X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

হঠাৎ পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ স্থগিত হলো কেন?

নুরুজ্জামান লাবু
১৫ জানুয়ারি ২০১৮, ২২:১৯আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:০৮

 

হঠাৎ পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ স্থগিত হলো কেন? নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরুর দুই দিন আগে ১০ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ-প্রক্রিয়া  হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে নানা আলোচনা। কিন্তু ঠিক কী কারণে নিয়োগ-প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে, তা নিয়ে সরাসরি কেউ কিছু বলতে রাজি হননি। পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল আহসান বলেন, ‘অনিবার্য কারণে এই নিয়োগ-প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে।’

গত বছরের ২১ ডিসেম্বর ১০ হাজার ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুলিশ সদর দফতর। এরমধ্যে সাড়ে ৮ হাজার পুরুষ ও দেড় হাজার নারী সদস্যকে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। ১৬ জানুয়ারি থেকে ২৯  জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৪ জেলায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। রবিবার জরুরি ভিত্তিতে ৬৪ জেলার এসপিকে নিয়োগ-প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার কথা জানিয়ে বার্তা পাঠানো হয়।

পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রতিবছর ব্যপক দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়। বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে এমপি-মন্ত্রীরা পুলিশ সুপারদের কাছে তালিকা ধরিয়ে দেন। এছাড়া পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেন। এ কারণে চলতি বছর পুলিশ সপ্তাহে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ-প্রক্রিয়াটি কেন্দ্রীয়ভাবে পুলিশ সদর দফতর থেকে পরিচালনা করা যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপার পর্যায়ের কর্মকর্তারা ভিন্ন মত দেন। এ নিয়ে টানাপড়েনের কারণেই দশ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।

তবে পুলিশের অন্য একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনের বছর হিসেবে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পরপরই এবার মন্ত্রী-এমপি এবং রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশ ছিল অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক বেশি। এ নিয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। এসব তথ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কানেও গিয়েছে। এ কারণে রবিবার আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণে আয়োজিত সভায় তিনি বলেন, ‘যে নেতা পুলিশের কনস্টেবলের চাকরির ভাগাভাগিতে টাকার বিনিময়ে অংশ নেন, গরিব মানুষ থেকে টাকা আদায় করেন, সেই নেতা আওয়ামী লীগের প্রয়োজন নেই।’ 

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে, কনস্টেবল নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় জেলার পুলিশ সুপারদের মাধ্যমে। সারাদেশের ৬৪ জেলায় যারা পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের অনেকেই দীর্ঘ দিন ধরে কর্মরত রয়েছেন। চলতি মাসেই পুলিশ মহাপরিদর্শকের চাকরির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। নতুন আইজিপি এসে পুলিশে ব্যাপক রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে একটি পক্ষ চাচ্ছে, নতুন আইজিপির সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজটি সম্পন্ন হোক। ওই সূত্রের দাবি, নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা গিয়েছে।

সূত্র বলছে, একজন কনস্টেবল নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলা ভেদে ৭ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়ে থাকে। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বাণিজ্য হয়ে থাকে। রাজনৈতিক নেতা ও মন্ত্রী-এমপিরা ডিমান্ড অর্ডার বা ডিও লেটার দিয়ে তদবির করে থাকেন। তারা প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকেই ৭ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করেন। অনেক সময় পুলিশ সদর দফতর বা পুলিশ সুপারদের কেউ কেউ নিজেরাও নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আগের পুলিশিং এর চাইতে বর্তমান পুলিশিং অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতিটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। পুলিশে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বন্ধ করতে না পারলে যারা ৮-১০ লাখ টাকা দিয়ে পুলিশে যোগদান করবে তাদের প্রধান লক্ষ্যই থাকতে যত দ্রুত সময়ে সেই টাকা তোলা যায়। দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া পুলিশ সদস্যরা সেবা দেওয়ার চাইতে অর্থ আয়ের দিকে ঝুঁকে পড়বে বেশি।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘৯০ দশকের প্রথম দিকে জেলায় জেলায় পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য পুলিশ সদর দফতর থেকে একজন করে এআইজিকে নিয়োগ কমিটির প্রধান করা হতো। ফলে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা তাকে চিনতো না। এজন্য নিজেদের প্রার্থী নিয়োগের জন্য জোর তদবির করার সুযোগও পেতো না।’ সেই প্রক্রিয়ায় ফিরে গেলেও নিয়োগে কিছুটা স্বচ্ছতা আসতে পারে বলেও তিনি জানান।

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা