X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভাষার মাসে কিছু কথা

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৩:৪৭আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৬:৪৩

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান আমি যখন লিখি– ‘শুধু/ বছর পেরিয়ে একুশের দিনে নয়, সারাটি বছর- বুকের ভিতর শহীদ মিনার বয়ে যাই আমি/ নিজেই কখন বরকত আর রফিক সালাম হয়ে যাই।’
তখন আন্তরিকভাবে অনুভব করি বাংলা ভাষা নিয়ে অহংকার মাত্র এক দিনের জন্যে নয়। এমন কী ভাষার মাস হিসেবে চিহ্নিত ফেব্রুয়ারি মাসটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি সারা জীবন ধরে– প্রতিটি দিন, মাস, প্রতিটি বছর পেরিয়ে বছরে বছরে প্রতি ক্ষণে অনুভবের এবং কার্যকর করার বিষয়। প্রত্যাশা করতে ভালো লাগে, আমার প্রাণের ভাষা বাংলার প্রমিত রূপ এমন সুসমভাবে বিস্তার লাভ করুক, যা এদেশের যে কোনও এলাকার– এমনকি প্রান্তিক গ্রামের মানুষও আপন মনে করে। বলতে চেষ্টা করে। অন্তত শুনলেই বুঝতে পারে, কী বলা হলো। এর জন্যে প্রয়োজন হলে সারা দেশের সকল আঞ্চলিক ভাষা থেকে শ্রবণশোভন শব্দ প্রমিত বাংলায় সংযুক্ত করে তার প্রমিত উচ্চারণ নির্ধারণ করা হোক।
মানুষমাত্রই জন্ম নিয়েই পারিপার্শ্বিকতা থেকে শ্রুত শব্দকেই তার ভাষা হিসেবে প্রাকৃতিকভাবে গ্রহণ করে নেয়। প্রমিত বাংলা তাকে স্কুল-কলেজে এসে শিখতে হয়। প্রমিত বাংলার মধ্যে সে যত বেশি তার চেনা শব্দ খুঁজে পাবে, শেখাটা তার জন্যে সহজ হবে। ভাষাটাও সমস্ত অঞ্চলের জন্যে কথ্যভাষা হয়ে উঠবে। বর্তমান সময়ে, এমন বহু অঞ্চল আছে যেখানকার ভাষা বা শব্দ অন্য অঞ্চলের মানুষ বুঝতেই পারে না। এর ফলেই অঞ্চলে অঞ্চলে বিভেদ সৃষ্টি হয় এবং জন্ম হয় সংকীর্ণ আঞ্চলিকতার।

দুঃখের বিষয়, এই চেষ্টায় এগিয়ে না এসে আমরা অনেকেই একধরনের বিকৃত উচ্চারণে কথা বলার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। যা প্রমিত তো নয়ই, এমনকি কোনও অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষাও নয়। বিশেষ করে টেলিনাটকে এর প্রাদুর্ভাব প্রবল হয়ে উঠছে। বাংলায় ‘স’ ‘শ’ ‘ষ’ এর উচ্চারণ ‘শ’-এর মতোই। বিদেশি, বিশেষ করে আরবি-ফার্সি-ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রে এবং বাংলা শব্দের মধ্যে বা শেষে ‘ত’ ‘থ’ ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত হলেই মাত্র ‘স’ ইংরেজি S-এর মতো উচ্চারিত হয়। যেমন- বিদেশি শব্দ, মুসলিম, এস্তেমা, ইনসান, স্কুল, স্টেশন, রেজিস্ট্রার, পার্সেল ইত্যাদি। বাংলা শব্দ, অস্ত, প্রস্থ, প্রস্তাব ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে ‘শ’ ও ইংরেজি S-এর মতো উচ্চারিত হয়। যেমন– শ্রান্ত, বিশ্রাম, শ্রুতি ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে ‘রফলা’ যুক্ত হলে। উদাহরণ অনেক দেওয়া যেত, তা লেখার কলেবর বৃদ্ধি করতো মাত্র।

কিন্তু ‘বুঝেছি’কে ‘বুzsi’, কিংবা ‘বুঝেছিস’-কে ‘বুzছোs’ বা ‘বুzsos’কে প্রমিত উচ্চারণ হিসেবে চালিয়ে দেওয়াটা অতি অপকর্ম ছাড়া আর কিছুই নয়।  ‘তুমিই যদি যাবে তো আমি এইখানে বইসা কী করতেsi’, এমন উচ্চারণের বাক্য সন্দেহাতীত ভাবে বাংলা ভাষাকে পাকে ফেলার ষড়যন্ত্র। বলা যায়, একশ্রেণির নব্য আঁতেলের অভব্যতা।

আর এক শ্রেণি আছেন যারা ইংরেজি শব্দের মিশ্রণ না ঘটিয়ে কথা বলতেই পারেন না। এখন আবার কারও কারও কথায় হিন্দিও চলে আসছে, বাংলা শব্দের পরিবর্তে। এ দুর্দশা পশ্চিম বঙ্গের মানুষের হতেই পারে। কারণ, হিন্দি তাদের রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু এই ইংরেজি-হিন্দি-বাংলার শঙ্কর দশা তো আমাদের হতে পারে না। আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ, রাষ্ট্রভাষাও বাংলা। আমরা কেন স্পষ্ট বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবো না?

এই না পারাটা কেউ কেউ আভিজাত্যের প্রকাশ বলে মনে করলেও, প্রকৃতপক্ষে এটা নিম্ন-শ্রেণির দীনতা। এটা বিশেষভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ইংরেজি মাধ্যমে পড়া তরুণদের মধ্যে। অনেক অভিভাবক আবার, সন্তানের এই বাংলায় কথা বলতে না পারাটা, অথবা বাংলা বললেও ‘র’ ‘ড়’-এর গোলমাল করাকে গর্বের চোখে দেখেন। এটা আগামী প্রজন্মের জন্যে মারাত্মক আত্মঘাতী হয়ে উঠবে। আমি এটা বলছি না যে, ইংরেজি শিখবে না। কিন্তু ইংরেজি শিখতে গিয়ে বাংলা ভুলে গেলে বা বাংলা বিকৃত ভাবে উচ্চারণ করলে তা অবশ্যই সচেতনভাবে নিরস্ত করা উচিত।

আমরা তো সেই জাতি যারা বাংলা ভাষার জন্যে সংগ্রাম করেছি, প্রাণ দিয়েছি। এই ভাষা যার অহংকার নয়, সে তো বাঙালি নামের কলঙ্ক।

লেখক: কবি ও কলামিস্ট

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ