X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রিভুবন

দাউদ হায়দার
১৬ মার্চ ২০১৮, ১৩:২৪আপডেট : ৩১ মার্চ ২০১৮, ১৪:০১

দাউদ হায়দার চলতি বছরের জানুয়ারির শেষে আন্তর্জাতিক বেসরকারি অ্যাভিয়েশন সংস্থা সুখবর জানিয়েছিল, ‘২০১৭ সালে গোটা বিশ্বে বেসরকারি বিমান দুর্ঘটনা বিগত বছরগুলোর তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। খুবই সামান্য। যদিও অনেক দেশে (এশিয়া-আফ্রিকা) অ্যাভিয়েশন ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ (বিশেষত গ্রাউন্ড লেভেলে)।  কর্তৃপক্ষের গাফলতি, অদক্ষ পরিচালনা, রাজনীতি, দুর্নীতি বিদ্যমান।’

বাংলাদেশের বেসরকারি অ্যাভিয়েশন নিয়েও নানা অভিযোগ, দুর্নীতি, অদক্ষতার চিত্রকাহিনি পত্রপত্রিকায় প্রায়শ প্রকাশিত হয়। লেখালেখিও বিস্তর। টিআইবি (ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) বহুবার উল্লেখ করেছে, জানিয়েছে। রাজনৈতিক বা স্বজনপোষণের কারণেই হোক, সরকারে হেলদোল নেই। টনক নড়েনি। মাঝে-মাঝে গা-ঝাড়া দেয় বটে, হম্বিতম্বিও করে, ওই পর্যন্তই। আখেরে কিছুই হয় না। কেন হয় না, কারণ কী, এই নিয়ে বিশদ তত্ত্ব-তালাশও নেই। যারা অভিজ্ঞ (অ্যাভিয়েশনে), ভেতর মহলের খোঁজ রাখেন, দাবি তুলেছেন অ্যাভিয়েশনের নোংরামি ঝেঁটিয়ে বিদেয় করার, যেমন বৈমানিক আলমগীর সাত্তার, তার বহু লেখায়, কিন্তু পাত্তাই দেয়নি অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। এমনকি সরকারও। আলমগীর সাত্তার হাল ছেড়ে দিয়েছেন, এই নিয়ে লেখালেখি বৃথা, বলেছেন স্পষ্ট।‘ গ্রাউন্ড লেভেলে দুর্ঘটনা অনেক সময়ই অ্যাভিয়েশনের ত্রুটিপূর্ণ অদক্ষতায় হতে পারে’-ওর একটি লেখায় এরকম পড়েছি (হুবহু উদ্ধৃতি মনে পড়ছে না। )।

আলমগীর সাত্তার ঝানু বৈমানিক। দক্ষতা প্রশ্নাতীত। পাকিস্তান আমল থেকে বৈমানিক। পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানে বিমান চালিয়েছেন। ডাকোটা চালিয়েছেন। বোয়িং চালিয়েছেন। দেশে-বিদেশে চালিয়েছেন। জানেন আকাশপথ (রুটস), উড্ডয়ন, অবতরণ। ঝক্কিঝামেলা। কন্ট্রোল বোর্ডের (বিমানের) নির্দেশাবলি, মান্যতা।

‘কখন সঠিক মান্য, ‘দক্ষতাই বৈমানিকের জানা দরকার’, অন্যথায় বিপদ।’ বলেছেন একটি লেখায়।

বৈমানিক সাত্তার কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে একবার যাননি, গিয়েছেন বহু-বহুবার, জানেন এই ত্রিভুবনে অবতরণ খুব সহজ, চটজলদি নয়। বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সব বৈমানিককেই (যারা ত্রিভুবনে অবতরণ করেন)। কারণ, চারদিকেই পাহাড়-পর্বত। সকাল-দুপুর-বিকেল-সন্ধ্যায় কখন যে আচমকা ঘন কুয়াশা, আচমকা মেঘের তাণ্ডব, হাওয়া বিশারদরাও বলতে অপারগ।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার ফুট উচ্চতায় ত্রিভুবন বিমানবন্দর। বোয়িং কিংবা এয়ারবাস ৩২ হাজার ফুট ওপর থেকে লক্ষ রাখে অবতরণের উচ্চতা, নিচতা। রাখতেই হয়। ধরা পড়ে রাডারে। ৯ মাইল দূর থেকে। কারণ, পাহাড়-পর্বতমালা। ত্রিভুবনে অটোম্যাটিক ল্যান্ডিং সিস্টেম নেই। সোজা, সরাসরি (উড়ে গিয়ে) অবতরণ করতে পারে না। পাহাড় অতিক্রমণের পরেই ট্রাই-অ্যাঙ্গেলে অবতরণ।

এসব তথ্যজ্ঞান বার্লিনে বাংলাদেশের স্থাপত্যকলাবিদ আবদুল্লাহ মোত্তালেবের ‘পাইলট ছেলের’ কাছ থেকে পাওয়া। ছেলে ‘সুইস এয়ারের’ পাইলট। মাসে ৮ বার কাঠমান্ডুতে যান (ওর নাম লিখতে নিষেধ করেছেন)। বলেন, ‘যত দক্ষ পাইলটই হই অবতরণের সময় কন্ট্রোল বোর্ডের নির্দেশ মানতেই হয়। না মানলে বিপদ। দুর্ঘটনা হতেই পারে।’

পৃথিবীতে ২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দর আছে। এশিয়ার কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর অন্যতম, প্রায়-প্রতিবছরই দুর্ঘটনায় কবলিত, এই তথ্য আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থার। ঝুঁকি সত্ত্বেও কাঠমান্ডু ব্যবসায়ী।

ত্রিভুবন বিমানবন্দরে তিনবার গিয়েছি। প্রথত, ১৯৭৭ সালে। কলকাতা দমদম এয়ারপোর্ট থেকে। ইন্ডিয়ান এয়ার লাইনসে। তার মানে, ‘ডমেস্টিক ফ্লাইট।’ ডমেস্টিকই বটে। পাসপোর্ট ছাড়া। পরিচয় ভারতীয়। যেতে, পাহাড় দেখি, অবতরণে পাহাড়ের ঝামেলা নেই। উড়ান নিচু, পাহাড় এড়িয়ে। দ্বিতীয় যাত্রা ১৯৮৩ সালে, মার্চের ২২ তারিখে। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসে। অবতরণের আগে বলা হলো, ‘ত্রিভুবন কুয়াশায় আচ্ছন্ন। প্লেন যাবে চট্টগ্রামে।’-মহাআনন্দ। চট্টগ্রাম দেখব।

চট্টগ্রামে ২৯ মিনিট প্লেনের অবতরণ। নামতে দেয়নি। আবার উড়াল।

তৃতীয়বার ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে যাত্রা। কলকাতায় যাওয়ার টিকিট পাইনি, কাঠমান্ডুর ‘ত্রিভুবন’ গন্তব্য। অতঃপর কলকাতার কানেকটিং ফ্লাইট, দশ ঘণ্টা পরে। ২০০৬ সালের কথা বলছি।

কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর আবার দেখলাম। ঘুরেফিরে। আগে যা ছিল, পরিবর্তন হয়নি খুব, যে-তিমিরে, সেই তিমিরেই। মৃত্যুদেবতা যম ওঁৎ পেতে আছে।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

/এমওএফ/আপ-এফএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৮ বিজিপি সদস্যকে
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৮ বিজিপি সদস্যকে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ