X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

রক্ত ঝরানো একুশে আগস্ট

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন
২১ আগস্ট ২০১৮, ১১:০৬আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৩৯

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন আজ থেকে ১৪ বছর আগের কথা। তখন দেশে আজকের মতো সবার হাতে হাতে দামি স্মার্টফোন ছিল না। ছিল না ইন্টারনেটের সুলভ প্রাপ্তি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছিল না আজকের মতো শক্তিশালী অবস্থানে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের বাইরে হাতেগোনা দু’তিনটি টিভি চ্যানেল ছিল। এফএম রেডিও ছিল না। বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহও ছিল না। একবিংশ শতাব্দীর উন্নত বিশ্বে তুলনামূলক পশ্চাৎপদ এক বাংলাদেশে আজ থেকে ১৪ বছর আগে একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল। এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে তা মোটামুটি পুরো বিশ্বমানবতা ও বিবেককে চরমভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। এদেশের বর্তমান প্রজন্ম ও ছাত্র-যুব সমাজকে সেদিনের ভয়ঙ্কর সে ঘটনার আদ্যপ্রান্ত জানতে হবে। একই সঙ্গে ঘৃণা করতে হবে তাদের, যারা এই ভয়ঙ্কর ও নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে ২১ আগস্ট। এদিন বিকালে আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে পার্টি অফিসের সামনে সারা দেশে সংঘটিত জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে একটি সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশের আয়োজন করেছিল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। দুপুরের পর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ দলে দলে সভাস্থলে যোগ দেয় এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কানায় কানায় ভরে ওঠে। একে একে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সব নেতাও উপস্থিত হন। দুটি ট্রাকে স্থাপিত মঞ্চে দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে চলতে থাকে এ জাতীয় নেতৃবৃন্দের অগ্নিঝরা বক্তৃতা। মঞ্চের নিচেই আদা চাচা সবাইকে মুড়ি মাখিয়ে পরিবেশন করতে থাকেন। যে কাজটি তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ করে থাকেন আওয়ামী লীগের প্রতিটি সভা সমাবেশে। বিকাল ৫টার দিকে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তৎকালীন সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আসেন। তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তার দীপ্ত শপথ উচ্চারণ করে যখন বক্তৃতা শেষ করেন তখনই ঘটে যায় সেই ভয়ঙ্কর ঘটনাটি। চারপাশ থেকে মুহুর্মুহু গ্রেনেড বিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। যে যেদিকে পারে ছুটতে শুরু করে। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন দলের সিনিয়র নেতা থেকে সাধারণ কর্মী, সমর্থক, জনতা, সংবাদমাধ্যমের কর্মী, পথচারীসহ সবাই। এরই মাঝে মৃত্যুকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দলের সিনিয়র কিছু নেতানেত্রী শেখ হাসিনাকে ঘিরে ধরে ট্রাক থেকে নামিয়ে তার ব্যক্তিগত গাড়িতে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য এগুতে থাকেন। তখনই শুরু হয় গুলি, শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে। সেই মৃত্যুপুরীতে জীবন বাঁচাতে হাজার হাজার মানুষ যখন প্রাণপণ ছুটছে তখন কোন দিক থেকে গুলি আসছে তা খেয়াল করার যেন কোনও সুযোগই নেই। শেখ হাসিনাকে ঘিরে রাখা দলের সিনিয়র নেতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা গুলি খেয়ে একে একে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেও একজনও পিছপা হয়নি। নেত্রীকে গাড়িতে তুলে দিয়ে গাড়ি বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ছাড়ার পর তারা নিস্তেজ হয়ে আসা শরীর রক্তমাখা রাস্তায় এলিয়ে দেন। গাড়ি বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ছাড়ার সময়ও চলন্ত গাড়িতে গুলি করা হয় অসংখ্য।

নেত্রী বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ছাড়ার পরপরই সেখানে অবস্থিত আহত-নিহত রক্তাক্ত, ছিন্নভিন্ন নেতাকর্মী, সাধারণ জনতা, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে, লাঠিচার্জ করে। কী নৃশংস ছিল সেই ঘটনা। স্প্লিন্টারের আঘাতে জর্জরিত রক্তাক্ত আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী। ঢাকার হাসপাতালগুলোতে চলতে থাকে আহতদের মাতম। প্রচুর রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু রক্তদাতারা হাসপাতালে আসতে পারছেন না পুলিশি গ্রেফতারের কারণে। এ যেন এক মধ্যযুগীয় বর্বরতা । সে সময় ক্ষমতাসীন দল জামায়াত-বিএনপি ও তাদের আশ্রিত পুলিশ-প্রশাসন। সব মিলিয়ে সেদিন প্রাণ হারায় ২৪ জন। নেত্রী শেখ হাসিনা তার শ্রবণশক্তিতে ব্যাপকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। আহত হন আওয়ামী লীগের প্রায় সকল সিনিয়র নেতা ও সংসদ সদস্যসহ সাধারণ নেতাকর্মী, জনতা ও সংবাদমাধ্যম কর্মীরা।

আজ  ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে দেশের আনাচে-কানাচে ঘটে যাওয়া ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যেকোনও খবর মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ১৪ বছর আগের  সেই ভয়াবহ নৃশংস ঘটনাটির সময় যেহেতু আজকের মতো সহজলভ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছিল না, তার মানে এই নয় যে আমাদের বর্তমান প্রজন্ম কোমলমতি ছাত্র-যুবারা সেদিনের সেই ঘটনাটি সম্পর্কে অন্ধকারে বাস করবে। তরুণ প্রজন্মকে জানতে হবে, জানাতে হবে। কোনও একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান ও সিনিয়র নেতৃত্বকে একসাথে হত্যা করার জন্য এমন নৃশংস হামলা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এই জঘন্য হামলা ও হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী বিএনপি-জামায়াত। সেই বিষয়টি জেনে বিএনপি-জামায়াতকে ঘৃণা ও প্রত্যাখ্যান করা আমাদের প্রজন্মের  একটি পবিত্র দায়িত্ব।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

 
 
 


 
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলবে ১৫ ফেরি, ২০ লঞ্চ
ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলবে ১৫ ফেরি, ২০ লঞ্চ
ট্রলারের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চার জন অগ্নিদগ্ধ
ট্রলারের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চার জন অগ্নিদগ্ধ
প্রিয় দশ
প্রিয় দশ
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ করার নির্দেশ
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ করার নির্দেশ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ