনে প্রবেশ করানোর ফুটেজও নাজমুল ধারণ করেছিলেন। আর এসব কারণে নাজমুলকে বার বার হত্যার হুমকি দেওয়া হয় তখন। রানাপ্লাজা নিয়ে ওই দুটি প্রতিবেদনের জন্য নাজমুল আন্তর্জাতিকভাবেও পরিচিতি পান। তার ওই এক্সক্লুসিভ ফুটেজ বিবিসিসহ পৃথিবীর অনেক বড় বড় টেলিভিশন চ্যানেল দেখিয়েছে। বিবিসি নাজমুলকে কেন্দ্র করে একটি ডকুমেন্টারি ফিল্মও বানিয়েছে।
আহা মামলা!

নাজমুল এখন একুশে টেলিভিশনের পাশাপাশি বাংলা দৈনিক পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিনেও সাভার- আশুলিয়া প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। নাজমুল হুদাকে ২৩ ডিসেম্বর রাতে পুলিশ সাভার থেকে টেলিফোনে আশুলিয়ায় ডেকে নিয়ে আটক করে। পরের দিন তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ৫৭ ধারায় মামলা করে আশুলিয়া থানা পুলিশ।

এই মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘নাজমুল ২০, ২২ এবং ২৩ ডিসেম্বর আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ে মিথ্যা খবর পরিবেশন করেন। আর এই সংবাদ পাঠাতে তিনি মোবাইল ও ল্যাপটপ ব্যবহার করেন। ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনে লিখেছেন, গতকাল সকাল থেকে আব্দুল্লাহপুর বাইপাইল সড়কের দূর পাল্লার এবং আঞ্চলিক গণপরিবহন চলাচল বন্ধ আছে, সাভার ও আশুলিয়ায় ছয়শত-এর বেশি পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে। বাইপাইল এলাকায় পুলিশ কোনও যানবাহন ঢুকতে দেয়নি ও বন্ধ ঘোষিত ৫৫ টি কারখানা ছাড়া বাকি কারাখানার শ্রমিকরা কর্মস্থলে উপস্থিত থাকলেও তারা কর্মবিরতি পালন করেন।’

কিন্তু এই এজাহারেই পুলিশ তথ্য বিকৃত করেছে। আমার কাছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ওই প্রতিবেদনটির প্রিন্ট এবং অনলাইন ভার্সন সংরক্ষিত আছে। সেখানে কোথাও ‘সাভার ও আশুলিয়ায় ছয়শত-এর বেশি পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে’- এই লাইনটি নেই। সেখানে ৫৫টি পোশাক কারাখানা বন্ধ করে দেওয়ার খবরই ছাপা হয়েছে। পুলিশ এজাহারে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছয়শ’ কারাখানা বন্ধের তথ্য ঢুকিয়েছে নাজমুলকে ফাঁসানোর জন্য। আর দশটা পত্রিকা যা তথ্য দিয়েছে নাজমুলও একই তথ্য দিয়েছেন। পুলিশ শুধুমাত্র নাজমুলের প্রতিবেদনে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ‘অপরাধ’ খুঁজে পেয়েছে।

তারপরও এই মামলায় আদালত নাজমুলকে ২৮ ডিসেম্বর দুই দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। আদালতে নাজমুলের আইনজীবী পুলিশ যে এজাহারে তথ্য বিকৃতি ঘটিয়েছে তা তুলে ধরেছিলেন। তারপরও আদালত নাজমুলের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এই রিমান্ড নিয়ে অবশ্য কথা বলার সুযোগ নেই। কারণ এটা আদালতের এখতিয়ার। তবে একই মামলায় দ্বিতীয় দফায় আবারও নাজমুলের রিমান্ডে চেয়েছিল আশুলিয়া থানা পুলিশ। 

কিন্তু আদালত সে আবেদনে সাড়া দেননি। তাই পুলিশ এখন নতুন পথ ধরেছে। আর তা হলো- আশুলিয়া এলাকার পোশাক কারখানা সংক্রান্ত মামলা খুঁজে বের করে যেসব মামলায় অজ্ঞাত আসামির কথা আছে সেসব মামলায় নাজমুল হুদাকে গ্রেফতার দেখানো। এপর্যন্ত এরকম পাঁচটি মামলায় নাজমুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে প্রতিটি মামলায়ই পুলিশ নাজমুলের রিমান্ড চেয়েছে।

অজ্ঞাত আসামি পুলিশের অস্ত্র!

এই মামলাগুলোর দু’টি বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং তিনটি পোশাক কারখানায় চুরি, হামলা, শ্লীলতাহানি ও ভাঙচুরের। 

আশুলিয়া থানায় ১৮ ডিসেম্বর দায়ের করা ২৫ নম্বর মামলায় অভিযোগ হলো একটি পোশাক কারখানায় ঢুকে হামলা, মারপিট, শ্লীলতাহানি ভাঙচুর ও প্যান্ট চুরির। এই মামলায় সুজন মিয়া এবং সাইফুল নামে দু’জন আসামিসহ অজ্ঞাত পরিচয় অনেককে আসামি করা হয়েছে। এজাহারে সাংবাদিক নাজমুলের নাম বা তাকে সন্দেহ করার কথাও নেই। কিন্তু এই মামলায় পুলিশ নাজমুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে।

আশুলিয়া থানায় ২৪ ডিসেম্বর দায়ের করা মামলায় অভিযোগ একই রকম। সেখানে একটি পোশাক কারথানায় ঢুকে হামলা, শ্লীলতাহানি ও চুরির অভিযোগ করা হয়েছে। এই মামলায় ৩৯ জন আসামির নাম উল্লেখ করেছেন বাদী। ৩৯ জনের মধ্যেও এজাহারে কোথাও সাংবাদিক নাজমুলের নাম নাই। তারপরও পুলিশ ‘অজ্ঞাত’র সুযোগ নিয়ে নাজমুলকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছে।

১৯৭৪ সনের বিশেষ ক্ষমতা আইনের দু’টি মামলায়ও গ্রেফতার দেখিয়ে নাজমুলের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। এ দু’টি মামলার এজাহারেও নাজমুলের নাম নেই। তবুও পুলিশের ইচ্ছা হয়েছে তাই নাজমুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনের দু’টি মামলাই ২৩ ডিসেম্বর দায়ের করা হয় আশুলিয়া থানায়।

আরেকটি মামলায় নাজমুলকে গ্রেফতার দেখানো হলেও তার নথিপত্র এখনও আদালতে দেয়নি পুলিশ। এই মামলাটি আশুলিয়া থানায় দায়ের করা হয় ডিসেম্বর মাসে। মামলা নম্বর ২৮। এই মামলার এজাহারেও নাজমুলের নাম নাই।

পুলিশের কথা সত্য ধরে নিলে নাজমুল দেখা যাচ্ছে আশুলিয়া এলাকার পোশাক কারখানায় হামলা, ভাঙচুর, শ্লীলতাহানি ও চুরিতে ব্যস্ত। সে একজন ভয়ঙ্কর দাগি আসামি। পুলিশ হয়তো আরও মামলা খুঁজছে। হয়তো শেষ পর্যন্ত সাংবাদিক নাজমুল শতাধিক মামলার আসামি ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ হয়ে যাবে পুলিশের কল্যাণে। হায়রে পুলিশ! 

সাংবাদিক নাজমুল হুদা নাজমুলের প্রতি কেন এত ক্ষোভ?
নাজমুলের বিরুদ্ধে পুলিশের যে প্রচন্ড ক্ষোভ তা এখন স্পষ্ট। তাই তারা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ধারায় অসত্য তথ্য দিয়ে মামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি। এখন মামলা খুঁজে খুঁজে তাকে সেই সব মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিতে চায়। এর কারণ কী। নাজমুলকে এরইমধ্যে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাজমুলকে আটকের ১০ ঘণ্টা পর মামলা দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে এই ১০ ঘণ্টা নাজমুলকে নির্যাতন চালানো হয়। নাজমুল এখন এক কানে শুনতে পান না বলে তার আইনজীবী অভিযোগ করেছেন। নাজমুলকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ কি কোনও ভয়ঙ্কর তথ্য পেয়েছে। যদি পেয়ে থাকে তাহলে পুলিশ তা আদালতে জানালে আদালত নিশ্চয়ই তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় ফের রিমান্ড দিতেন। কিন্তু আদালত তা দেননি। আমি ধরে নিতে পারি ওই মামলায় পুলিশ এখন আর সুবিধা করতে না পেরে নতুন নতুন মামলার আশ্রয় নিচ্ছে। আর এজাহারে নাম না থাকার পরও ওই সব মামলায় নাজমুলকে রিমান্ডে নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো নাজমুলকে নির্যাতন করা। সাভারের অনেক সাংবাদিকই আমার পরিচিত। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘নাজমুল এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার রোষে পড়েছেন। নাজমুলের অপরাধ তিনি এ পোশাক শ্রমিকদের একটি প্রতিবেদন নিয়ে পুলিশের এক বড় কর্তার সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন।’ এছাড়া সাভার-আশুলিয়া এলাকায় কতিপয় পুলিশের অনৈতিক কাজের ওপর নাজমুল বেশকিছু প্রতিবেদন করেছেন বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু আদালতে রিমান্ড আবেদনে পুলিশ দেশের স্বার্থ, জনগণের স্বার্থসহ শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের নাম ভাঙাচ্ছে।

দেশের অনেক এলাকার মতো সাভারেও সাংবাদিকদের গ্রুপিং আছে। নাজমুলের প্রতিপক্ষ সাংবাদিকদের কেউ কেউ আমাকে বলার চেষ্টা করেছেন, ‘পুলিশ যে ঘটনায় মামলা করেছে সেই ঘটনায় নাজমুলের দায় নেই। তবে নাজমুলের বিরুদ্ধে পেশাগত অনেক অভিযোগ আছে। তাই আমরা কথা বলতে পারছি না। প্রতিবাদ করতে পারছি না।’ আমার কথা হলো নাজমুলের বিরুদ্ধে পেশাগত অনেক অভিযোগ থাকলে তার আইনগত প্রতিকারও আছে। সত্যিই যদি নাজমুল কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকেন তার জন্য মামলা হতে পারে। কিন্তু পুলিশ যে মামলা দিয়েছে আর যেসব মামলায় গ্রেফতার দেখাচ্ছে সেখানে তো ওই ধরনের অভিযোগ আমরা পাচ্ছি না। কেন পাচ্ছি না? আর নাজমুলকে পুলিশ এই যে হয়রানি করছে তা কি ওইসব কারণে বৈধ হয়ে গেলো?

সাভারে নাজমুলের বিরুদ্ধে এইসব কথিত অভিযোগের মধ্যে একটি হলো তার বিরুদ্ধে সাভারের এসআই আব্দুস সাত্তার-এর স্ত্রীর শ্লীলতাহানির মামলা। ওই ঘটনাটি আমার জানা আছে। বিষয়টি হলো সাভারের গেণ্ডা এলাকায় এসআই সাত্তার সরকারি জমি দখল করে একটি বিলাসবহুল বাড়ি বানিয়েছেন বলে অভিযোগ ছিল। ২০১১ সালে তখন সেটা নিয়ে একটি প্রতিবেদন করতে আমি সেখানে যাই। ওই বাড়ি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির এক পর্যায়ে আমার ওপর হামলা করে সাত্তারে লোকজন। ক্যামেরা কেড়ে নিতে চায়। পরে পুলিশ এসে তাদের নিবৃত্ত করে। সেখানে নাজমুল ছিল না। কিন্তু মামলা করে নাজমুলের বিরুদ্ধে। তার অপরাধ সে আমাকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। পরে পুলিশ সদর দফতরের তদন্তে ওই মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয় ।

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বাপ!

নাজমুলের মুক্তি দাবি করে এরইমধ্যে সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস বিবৃতি দিয়েছে। তারা বিতর্কিত তথ্যপ্রযুক্তি আইনে নাজমুলকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে ওই আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে। তবে তারা হয়তো এখনও বুঝতে পারেনি বাংলাদেশে সাংবাদিক হয়রানির আরও কত কৌশল আছে পুলিশের। আর এই হয়রানি করতে আকাশের তারার মতই পুলিশের ধারা। নাজমুলের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হওয়ার পর রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, জানতে চেয়েছে সর্বশেষ পরিস্থিতি। তখনকার পরিস্থিতি তখন জানিয়েছি। তবে এখন তাদের বলছি এখনকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। আশুলিয়া থানা পুলিশ যত মামলা পাচ্ছে সব মামলায়ই নাজমুলকে আসামি করছে। আশুলিয়া পুলিশই যেন আইন। তারা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ‘বাবা’। তথ্যপ্রযুক্তি আইন বাতিল করে কী হবে!

জাস্ট কৌতূহল?

কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক সওগাত আলি সাগর তার ফেসবুকে নাজমুলকে নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি জানতে চেয়েছেন, ‘নাজমুল হুদা নামে সাভারের একজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করে আটকে রাখার ব্যাপারে ঢাকার সাংবাদিক ইউনিয়ন তথা সাংবাদিক নেতাদের কোনও প্রতিক্রিয়া আছে কি? জাস্ট কৌতূহল।’

আর সেখানে জবাবে একাত্তর টেলিভিশনের যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক মনির হোসেন লিটন বলেছেন, ‘সাগর ভাই, নাজমুল হুদা অন্তত তিন মাসের জন্য আপনার মফস্বল-কলিগ ছিল। সে মনে হয় এখনও একুশে টিভিতেই আছে, যেই টিভির সিইও আমাদের বিএফইউজে'র সভাপতি বুলবুল ভাই। তাই সাংবাদিক ইউনিয়ন বা নেতাদের প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি বুলবুল ভাই ভালো জানেন। নাজমুলের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকতেই পারে--কিন্তু প্যান্ট চুরি? এ যে সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিএনপি আমলে দেওয়া প্লেট চুরির মামলার সমগোত্রীয় হয়ে গেলো! যতদূর জানি এর আগে তার বিরুদ্ধে মাইক্রোবাস চুরির মামলা ছিল। পুলিশ এখন মাইক্রোবাস থেকে প্যান্ট-এ নেমে এসেছে।’

সাংবাদিক নাজমুল হুদাকে আটকের পর ফ্রান্সের বার্তাসংস্থা এএফপির বাংলাদেশ ব্যুরো প্রধান শফিকুল আলম একটি লেখা লিখেন। সেখানে রানাপ্লাজা নিয়ে নাজমুলের এক্সক্লুসিভ ফুটেজ ও সাহসী সাংবাদিকতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘নাজমুলের জন্ম যদি আমেরিকায় হতো তাহলে নাজমুল রানাপ্লাজার ওই ফুটেজ ও প্রতিবেদনের জন্য পুলিৎজার পেতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য নাজমুলকে এখন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ে রিপোর্ট করায় আটক হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশের পুলিশ নাজমুলের প্রতি আরেকটু সহনশীলতা দেখাতে পারতো।’

আর আমরা কথা হলো সহনশীল হওয়ার প্রয়োজন নেই। পুলিশকে সত্যনিষ্ঠ হওয়ার আহ্বান জানাই। প্রতিহিংসা নয়, আইনের সঠিক প্রয়োগের আহ্বান জানাই। পুলিশের পোশাক পরে ব্যক্তিগত আক্রোশ চরিতার্থ করা থেকে নিবৃত হওয়ার আহ্বান জানাই।  

সবশেষে সরকারের কাছে আবেদন সাংবাদিক নাজমুল হুদার প্রতি সুবিচার করুন, প্লিজ।

লেখক: সাংবাদিক

ইমেইল: [email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-রামাফোসার ফোনালাপ
ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-রামাফোসার ফোনালাপ
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ