X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

৪৪ বছরের সংসার ভাঙলো ব্রিটেনের

জুবায়ের বাবু
২৮ মার্চ ২০১৭, ১২:৩১আপডেট : ২৮ মার্চ ২০১৭, ১২:৩৩

জুবায়ের বাবু ৪৪ বছরের সংসার ভেঙে ছারখার হয়ে গেলো ব্রিটেনের। সেই ১৯৫৭ সালে কনের জন্ম, তারপর যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউরোপে বেড়ে ওঠা। বেলজিয়াম, ফ্রান্স, ইতালি, পশ্চিম জার্মান, হল্যান্ড এবং লাক্সেমবার্গ নিয়ে ৬ জনের ছোট পরিবারে বেশ আদরেই বড় হতে থাকে ইইসি নামের এই কন্যা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ধীরে ধীরে আসতে শুরু করে সচ্ছলতা। কন্যার দুধে আলতা গায়ের রং দেখে তখন বিশ্বের অনেকেই হিংসায় জ্বলে শেষ। ব্রিটেনও তখন যৌবনে পা রেখেছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ঘরটাকে বেশ গুছিয়ে নিয়েছে। তাই, এমন কনে তাদেরইতো মানায়। বিয়ের আগে কনে দেখা, বংশ পরিচয়, আত্মীয় স্বজনের খুঁজে খবর নেওয়া, কোনও কিছুতেই কমতি ছিল না তাদের।
১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি তে যখন ইইসি-এর সঙ্গে কাবিন নামায় সই করলো, তখন কিন্তু কনে দেখে এতই মুগ্ধ ছিল যে পাড়াপড়শি এমন কী নিজের ঘরের কাউকে বলার প্রয়োজন মনে করেনি। ফলে একবছর না পেরুতেই ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি বিয়ের পিড়িতে বসে পড়ে ব্রিটেন। বরযাত্রায় সঙ্গী হয় আয়ারল্যান্ড আর ডেনমার্ক। ছোট সংসার, আয়ব্যয় হিসাব কষে বেশ ভালোই ছিল। ১৯৭৩ সালে সংসারের ব্যয় হিসাবে ১৮৭ মিলিয়ন দিয়ে শুরু করে ব্রিটেন। দেনা পাওনায় হিসেবটা ভালোই চলছিলো। মধুচন্দ্রিমা যেতে না যেতেই সংসার বড় হতে লাগলো। ১৯৮১ সালে গ্রীস, ১৯৮৬ সালে পর্তুগাল এবং স্পেন ঘরে আসলো। এভাবে দিনে দিনে বাড়তে লাগলো সংসার। ২০১৩ সালে ইইউ'র কোল জুড়ে আসে ক্রয়েশিয়া। দিনে দিনে সংসার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ জনে। বড় সংসার, খরচ বেশি। তাই ব্রিটেনকে গত বছর গুনতে হয়েছে ১৩ বিলিয়ন পাউন্ড যা এই বছরে দাঁড়াবে ১৯ বিলিয়নে। ৫ বিলিয়ন ছাড় পেলেও পকেট থেকে গুনতে হবে ১৪ বিলিয়ন পাউন্ড। অথচ গত বছর ওদিক থেকে আসে মাত্র ৪.৫ বিলিয়ন, অর্থাৎ ৮.৫ বিলিয়ন লুটেপুটে  খায় শাশুর বাড়ির লোকজন। অর্থাৎ ব্রিটেনের প্রতিটি মানুষ প্রতি সপ্তাহে ৪.৪০ পাউন্ড অর্থাৎ বছরে ২২৮.৪৩ পাউন্ড তার কষ্টার্জিত আয় থেকে ব্যয় করে ইইউয়ে  থাকার জন্য। এভাবে গত ৪৩ বছরে ইইউ-কে দিতে হয়েছে অর্ধ ট্রিলিয়ন পাউন্ড। বড় সংসার বলে কথা না, ঘরের সব সন্তান কি আর এক হয়?

পোল্যান্ড সহ পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বছরে লক্ষ লক্ষ মানুষ পাড়ি জমায় ব্রিটেনে। ওরা এসেই প্রথমে রানীর জামাই হয়ে ঘর বাড়ি, বেকার ভাতা সহ সকল সুবিধা আদায় করে নেয়, পাশাপাশি নগদ আর্থের বিনিময়ে কম টাকায় কাজ শুরু করে দেয়। রাস্তার যেখানে সেখানে বিয়ারের ক্যান কিংবা সন্ধ্যায় রুমানিয়ান রমণীদের অলিতে গলিতে স্বল্প-বসনে ঘোরাফেরা মোটেও ভালো চোখে দেখেনি রক্ষণশীল ব্রিটিশরা। দিনে দিনে এই পরিবেশে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ। বাড়িঘরের দাম, দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্ব গতি,  তারপরেও সংসারের কর্তা হিসেবে ভরণ-পোষণ তো ব্রিটেনকেই সবচেয়ে বেশি দিতে হয়। তারপর গত কয়েক বছর ধরেই শোনা যাচ্ছে তুরস্কের কথা। যেখানে প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে ব্রিটেনে আসার জন্য। এভাবে যদি বাড়তে থাকে জনসংখ্যা, তবে অচিরেই ব্রিটেনের অর্থনীতি শুধু তলানিতে গিয়েই  ঠেকবে না, সামাজিক ভাবেও চরম অস্থিরতায় পড়বে ব্রিটেন। তাই এই তালাকের সিদ্ধান্ত।

লেখক: নির্মাতা

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-রামাফোসার ফোনালাপ
ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-রামাফোসার ফোনালাপ
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ