X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

আমাদের কি অধিকার নাই একটু স্বস্তিতে হাঁটার?

ফাহমিদা নবী
০৯ জুন ২০১৮, ১২:১৮আপডেট : ০৯ জুন ২০১৮, ১২:২০

ফাহমিদা নবী নন্দিত ধানমন্ডি এলাকা নামটি শুনলেই, ভাবলেই সেই সময়কার আবাসিক এলাকার স্বাদ মনে করিয়ে দেয়। যখন ধানমন্ডি এলাকা মানেই ছিল কী দারুণ রাস্তা, পথঘাট, জ্ঞানী-গুণী, উচ্চপদস্থ মানুষজন, সুন্দর বাড়িঘর, নীরবতাময় আলোকিত আবাসিক এলাকা।
কিন্তু হায়, বর্তমান ধানমন্ডি আবাসিক এলাকাটি কি আর সেই নান্দনিকতার ছোঁয়ায়, দারুণ দারুণ লোকের সমারোহে সেই পরিচ্ছন্ন ধানমন্ডি এলাকা হিসেবে এখন আর পরিচিত?
আগে ছোট-বড় সবাই হাঁটতো, হাসতো, কথা বলতো, চলতো ফিরতো আনন্দে।  সেই নীরব প্রশান্তির আনন্দ কোথায় গেলো?
এখন তো নয়তলা ভবনে কে কোথায় কোন ফ্লোরে থাকে তা-ই জানি না আমরা।
বিস্ময় আর বিস্ময়!
আজ হাঁটার ব্যাপার নিয়েই কথা বলি। কারণ, আজকাল হাঁটাহাঁটি করতে ডাক্তাররা বলেন, ভালো থাকা পূর্বশর্ত দিয়ে দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো ধানমন্ডিতে এতো লেক, লেকের পাশে হাঁটার পথ, কিন্তু হাঁটতে কি পারছি?
প্রাতভ্রমণ কিংবা সান্ধ্যকালীন পথঁহাটার সৌন্দর্য ধরে রাখতে কি পারছি?
একরকম নাক বন্ধ করে কোনও দিকে না তাকিয়ে, ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হাঁটতেই হয়। আর বাসায় ফিরে অসহ্য অসহ্য বলে হাহাকার করছি।  কেন এই বিরক্তি, অকারণ মেজাজ?
বাসায় ফিরে তো আনন্দিত হওয়ার কথা ছিল, এক কাপ চা খাওয়ার কথা ছিল।
তা হচ্ছে না কেন? কারণগুলো সবাই ভাবে, জানে, বিরক্ত হয়।  কিন্তু কেউ আর বলে না।  আজ আমি তাদের মনের কথাগুলো ব্যক্ত করছি।
যেদিকেই তাকাই শুধুই জটলা পাকানো ময়লার স্তূপে ভরা সারি সারি নতুন অ্যাপার্টমেন্টে ভরা এক সাধারণ সড়কের নাম এখন ধানমন্ডি।
সন্ধ্যায় হাঁটতে যাই, লেকের পাশ দিয়ে, দেখি দুর্গন্ধযুক্ত চটপটি, কাবাবের দোকান আর ময়লার মিশ্রণে এক অদ্ভুত বাজে দৃশ্যপট এবং ভাঙাপথ। রাস্তার চারপাশে থৈ থৈ করছে বাদামের খোসা আর পরিত্যক্ত কলার ছিল্কা। বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। ডুবে যায় ধানমন্ডি ২৭নং সড়ক। জ্যাম, দোকান আর ময়লা আর অসহায় নানান বয়সী মানুষের চোখ।
রোজার মাসের কথা বলি, এক ফোঁটা হাঁটার জায়গা নাই, যেখানে সেখানে ভ্যানে বিক্রি হচ্ছে পচা, বাসি তেলে ভাজা পিয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি।  উফ্ অসহ্য! ডাবের ভ্যানের পাশটা আরো খারাপ। ডাব খেয়ে, ডাবগুলো ছুড়ে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ই। যেন কোনও ব্যাপারই নয়।  যা ইচ্ছা তাই করার অধিকার কে যেন দিয়ে দিয়েছে।  সামাজিক দায়িত্বের এত অবহেলা?
চা, সিঙ্গাড়া এবং সিগারেট বিক্রয়ের জায়গাটা একদম রাস্তার কোনাটায়, যেখানে সদ্যনির্মিত ঝকঝকে বাড়িগুলোর ময়লার স্তূপ, সেখানে দাঁড়িয়ে রিকশাওয়ালা, পথচারী, সবজি বিক্রেতা, কলা, বনরুটিওয়ালা, বাড়ির ড্রাইভাররা সব একসঙ্গে আড্ডা দেয়, নির্বিকারভাবে। তারপাশেই ভিক্ষুকদের মশারি টানানো ঘরবাড়ি, তারাও ঝগড়া করছে, লেকে ময়লাগুলো ফেলছে, খাবারের প্যাকেটগুলো। ধানমন্ডি ৩২নং ব্রিজের দৃশ্যপট বলছি।
পথচারী হাঁটবে কী করে, হাঁটতে গিয়ে কেউ কেউ তো পড়েই যায়। সবাই নির্বিকার। কারো কোনও কথা নেই।
ধানমন্ডি ৮নং লেকের পাশে চটপটিওয়ালা বালতিতে পানিটাও বদলায় না।  জনগণ সেই নোংরা প্লেটেই খেয়ে যাচ্ছে। তারপর দৌড়াচ্ছে এসিডিটির ওষুধ কিনতে।
সেখানেও ভিড়, উফ্ অসহ্য! আর বলতে পারছি না।
এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
লেকগুলোর ভেতর সরকারি উদ্যোগে সুন্দর পরিবেশ তৈরি আছে হাঁটার জন্য।  কিন্তু পরিবেশ বদলে গেছে কেন? মেয়েরা হাঁটতে পারে না বলাটা ভুল কিছু নয়, বোধ করি।  বাকিটা হয় নাইবা বললাম।
দারুণ নান্দনিকতায় রবীন্দ্র সরোবর, কী দারুন গ্যালারি।  বসার সিঁড়িগুলো! আহা কী ভালো ছিল, যখন তৈরি হলো, খুব বেশি দিন আগের কথা নয়।
কিন্তু হাঁটার পথ কই? বসার জায়গা কই? পুরো জায়গাজুড়েই তো ময়লাযুক্ত কাবাবের দোকান দিয়ে ভরিয়ে রেখেছে, যা অস্বাস্থ্যকর এবং বিরক্তিকর।
এসব ভ্রাম্যমাণ রেস্তোঁরা দেওয়ার  কি অনুমতি আছে? সিটি করপোরেশনের কাছে কি অনুমতি নিয়েছে এই দোকানগুলো?
আমাদের কি অধিকার নাই একটু স্বস্তিতে হাঁটার? ধানমন্ডিতে এত স্কুল, কলেজ! এমনিতেই জ্যাম থাকে, তার ওপর গাড়ির বহর।  গাড়ি যত্রতত্র পার্ক করছে! কী উপায়? এসব অনিয়ন্ত্রিত চলাচলের?
নান্দনিক ধানমন্ডি লেকের ময়লাগুলো যখন ফুটে থাকা পদ্মগুলোর সঙ্গে দোলে, মনে হয় ময়লা দুলছে! ফুলগুলো ময়লা মনে হয়! লজ্জা লাগে। কী প্রয়োজন লেকগুলোর? কারো কোনও ভ্রূক্ষেপ নাই, পথচারীরাও নির্বিকার, পথ চলছে। ধানমন্ডি ৫ নং মাঠের সামনে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে প্রতিদিন, তা না বলে পারছিনা, লজ্জাহীনের মতো দুর্গন্ধময় করে তুলেছে লোকজন মূত্রত্যাগের মাধ্যমে। যার কারণে আশেপাশের মানুষ বাসার জানালা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। অনেকে গন্ধে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন। প্রশ্নটা হলো রাস্তা কি বাথরুম? সিটি করপোরেশনের কাছে জোরালো বিনীত অনুরোধ, বিষয়টি নিয়ে একটু তৎপর হন।
অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছি, সবাই হতাশ, বলে কিছু বলার নাই।  বাড়ির ময়লা নিজেরাই ফেলে যায় কাজের লোকেরা।
অনেকে বলে, ঘরে ঢুকে গেলে আর কি সমস্যা? ময়লা তো আর ঘরে নাই।  আমি আকাশ থেকে পড়ি এসব শুনে। আমরা কি কাণ্ড-জ্ঞানশূন্য হয়ে যাচ্ছি দিন দিন?
সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।  আমাদের নান্দনিকতায় ভরা ধানমন্ডিকে সেই রকমই দেখতে চাই। যেমন আগে ছিল।  সিটি করপোরেশন যদি একটু নজর দেয়, বেঁধে দেয় নিয়ম এবং কঠোর ব্যবস্থা নেয় এবং সাধারণ মানুষ যদি মেনে চলে নিয়ম, তাহলে আর হয়তো কিছুটা হলেও আমাদের হাঁটার অধিকারটুকু স্বস্তির হতে পারে। আর যদি তা না হয়, তবে বেশি দিন আর নাই, ধানমন্ডি এলাকা অনাবাসিক দুর্গন্ধময় এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হতে।
 লেখক: সংগীতশিল্পী


/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মানব ও সুপারি পাচারের অভিযোগে ভারতে শুল্ক কর্মকর্তা গ্রেফতার 
মানব ও সুপারি পাচারের অভিযোগে ভারতে শুল্ক কর্মকর্তা গ্রেফতার 
ভুয়া পরিচয়ে ভারতে বসবাস বাংলাদেশির, ৪ বছরের কারাদণ্ড
ভুয়া পরিচয়ে ভারতে বসবাস বাংলাদেশির, ৪ বছরের কারাদণ্ড
৫ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবস্থাপক নিখোঁজ, পূবালী ব্যাংকের ৮ কর্মকর্তাকে বদলি
৫ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবস্থাপক নিখোঁজ, পূবালী ব্যাংকের ৮ কর্মকর্তাকে বদলি
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ