'জেমকন সাহিত্য পুরষ্কার' এটা আমার জন্য অনেক বড়ো প্রাপ্তি। অনেক বড় স্বীকৃতি। আমি ভাবতেও পারিনি এমনটা ঘটে যেতে পারে। প্রথমেই যারা আমাকে এ পুরষ্কার দিয়ে সম্মানিত করেছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি কৃতজ্ঞ। এবং একই সাথে আনন্দিত।
পুরষ্কার কবিতায় কবিগুরু একজন কবির পুরষ্কার প্রাপ্তি নিয়ে বলেছেন। রাজা কবির প্রতি তুষ্ট হয়ে রাজভাণ্ডারের সবকিছু কবিকে দিয়ে দিতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। কবি শুধু চেয়েছেন রাজকণ্ঠের মালা। যে মালা ফুলের। একজন কবি কী চায়? কাকে চায়? কখন চায়? সংসারে এ হিসেব মেলানো বড়ো কঠিন। যুগ পাল্টেছে। এখন রাজরাজড়ার দরবারে কবি নেই। তবে সেদিনের সে কবি আর আজকের কবির মধ্যে ভিতরের মিলটা কিন্তু রয়েই গেছে। একটু ভালোবাসা, একটি ফুলমালা পেলেই কবি সন্তুষ্ট। আমি কবিতা লিখেছি কোনকিছু পাবো এ আশা করে নয়। তবুও পেয়েছি। এ আনন্দ আমার। এ আনন্দ আমার কবিতার। এ আনন্দ পৃথিবীর; সকল কালের, সকল মানুষ এ আনন্দের অংশীদার হোক।
বরাবরই মানুষ, মানুষের সম্পর্ক, মানুষের আচরণ আমাকে চিন্তিত করে। প্রকৃতিতে আমি যেভাবে লীন হতে পছন্দ করি, প্রকৃতির অনবদ্য আখ্যান রচিত হতে পারতো আমার কাব্যে। কিন্তু একের সাথে অন্যের বোঝাপড়ায় মানুষের যে যোগ তা আমাকে আকৃষ্ট করে। মানুষের ভিড়ে, আমি মানুষ দেখি। মানুষ দেখতে আমার ভালো লাগে। কী বিচিত্র তাদের গড়ন-বরণ, চলন-বলন। বিচিত্র তাদের চোখ-নাক-মুখ। বিচিত্র তাদের মন। বাহিরটা দেখা যায়। ভালো করে তাকালে ভিতরটাও দেখা যায়। এ মানুষেরই স্বরূপ সন্ধান করেছি আমার কবিতায়। 'দিল নিলামের হাট'— মানুষকে যেভাবে দেখেছি সেভাবে রচনা করার প্রয়াস মাত্র।
দূর্বোধ্য থেকে দূর্বোধ্যতর শব্দের ঘেরাটোপে কবিতাকে আবদ্ধ হতে দেখে আমার হৃদয়-মন পীড়িত হয়। মানব মনের সহজ অভিব্যক্তি, সহজ ভাবকে আমরা জোর করে কঠিন করে তুলি। তাই 'দিল নিলামের হাট' গ্রন্থে আমি ভাষাকে করেছি জনমানুষের। এখন পাঠকের ভালো লাগলেই নিজেকে সার্থক মনে করবো।
আমি সাহিত্যের ছাত্র। আজীবনের জন্য আমি সাহিত্যের ছাত্র। আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমার শিক্ষকদের প্রতি। যাদের সাহচর্যে সাহিত্যের নতুন পাঠ পেয়েছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমি ঋণী। এ কাব্যগ্রন্থটি সম্পূর্ণ সেখানেই রচিত। জীবনের শুরুতেই এমন একটি অর্জন আমার জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে। নিজের প্রতি বিশ্বাসের একটি নিদর্শন হয়ে
থাকবে। আমি শুধু বলবো জীবন সুন্দর, মানুষ সুন্দর, মানুষের ভালোবাসা সুন্দর। কবি সে সুন্দরের মাঝখানটিতে বসে রচনা করে অলৌকিক আনন্দের আখ্যান— কবিতা।