X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সব কিছু কি প্রধানমন্ত্রীকেই করতে হবে?

শান্তনু চৌধুরী
৩১ জুলাই ২০১৭, ১৬:১২আপডেট : ৩১ জুলাই ২০১৭, ১৬:৪৭

 

শান্তনু চৌধুরী সম্প্রতি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত ‘‌ঢাকার অর্থনৈতিক ভবিষ্যত: সমস্যা ও সম্ভাবনা’শীর্ষক সংলাপে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্টিন রামা বলেছেন, ‘‌আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অনেক সংস্থার অংশীদারিত্বের কারণে ঢাকা শহরের অবকাঠামো ও সেবা খাতের উন্নয়ন বিঘ্নিত হচ্ছে’। এ বক্তব্য থেকে ধরে নেওয়া যায়, বাংলাদেশে উন্নয়ন বা যেকোনও কাজ দ্রুত না হওয়ার মূল কারণ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। সহজ কথায় বলতে গেলে, বিশেষভাবে সরকারি কোনও কাজই সহজভাবে হওয়ার নয়। সম্প্রতি এ ধরনের কিছু ঘটনার উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে, কোনও একটি ঘটনা ঘটলো, সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশপাশি মূল ধারার গণমাধ্যমে আলোচনায় আসার পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। এক্ষেত্রেও অনেক সমস্যা থেকে যায়। সংশ্লিষ্ট আমলা থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা জানলে হবে না। তারা হয়তো বিষয়টি গা-ই করলেন না। কিন্তু যে-ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে এলো, তিনি বিচক্ষণতার সঙ্গে দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দিলেন, সবার মধ্যে শুরু হয়ে গেলো দৌড়ঝাঁপ। সমাধানও হয়ে গেলো এক নিমিষে।
সম্প্রতি রাজধানীর জলাবদ্ধতার কথায় বলি। এক একটি সেবা সংস্থা পরস্পরকে দোষারোপ করেই চলেছে এবং সেটি এখনও অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু জনগণের দুর্ভোগ কমানোর কোনও লক্ষণই নেই। এর মধ্যে হঠাৎ করেই ঢাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে বললেন, আগামী বছর থেকে ঢাকায় কোনও ধরনের জলাবদ্ধতা হবে না। একইসঙ্গে জানালেন, ওয়াসাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তিন ঘণ্টার মধ্যে পানি নামানোর ব্যবস্থা করতে। খুবই ভালো কথা! আগামী বছর তো অনেক দূর। তাহলে এতদিন হলো না কেন! পরে জানা গেলো আসল কারণ, ঢাকা সিটির দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন জলাবদ্ধতা নিরসনে ওয়াসার অসহযোগিতা এবং খাল খননে প্রভাবশালীদের অসহযোগিতার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানান। তারা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এরপর স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে এই দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। এই কারণে হঠাৎ সরব স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। এছাড়া অবশ্য আরও একটি কারণ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশ দিয়েছেন আগামী বছর এই চিত্র তিনি দেখতে চান না। এখানে অবশ্য একটি যোগসূত্র রয়েছে। আগামী বছর বর্ষার পরপরই জাতীয় নির্বাচন। তাই জলাবদ্ধতা ও যানজটের সমাধান করতে না পারলে এমপিদের একটু বেকায়দায় পড়তে হবে বৈকি! তার মানে প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ না করলে এই সমস্যার সমাধান হতো বলে মনে হয় না।
এবার আরও কিছু ঘটনার কথা বলি যেগুলো হয়তো প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ না থাকলে হয়তো অন্যরকম হতো। যেমন আবুল বাজানদারের চিকিৎসা শুরু হতো না প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ না থাকলে। বিরল রোগ আক্রান্ত সাতক্ষীরার মুক্তামনির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রয়োজনে তাকে বিদেশে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। রাজধানীর শাহবাগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় আহত তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অসুস্থ পরিচালক আজিজুর রহমানের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগৈরঝাড়ার আলোচিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিক সালমনও রেহাই পেতেন না, যদি না সেখানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ থাকতো। তিনি বিষয়টিতে বিকৃতি দেখেননি বলেই মামলার বাদী সাজু বহিষ্কার হন। বদলি করা হয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে। বাজেটের সময় নতুন ভ্যাট আইন স্থগিত করা এবং আবগারি শুল্ক আরোপ না করার সিদ্ধান্তও হয় প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধের পর। এর আগে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ মূল ধারার সংবাদপত্র সোচ্চার হলেও অর্থমন্ত্রী অনড় ছিলেন ‘এক চুলও’ না সরার ব্যাপারে। এমন আরও অনেক বিষয় আছে, যেসব উদাহরণ হিসেবে দিলে হয়তো শব্দ সংখ্যায় বাড়বে। এমন অনেক বিষয়ও রয়েছে, যা অগোচরেই রয়ে যাচ্ছে আমাদের। হয়তো প্রধানমন্ত্রী করে যাচ্ছেন দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে।

দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সবকিছু দেখভাল করবেন, তার নিজের আগ্রহ থাকতে পারে সেটা খারাপ কিছু নয়। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী ছাড়া দেশে মন্ত্রী ৩১জন, মন্ত্রী পদমর্যাদার বিশেষদূত এক জন, উপদেষ্টা ৫জন, প্রতিমন্ত্রী ১৭ জন এবং উপমন্ত্রী রয়েছেন দুই জন। ৫৬ জনের এই মন্ত্রিসভার নিশ্চয় নির্দিষ্ট বিভাগের নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে। তাহলে নিজ নিজ দফতরের কাজগুলো যদি সবাই সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা নিয়ে করেন তাহলে তো আর যে কোনও বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে হাত বাড়াতে হয় না। পুরো দেশের ভার যেহেতু ওনার ওপর তাহলে ওনাকে সহযোগিতা করার জন্য যারা রয়েছেন তারা যদি সঠিক সহযোগিতাটা করেন, তাহলে কারও বিদেশ যাওয়া, চিকিৎসা খরচ বা কোনও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এমনও কথিত রয়েছে, কোনও অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কানে গেলে তার সুষ্ঠু সমাধান হতে বাধ্য। কিন্তু আমার কথা হলো, সে অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যাবেই বা কেন। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো কেন এই সমস্যার সমাধান করতে পারে না। এই ক্ষেত্রে কি আমলাতন্ত্র বড় বাধা, নাকি মানসিকতাই বড় বাধা?

লেখক: সাংবাদিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
পোশাকশ্রমিককে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
পোশাকশ্রমিককে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ