X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

একটি খারাপ দৃষ্টান্ত

নাদীম কাদির
২২ মে ২০১৭, ১৬:৩৮আপডেট : ২২ মে ২০১৭, ১৬:৪০

নাদীম কাদির বিখ্যাত মানুষেরা ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তবে তারা ব্যর্থ হলে তা লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন রাজনীতিবিদ হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে কিছু মিডিয়ায় যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো মোটেও তাদের জন্য ইতিবাচক কিছু নয়। দুইজনের একজন দেশের ভাবমূর্তিকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। অপরজন ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অন্য একটি স্বাধীন দেশে হস্তক্ষেপের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। 
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শক্তিধর দেশ হতে পারে। হতে পারে, সেদিক থেকে অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিমত্তায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে পিছিয়ে আছে। তা সত্ত্বেও কিন্তু আমরা একটি গর্বিত জাতি। আমাদের ভাষা, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য আমরা লড়াই করেছি। বাংলাদেশকে হেয় প্রতিপন্ন করার অধিকার কারও নেই।
উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া নথিকে উদ্ধৃত করে সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সারকা একটি খবর প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হেরে যাওয়া হিলারি ক্লিনটন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে ড. ইউনূসের ব্যাপারে চাপ দিতেন। মেয়াদ শেষের পরও অবৈধভাবে স্বপদে বহাল থাকার অভিযোগে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ইউনূষকে পদচ্যুত করার পরই এ চাপ দেওয়া হয়। 
সারকা বলছে, হিলারি ক্লিনটন ড. ইউনূস থেকে অনুদান নিয়েছিলেন। সারকার তথ্য অনুযায়ী, ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ-এর জন্য হিলারি এক লাখ ডলার থেকে আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত অনুদান নিয়েছিলেন। তবে, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, অনুদানের পরিমাণ ২৫ হাজার ডলার থেকে ৫০ হাজার ডলারের মাঝামাঝি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিধি ভঙ্গ করে ড. ইউনূসের পক্ষে থাকার জন্য চাপ দিতে ফোন করেছিলেন হিলারি। হিলারি অনুরোধ করেছিলেন, যেন ইউনূসকে আবারও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান পদে বহাল করা হয়, যদিও আইনগতভাবে তা সম্ভব নয়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ইউনূসকে স্বপদে বহাল করার সিদ্ধান্ত নিলে এ নিয়ে বিচারিক তদন্তের দাবি ওঠার আশঙ্কা ছিল। 
এখানেই থামেননি হিলারি। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, তাকে হুমকি দেওয়া হতো। বলা হতো, ‘তোমার দেশ, তোমার মা, তোমার পরিবারের বিরুদ্ধে অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কে জানে, তুমি যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে আছো তখন আইআরএস তোমাকে অডিট করতে পারে।’ রীতিমত একটি মাফিয়া হুমকি বলা চলে!
এটি সেই সময়ের ঘটনা, অধ্যাপক ইউনূস যখন সহায়তা চেয়ে হিলারিকে মেইল করেছিলেন। উইকিলিকসের ফাঁসকৃত নথিতে দেখা যায়, ইউনূস লিখেছেন, ‘দয়া করে দেখুন, বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ইস্যুটি উত্থাপন যায় কিনা।’
প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি এম. নজরুল ইসলাম সারকাকে বলেন:

‘সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ২০১১ সালের মার্চে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে যেন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে বাদ না দেওয়া হয় তার ওপর জোর দিয়েছিলেন তিনি। হিলারির অনুরোধের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছিলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়ম কানুনের কথা। বলেছিলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের বিধি-বিধান অনুযায়ী, বয়স ৬০ বছর পার হয়ে যাওয়ার পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে থাকতে পারেন না। ড. ইউনূস তার বয়স ৬০ বছর পার হয়ে যাওয়ার পর আরও ১০ বছর এ পদে বহাল ছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের বিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ এবং ব্যাংকিং আইনে পরিচালিত। ১০ বছর ধরে ড. ইউনূস অবৈধভাবে বেতন ও সুবিধা ভাতা নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে আরও বলেছেন যে, ড. ইউনূসকে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পদচ্যুত করা কিংবা স্বপদে পুনর্বহাল করার ক্ষেত্রে তার কিছু করার নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছিলেন ড. ইউনূস ও তার সহযোগীরা। দুই মামলার ক্ষেত্রেই রায় ড. ইউনূসের বিপক্ষে গেছে এবং দেশের শীর্ষ আদালতই তাকে পদচ্যুত করেছেন।’

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নোবেলজয়ী ড. ইউনূস এবং হিলারি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা লজ্জার। কেবল নোবেলজয়ী হিসেবেই নয়, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেও অধ্যাপক ইউনূস নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তার দেশকে ও প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করতে পারেন না। যেহেতু এটি আইনি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত ব্যাপার সেক্ষেত্রে কেন তিনি আইন ভঙ্গ করেছেন প্রথমে সে ব্যাখ্যা ইউনূসকে দিতে হবে। সরকার তাকে হয়রানি করছে বলে ড. ইউনূস যা প্রচার করতে চেয়েছেন সেখান থেকেও তাকে সরে আসতে হবে।

হিলারি যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে যেতেন তবে কী যে হতো! হয়তো আমরা দেখতাম, বন্ধু ড. ইউনূসকে উদ্ধারে মার্কিন নৌবহর পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি!

যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তখন বিশ্বের জানা উচিত, অপকর্মের কাছে তিনি নতি স্বীকার করেন না।   

লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ