X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, 'রাজরানীর' বিদায়

দাউদ হায়দার
০২ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:৪৫আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০১৮, ২০:২৫

দাউদ হায়দার প্রাক্তন চ্যান্সেলর হেলমুট কোল (জন্ম ৩ এপ্রিল ১৯৩০, মৃত্যু: ১৬ জুন ২০১৭) বেঁচে থাকলে খুশি কি ব্যাজার হতেন, কেউ-ই বলতে পারবে না। সম্ভবত নয় পারা। সি.ডি.ইউ. (ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রাটিক ইউনিয়ন)-এর প্রবীণ দুর্মুখ যাঁরা, আড়েঠারে, কথার মারপ্যাঁচে শুনিয়েছেন, চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল বড়ো বেশি দেমাকি হয়ে উঠেছিলেন, হঠাৎ পতনে হেলমুট কোল ‘স্বস্তি’ পেতেন।
কেন পেতেন, হেতু আছে বৈ কী। দলের নিষেধ সত্ত্বেও, দুই জার্মানির পুনর্মিলনের চার মাসের মধ্যেই তৎকালীন পূর্ব জার্মানির ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্য (বার্লিনের পাশের রাজ্য) থেকে হেলমুট কোল (তিনি সি.ডি.ইউ.-র চেয়ারম্যানও) নামেমাত্র সি.ডি.ইউ.-র সদস্য অ্যাঙ্গেলা মেরকেলকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেন। পরিবার-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সরাসরি পূর্ণ মন্ত্রী। বয়স তখন তেত্রিশও হয় নি। হেলমুট কোল আমাদের জানালেন (সাংবাদিক সম্মেলনে), পূর্ব থেকে (অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব জার্মানি) মন্ত্রী সভায় একজনকেই বেছে নিয়েছি, ফ্রাউ অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, বয়স কম, হয়তো অনভিজ্ঞ, ‘গড়েপিঠে মানুষ করলে নিশ্চয় চৌকস হবে একদিন। ফ্রাউ মেরকেল চালাকচতুর, বুদ্ধিমতী, রাজনীতিতে নিষ্ঠাবতী, কর্মেও দক্ষ।’

পরিবার-বিষয়কমন্ত্রী (জার্মানিতে বলা হয় ‘ফ্যামিলি মিনিস্টার’।) হিসেবে অদক্ষ, এক বছরেই প্রমাণিত। দলে, নানা রাজনৈতিক মহলে তীব্র সমালোচনা। হেলমুট কোল কথা দিয়েছেন ‘গড়েপিঠে’ মানুষ করবেন, সমালোচনার তোয়াক্কা না করে, ‘ফ্যামিলি’ থেকে সরিয়ে প্রকৃতি পরিবেশমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে দেন। অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের প্রতি হেলমুট কোল কেন দুর্বল, কেন তেল্লাই, কেন আগলে রাখেন, কোনও ঝানু সাংবাদিক, দলের কোনও চানক্যও আবিষ্কার করতে পারেন নি।

বহুমান্য দৈনিক ডি টাৎস-এর কলামিস্ট এলকে স্মিট মজা করে লিখেছিলেন, “হেলমুটের দুই পুত্র, কন্যা নেই। কোনও পুত্রই রাজনীতি করে না। অ্যাঙ্গেলা মেরকেল কন্যাতুল্য, কন্যাকে রাজনীতি শেখাচ্ছেন, মন্ত্রী বানিয়েছেন।”

অ্যাঙ্গেলা মেরকেল পাঁচ বছরেই বুঝে নিয়েছেন দলের ভিতরমহলের চেহারাচরিত্র, সুতো কীভাবে পাকাতে হয়, ঘোঁট পাকালে আখেরে কি হবে। ঠিক সময়ে ‘বাপকে’ ল্যাং মেরেছেন, দল থেকে তাড়িয়েছেন। হেলমুট কোলই পুনর্বার চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়েছিলেন, দেখা গেলো হেলমুট আউট। অ্যাঙ্গেলা মেরকেল চেয়ারম্যান। ২০০০ সাল থেকে। তাবৎ মস্তান-রাজনীতিককে (সি.ডি.ইউ.-র) ঘায়েল করেছেন ‘গড়েপিঠে মানুষ’ এক নারী। এই মানুষ তথা নারী ২০০০ সাল থেকে দলের কুলপতি হয়ে সব মস্তানকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করেছেন, কোনও আপস করেন নি। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারকে ‘আয়রন লেডি’ শিরোপা দেওয়া হয়েছিল। আমরা দেখলুম, আয়রন নয়, সটান হিমালয়। ভূমিকম্পেও হেলদোল নেই। স্থির। দৃঢ়। কাউকে পাত্তা দেন না। এল.কে. স্মিট তাকে (অ্যাঙ্গেলা মেরকেলকে) তুলনা করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধির সঙ্গে (মেরকেলের দ্বিতীয় টার্মে চ্যান্সেলর হওয়ার পরে)।

২০০৫ সাল থেকে অ্যাঙ্গেলা মেরকেল জার্মান চ্যান্সেলর। প্রথম টার্মে (প্রথম দফায়) কতটা ‘ইস্পাত কঠিন’ বুঝতে দেননি কাউকে। ঘোড়ার চাবুকে তেল এমনই পাকিয়েছেন, দ্বিতীয় টার্ম থেকে ভয়ঙ্কর। ইউরোপে ত্রাহি-ত্রাহি। ইউরোপের বড় দেশ জার্মানি, ইউরোপে সবচেয়ে ধনী, বিশ্বের চতুর্থ ধনী দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নে পয়লা মাতব্বর, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কোনও দেশ একটু ত্যাড়াব্যাড়া, পাকামো করলে, ঘাড় উঁচু করলে, কথা না শুনলে জার্মানি শায়েস্তা করে, করছে  অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের রাজত্বকাল থেকে। পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ফণা তুলে সুবিধে করতে পারেনি, ওঝা জার্মানির অ্যাঙ্গেলা মেরকেল।

গ্রিসের সাংঘাতিক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আই.এমএফ.) দিশেহারা, ব্যর্থ, ওই সময় জার্মানিই কুবের, সাহায্যকারী। সবই অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের নির্দেশে। স্পেনের আর্থিক সমস্যায়ও তিনি। ব্রেক্সিটের পাকামো সহ্য করছেন না। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে-কে এমনই ফ্যাসাদে (ফাঁদে) ফেলেছেন, বগা (বক) কান্দিয়া কয়, ‘মাছ গিলুম না, ছাইড়া দে।‘

তিন বছর আগে (২০১৫ সাল থেকে) মধ্যপ্রাচ্য থেকে (মূলত সিরিয়া, লেবানন) উদ্বাস্তুর যে স্রোত জার্মানিতে (দেড় মিলিয়নের বেশি), অ্যাঙ্গেলা মেরকেল উদার, আশ্রয় দিতে দিলদরিয়া, বুমেরাং এখন। নিজের দলেরই বিপত্তি। উদ্বাস্তুর ঠাঁই নেই আর। ভয়ঙ্কর সমস্যা। সুযোগ নিয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল এ.এফ.ডি.। মূলত দক্ষিণপন্থী। উদ্বাস্তু ও বিদেশি প্রশ্নে জয়ী হয়েছে নির্বাচনে। সংসদেও ঠাঁই।

বাইয়ার্ন, হেসে ভোটে (আঞ্চলিক) সি.ডি.ইউ-র সাংঘাতিক বিপর্যয়, কেন্দ্রীয় সি.ডি.ইউ-র কোনও দায় নেই, কিন্তু অ্যাঙ্গেলা মেরকেল নিজেই পরাজয় কাঁধে নিয়েছেন, দলের ‘গুরু’ থেকে বিদায়। ডিসেম্বরে পার্টি কংগ্রেস (হামবুর্গে)। চেয়ারম্যানের (গুরু) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। ২০২১ সালে চ্যান্সেলর থেকে পদত্যাগ। বিদায়। জার্মান রাজনীতিতে এত বছর কেউ (কোনো দলে) ছড়ি ঘোরান নি। চ্যান্সেলরও হন নি। অ্যাঙ্গেলা মেরকেলকে কি বলবো, ‘ছিলেন রাজরানী?’

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

 

/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বন ডাকাতদের জন্যই পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়: জিএম কাদের
বন ডাকাতদের জন্যই পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়: জিএম কাদের
ঢাবির জগন্নাথ হলে বসে প্রাথমিকের প্রশ্নের সমাধান!
ঢাবির জগন্নাথ হলে বসে প্রাথমিকের প্রশ্নের সমাধান!
চেন্নাইয়ের হয়ে খেলাটা আমার কাছে ছিল স্বপ্ন: মোস্তাফিজ (ভিডিও)
চেন্নাইয়ের হয়ে খেলাটা আমার কাছে ছিল স্বপ্ন: মোস্তাফিজ (ভিডিও)
ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য খালাস করে গেলেন যে নারী ট্রাকচালক
ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য খালাস করে গেলেন যে নারী ট্রাকচালক
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ