X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেঁচে থাকাটা প্রমাণ করতে হয়

হারুন উর রশীদ
১৪ মে ২০১৭, ১২:২২আপডেট : ১৪ মে ২০১৭, ১২:২৪

হারুন উর রশীদ কোথায় যেন পড়েছিলাম, ‘মানুষ একই নদীতে দু’বার গোসল করতে পারে না।’ সেই ছেলেবেলায় পড়া কথাটি উপলব্ধি করতে পারিনি তখন। কথাটির মানেও বুঝতে পারিনি। পরে যখন বয়স হয়েছে, হয়তো বুঝতে পেরেছি।
অর্থনীতি পড়ার সময় দেখেছি, পরিবর্তন দেখানো হয় রেখার ঊর্ধ্ব বা অধোগতি দিয়ে এবং সেটা মসৃণ। এটা কীভাবে সম্ভব? জবাবে আমাদের স্যার অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, ‘এই পরিবর্তনটা এত সূক্ষ্ম এবং প্রতিনিয়ত যে, তা মসৃণ রেখার সৃষ্টি করে।’
প্রশ্ন হলো- প্রতিদিনের পরিবর্তন কি চোখে দেখা যায়? কখনও দেখা যায়, আবার কখনও দেখা যায় না। তবে এক সময় পরিবর্তনটা দৃশ্যমান হবেই। কারণ পরিবর্তনটাই কোনোকিছুকে প্রকৃত অর্থে বাঁচিয়ে রাখে।
নদীতে স্রোত না থাকলে সে নদী মরে যায়। গতি হারিয়ে, প্রবাহ হারিয়ে সে নদী আর নদী থাকে না। নদীর ধর্মই বয়ে চলা। তাই বহমান একই নদীতে কেউ দু’বার গোসল করতে পারে না।
কেউ স্রোতে একবার ডুব দেওয়ার পর দ্বিতীয়বার ডুব দিতে গিয়ে একই স্রোতে পাবে না। নতুন স্রোতে ডুব দেবে। স্রোতেই তো নদী। তাই নদী প্রতিমুহূর্তেই বদলায়। পদ্মা- মেঘনার নাম বদলায় না, কিন্তু নদী বদলায়। এ এক অভাবনীয় নতুনের খেলা।
প্রবৃদ্ধি শব্দটি কোনও সাধারণ শব্দ নয়। এর বহুমাত্রিকতা আছে। একই সরলরেখায় অবস্থান করলে আমরা বলতে পারি যে, পুরনো অবস্থান ধরে রাখা হয়েছে। যদি আমরা প্রবৃদ্ধি বলতে চাই, তাহলে সেটাকে নতুন আরেকটি অবস্থান হতে হবে। আর সেটা অবশ্যই আগেরটির চেয়ে উন্নত।
জন্মের পরই শিশু বড় হতে থাকে। আর এই বৃদ্ধি কোষে কোষে। যখন জীবনের একটি পর্যায়ে এই বৃদ্ধি থেমে যায়, নতুন কোষের চেয়ে মরে যাওয়া কোষের সংখ্যা বাড়তে থাকে, তখনই আমরা বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাই। আর একদিন মরেও যাই।
মাঝে মাঝে হতাশা আমাকে গ্রাস করে। এটাকে ঠিক হতাশা বলা যাবে কিনা, তাও আমি বুঝতে পারি না। তবে বুঝতে পারি, এক ধরনের অতৃপ্তি বা একঘেয়েমি আমাকে পীড়িত করে। মনে হয় একই কাজ করছি প্রতিদিন, একই কথা বলছি, একই চিন্তায় আবর্তিত হচ্ছি। এর মানে কি প্রতিদিন একটু একটু করে আমি মরে যাচ্ছি?

সামনে লক্ষ্য কী? প্রশ্ন করি নিজেকে। কখনও জবাব মেলে , কখনও মেলে না।
ব্যক্তির লক্ষ্যের সঙ্গে দলের লক্ষ্য মিলতে পারে, আবার নাও পারে। মিলে গেলে অগ্রগতি হয় দ্রুত। না মিললে ওই ব্যক্তি দলকে পেছনে টানার জন্য দায়ী হতে পারেন। তবে ব্যক্তি কি আর দলের সাথে সবসময় পেরে ওঠেন? পারেন না। তখন নিজেই ছিটকে পড়েন। আবার ব্যক্তির চিন্তা ও কাজ যদি আলো ছড়াতে পারে, তাহলে পুরো দলই সেদিকে যাত্রা শুরু করতে পারে। এটা আমার মনে হয় বেঁচে থাকা। আর প্রতিদিন নতুন করে বাঁচতে পারাটাই দরকার।
আমরা যারা চাকরি করি বা চাকরিকেই জীবনের শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে মনে করি, তাদের আসলে পরির্তন আনার ক্ষমতা কম। আমরা যেটা করি তা হলো- যাদের চাকরি করি তাদের ইচ্ছা বা স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করি। আর সেটা যদি সফল হয় তাহলে সেই সফল কনভেয়ার বেল্টের একটি ছোট অংশ ছাড়া আর কিছুই নই আমরা। এটা এমন যে, বেল্টের কোনও একটি অংশ পাল্টে দিলেও ফলাফলে তেমন কোনও পরিবর্তন আসবে না।
কিন্তু বেঁচে আছি, এটা প্রমাণ করতেও মানুষকে কাজ করতে হয়। সেটা নিজের চিন্তায় অথবা অন্যের চিন্তা বাস্তবায়নে। আর এর মধ্যে যারা আরেকটু উদ্যোগী, আরেকটু চিন্তাশীল তারা এই কাজের মধ্যেই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটাতে পারেন।

সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা যেখানে ব্যক্তি তার নিজের কাজের মধ্য দিয়েই নিজের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে পারেন। একজন সাংবাদিক একটি সাধারণ পরিকল্পনার অংশ হয়েও হয়ে উঠতে পারেন অসাধারণ। চাকরি করেও হয়ে উঠতে পারেন একজন পেশাগত স্বাধীন মানুষ। এই স্বাধীনতা আমি ভালোবাসি। যেখানে স্বাধীনভাবে জন্ম নেওয়ার পর থেকেই মানুষ শৃঙ্খলিত হতে থাকে, সেখানে পরাধীনতার মাঝেও এই স্বাধীনতাটুকু কম কী?

লেখক: সাংবাদিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে  ইসরায়েল?
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে ইসরায়েল?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ