X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

আয়ারল্যান্ডে ছাপ ফেললো রোহিঙ্গারা

নাদীম কাদির
০৬ মার্চ ২০১৭, ১২:৪৬আপডেট : ০৬ মার্চ ২০১৭, ১২:৫৯

নাদীম কাদির সম্প্রতি এক সফরে গিয়েছিলাম কিলকেনি শহরে। আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিন থেকে ট্রেনে যেতে সময় লাগে ৯০ মিনিট। কালো মার্বেলের সুদৃশ্য কিলকেনি শহরে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল এক বিস্ময়।
আসুন কিলকেনির সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই। শহরটি দক্ষিণ-পূর্ব আয়ারল্যান্ডের লেইনস্টার প্রদেশে অবস্থিত। কিলকেনি শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে তিনটি প্রধান নদী। নোর, সুইর এবং বারো – তিন বোন বলে পরিচিত।
১৬৪১ সালে কিলকেনিই ছিল আয়ারল্যান্ডের রাজধানী। পরবর্তী নয় বছর ধরে, অর্থাৎ ১৬৪৯ সালে ক্রমওয়েল আয়ারল্যান্ড অভিযান চালানোর আগপর্যন্ত এটি রাজধানীর মর্যাদা ধরে রাখে।
শহরটি এখনও মধ্যযুগীয় আবহ ধরে রেখেছে এবং পুরনো বাড়িগুলো সংরক্ষণ করেছে। কিলকেনি শৈল্পিক ঐতিহ্যে ভরপুর। থমাসটাউন কমিউনিটি শিল্পীদের জন্য বিখ্যাত। ইনিস্টয়েজ আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে সুন্দর শহরগুলোর একটি।
অনেক ট্যুর অপারেটর শহরটিকে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর শহর বলে তালিকাভুক্ত করে থাকে। শহরের ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং গৃহপালিত পশুর চারণভূমি, এটিকে এক অসাধারণ স্থানে পরিণত করেছে।
আইরিশ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির জন্য আমি কিলকেনির কেসিএলআর নামে একটি রেডিও স্টেশনে পৌঁছাই। এই বাণিজ্যিক রেডিওটির প্রতিদিন ৭০ হাজার শ্রোতা রয়েছে, আর এটি বহু পুরস্কারও জিতেছে।
রেডিওটির প্রধান নির্বাহী ও আয়ারল্যান্ডের বেসরকারি রেডিও স্টেশনগুলোর জোটের প্রধান জন পুরসেল জানান, তারা গবেষণার পরই কোনও প্রোগ্রাম অন-এয়ারে নিয়ে যান। আর এজন্যই মাত্র ৩০ জন কর্মী নিয়েও তারা বহু পুরস্কার জিতেছে।
একটি কনফারেন্স স্টুডিও এবং দুটো ছোট স্টুডিও নিয়ে এটি এখন একটি মর্যাদাপূর্ণ মিডিয়া। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংগীত নিয়ে তারা অনুষ্ঠান করলেও, তাতে বাংলাদেশের কিছু থাকে না!
আমি বাংলাদেশের একটি মিষ্টি গানের কথা তাদের জানালাম। এটি তাদের  বাজানো উচিত বলেও উল্লেখ করলাম। গানগুলো ইউটিউবেও আছে। আমি স্টেশন এডিটর স্যু নানকে দুটি বাংলা গানের সিডিও পাঠিয়েছি।

আমরা যখন বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে কথা বলছি, তখন আরও মজার একটি বিষয় সামনে আসে।

এরপর আলোচনায় আসে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের কথা, যারা ১৯৯১ সাল থেকে নিপীড়নের অভিযোগে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।

স্যু আমাকে অবাক করে দিয়ে জানান, ‘আমাদের এখানে পার্শ্ববর্তী কারলো শহরে ৭০টি রোহিঙ্গা পরিবার রয়েছে।’

তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গাদের সন্তানরা এখন স্থানীয় ক্রিকেট দলে খেলছে। তারা বেশ ভালো করছে। ‘কিছু খেলায় তাদের জন্যই জয় এসেছে’, হাসি মুখে বলেন তিনি। তারা কিলকেনি এবং কারলো এলাকার স্থানীয় অধিবাসীদের মুগ্ধ করেছে।

রেডিওতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আমি বলেছি, আমাদেরকে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার আলোকেই রোহিঙ্গাদের দেখতে হবে। অনেক রোহিঙ্গা মাদক পাচার, পতিতাবৃত্তির মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত। রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) জঙ্গিবাদসহ সশস্ত্র অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৯১ সালে যখন রোহিঙ্গারা ব্যাপকহারে বাংলাদেশের আসতে শুরু করে, তখন ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির পক্ষে সংবাদ সংগ্রহ করতে আমি সেখানে ছিলাম। টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজার এবং পার্শ্ববর্তী অন্যান্য এলাকার স্থানীয় অধিবাসীরা অভিযোগ করেছেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যায় এবং সব রকম অপরাধের সঙ্গে তারা যুক্ত রয়েছে।

আমাদের কিলকেনির ‘ভালো রোহিঙ্গাদের’ উদাহরণ হিসেবে নিতে হবে এবং তাদের আয়ারল্যান্ডের মতো দেশে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ইউরোপে তাদের তাদের অল্প জনসংখ্যার তুলনায় প্রচুর খালি জমি রয়েছে।

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে বলা উচিত নয়। বরং তাদের ইউরোপীয় দেশগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। ওই অভাগা মানুষগুলোকে জমি, অর্থ, বাসস্থান এবং স্বাস্থ্য সহায়তা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ক্ষমতা রয়েছে তাদের।

লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ