X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

তিস্তা প্রশ্নে মমতাকে বিশ্বাস না করার কয়েকটি কারণ

জুলফিকার রাসেল
১০ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:৩৯আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:২২

জুলফিকার রাসেল শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি  দিল্লিতে এসেছিলেন। দিল্লি এসে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন, এবং বড় মুখ করে বলেছেন তিনি বাংলাদেশের মানুষকে ‘গভীরভাবে’ ভালোবাসেন এবং তিনি বাংলাদেশকে না কি পানিও দিতে চান। তবে সে পানি তিস্তার নয়, তোরসা-ধরলা-মানসাইয়ের।
এই বক্তব্যকে গণমাধ্যমে অনেকেই মমতা ব্যানার্জির ‘বিকল্প প্রস্তাব’ হিসেবে তুলে ধরেছেন। ভারতের কিছু সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে, তিস্তা সমস্যার সমাধানে তিনি যে আন্তরিকভাবে আগ্রহী এই প্রস্তাবই তার প্রমাণ। তিস্তায় যেখানে জলই নেই, সেখানে তিনি ওই অঞ্চলের যে সব নদীতে পানি উদ্বৃত্ত বলে ধরা হয় (ওয়াটার সারপ্লাস) সেখান থেকে বাংলাদেশকে পানি দিতে চেয়েছেন, এটা একটা দারুণ ভাবনা বলেও তারা দাবি করেছেন।
আমি মনে করি, মমতা ব্যানার্জির এই প্রস্তাবে বাংলাদেশের উৎফুল্ল হওয়ার বিন্দুমাত্র কারণ নেই। মূল তিস্তা চুক্তি নিয়ে তিনি কোনও কথা বলেননি, শুধু বলেছেন- তিস্তায় পানি বাড়ানোর কথা। কিন্তু কেন সে কথায় আস্থা রাখা সম্ভব নয়, সে প্রসঙ্গে আসছি।
এক.

সেই ২০১১'র সেপ্টেম্বর থেকে তিস্তা চুক্তিতে নানাভাবে বাধা দিয়ে আসছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। যে চুক্তির ড্রাফট পর্যন্ত তৈরি হয়ে গিয়েছিল, সেটা শুধু তার বাধাতেই মুলতবি করে দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তারপর গত ছ'বছরে ‘আমার ওপর ছেড়ে দিন, তিস্তার ব্যাপারটা আমি দেখছি’ কিংবা ‘বাংলাদেশকে তো আমিও ভালোবাসি, পানি দিতে চাই’ টাইপের কথাবার্তা একনাগাড়ে বলে গেছেন – কিন্তু চুক্তি সই করার ব্যাপারে এক ধাপও আগাননি।

দুই.

আজ যে তোরসা-ধরলা থেকে পানি এনে তিস্তা অববাহিকায় প্রবাহ বাড়ানোর কথা তিনি বলছেন, সেটাও কিন্তু নতুন কোনও প্রস্তাব নয়। ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট এই বাংলা ট্রিবিউনেই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মানস-সংকোশের মতো নদীগুলো থেকে বাড়তি জল তিস্তায় এনে ফেলতে পারলে তিনি যে তিস্তা চুক্তিতে রাজি, মমতা সে কথা কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছেন।

কিন্তু তিনি কি আদৌ সে প্রস্তাব সিরিয়াসলি দিয়েছিলেন? না কি সেটা শুধু কথার কথা ছিল? সিরিয়াস হলে কেন তিনি সে প্রস্তাব নিয়ে গত দু'বছরে এক পা-ও আগালেন না? শেয়ালের কুমীরছানা দেখানোর মতো কেন তাকে এখন বারবার পশ্চিমের নদীগুলোর জল তিস্তায় আনার কথা বলতে হচ্ছে, যদিও বাস্তবে সে কাজ সামান্যও আগায়নি!

তিন.

শনিবারই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাশে নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন- তার ও হাসিনা সরকারের আমলেই তিস্তার সমাধান হয়ে যাবে, যার অর্থ দাঁড়ায় ২০১৮ সালের মধ্যেই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে। এটা মমতা ব্যানার্জিকেও কার্যত এক ধরনের আলটিমেটাম – এবং ভারত সরকার বড়জোর আর বছর দেড়েক দেখবে, তারপর প্রয়োজনে তার আপত্তি অগ্রাহ্য করেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পথে এগোবে, এটা আন্দাজ করেই কি মমতা তার বিকল্প প্রস্তাবের তাসটা খেললেন?

কারণ এটা ভালো করেই জানা- অন্য নদীর জল এভাবে নিয়ে আসাটা খুব জটিল প্রক্রিয়া, তাতে অনেক সময় লাগবে। আর চুক্তির ২০১৮'র ডেডলাইন সে ক্ষেত্রে কোনও মতেই বজায় রাখা সম্ভব নয়। ফলে এমনটা ভাবার সঙ্গত কারণ আছে। তাই বাংলাদেশকে ভরসা রাখতে হবে নরেন্দ্র মোদির ওপরেই, কিছুতেই মমতা ব্যানার্জির ওপর নয়।

চার.

কূটনৈতিক প্রটোকল অনুযায়ী ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের প্রধানের সঙ্গে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের কোনও সুযোগ নেই। তারপরও যেহেতু আমরা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা একই ভাষায় কথা বলি, অনেক ক্ষেত্রে একই আবেগের শরিক - তাই গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা বারবার মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করেছেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে তার যে আশঙ্কা সেটা দূর করার জন্যও সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি থেকে শুরু করে বর্তমান হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি বারবার কলকাতায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছেন, বাংলাদেশ সরকার তাদের হাত দিয়ে ইলিশ বা জামদানির উপহারও পাঠিয়েছেন। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি কি আদৌ পেরেছেন সেই আন্তরিকতা, সৌজন্য ও ষোলো কোটি মানুষের আকুতির প্রতিদান দিতে?

গত কয়েক বছর ধরেই সে প্রশ্নের একটাই উত্তর ছিল- 'না'। আর এবার শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে মমতা ব্যানার্জি শহরে এসেছেন ঠিকই, কিন্তু সেই উত্তর মোটেই পাল্টায়নি বলে আমার দৃঢ় ধারণা।

এবার দিল্লিতে এসে আমার এই ধারণা আরও জোরদার হলো- তিস্তা চুক্তির প্রশ্নে বাংলাদেশের মমতা ব্যানার্জির ওপর আস্থা রাখার কোনও কারণ নেই। দেয়ালের লেখা খুব স্পষ্ট, তিনি অন্তত এই চুক্তির ব্যাপারে বাংলাদেশকে কোনও সাহায্য করবেন না!

লেখক: সম্পাদক, বাংলা ট্রিবিউন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ