X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাট চাই, পাট

দাউদ হায়দার
২৭ নভেম্বর ২০১৮, ১৩:০৩আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০১৮, ২০:২০

দাউদ হায়দার একটি ডিপার্টমেন্ট স্টোরে বাজার করতে গিয়েছিলুম। প্রায়ই যাই। বাড়ির কাছেই স্টোর। সব বিক্রেতাই চেনা। কুশলাদি বিনিময় জার্মান ভদ্রতা। দুই-এক সেন্ট কম পড়লে, বিক্রেতা মৃদু হেসে কন, ‘নিজের পকেট থেকে দিচ্ছি, পরেরবার শোধ করবেন’। বাকি নয়, হিসেবে ঝামেলা যাতে না হয়, পরিচিত খরিদ্দারকে সাময়িক সাহায্য করেন।
ছুটকো-ছাটকা বাজারের জন্যে থলি (ব্যাগ) সঙ্গে নিই না। দরকারও নেই। কেনাকাটা করলে, প্লাস্টিক ব্যাগ ফ্রি (এক কিলোর ব্যাগ)। রুটি-চিজ-সালামি-কিরসে (চেরি) ইয়োগোট (দই) কিনে অপেক্ষা করছি (দাম দিয়ে), বিক্রেতা ব্যাগ (প্লাস্টিক) দেবেন। দিলেন ঠিকই, দিয়ে বলেন, ‘এক ইউরো দাম’। বলেন কী?  যা কিনেছি, সাকুল্যে দেড় ইউরোও নয়। বিস্ময় মানি। বিক্রেতার কথা, ‘প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হচ্ছে, নিষিদ্ধকরণের নির্দেশ এসেছে। নিষিদ্ধ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন’।
-ঠিক যে, মনেই ছিল না নিষিদ্ধের খবর।

মিডিয়ায় এই নিয়ে বিস্তর হৈ চৈ। গোটা ইউরোপে লক্ষাধিক প্লাস্টিক কারখানা পথে বসবে। প্লাস্টিক ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ। লাখ-লাখ শ্রমিক বেকার। অর্থনীতিতেও ধস। ইইউর কয়েকটি দেশ (মূলত পূর্ব ইউরোপের ইইউ-ভুক্ত দেশ) তুমুল ‘কাজিয়া’ করছে, বলছে মিলিয়ন-ব্যবসাবাণিজ্য লোকসান। কিন্তু ইইউর মাতব্বরা শুনতে নারাজ। মোল্লার এক কথা তথা ফতোয়া, বন্ধ করতেই হবে। কেন? প্লাস্টিকের কারণে জনজীবনে ত্রাহিশ্বাস। পরিবেশ দূষিত। স্বাস্থ্য বিঘ্নিত। ক্যানসারের লক্ষণ (ডাক্তারের অভিমত)। এও বাহ্য। জার্মান টিভিতে প্রদর্শিত (ডকুমেন্টারি ছবি) নদী, সমুদ্রে হাজার-হাজার প্লাস্টিক বোতল, গ্লাস, চামচ ইত্যাদি ফেলা হচ্ছে নিয়মিত (প্লাস্টিক ব্যাগও)। নদী-সমুদ্রের প্রাণী খাচ্ছে। মারা যাচ্ছে। সমুদ্রের তলদেশে জমছে প্লাস্টিকের ব্যাগ, গ্লাস, চামচ, বোতল। ফলে, সমুদ্রের তলদেশের পরিবেশ নষ্ট। প্রাণীর মৃত্যু। প্রতি বছর (জার্মান টিভির তথ্যচিত্রে রিপোর্ট)  ৪৫ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক ‘আবর্জনা’ সমুদ্রে। ফলে, জল যেমন দূষিত, জলে প্লাস্টিকের কেমিক্যাল (প্লাস্টিক তৈরিতে কেমিক্যাল ব্যবহৃত) মিশ্রিত, জল মৃত্যুবিষ, জলীয় প্রাণীর বাঁচার আশঙ্কা ক্ষীণ, মৃত্যু অচিরেই। ধ্বংস হবে সমুদ্রের মাছ, সমুদ্রের প্রাণী। সমুদ্রের উদ্ভিদ। লক্ষণও দেখা দিয়েছে গত কয়েক বছরে।

জার্মান ও ফরাসি টিভিতে প্রায়ই দেখছি, ভারত মহাসাগরে, প্রশান্ত মহাসাগরে, ভূমধ্য সাগরে প্লাস্টিক খেয়ে তিমি, হাঙর, কচ্ছপ, মাছের (সমুদ্র তলদেশের) মৃত্যু। ভেসে উঠছে জলে। ভয়ঙ্কর এই ঘটনায়, পাশের বাড়ির সুজানে, দুই সন্তানের জননী বললেন, ‘কী খাচ্ছি আমরা? মাছ ছেড়েছি। মাংসও ছাড়তে বাধ্য। গরু, লাম্ব, শূকরও প্লাস্টিক খাচ্ছে। টিভির রিপোর্টে দেখেছি’।

-একটু বাড়িয়ে বলেছেন হয়তো, কিন্তু এও সত্য, ফ্রান্সে গবাদিপশুর খাদ্যে ‘ভেজাল’, খড়বিচালিতে প্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

প্লাস্টিক নিয়ে ইউরোপে ব্যবসাবাণিজ্য ও রাজনীতি এখন তুঙ্গে। জার্মানির রাজনৈতিক দল গ্রিন পার্টি সবরকম প্লাস্টিক বন্ধে সোচ্চার। পার্লামেন্টেও। জার্মান সরকার বলছেন, ‘প্ল্যাস্টিক নিষিদ্ধ অচিরেই’। কবে এই ‘অচির’ দিন তারিখ বলা হয়নি। জার্মান পার্লামেন্ট এখন ব্রেক্সিট নিয়ে এতটাই ব্যস্ত, তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। এক পার্টিতে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা, ব্রেক্সিট নিয়ে কথা প্রসঙ্গে বললেন, ‘ধ্যেৎ, আপনি কেন, আমরাও দিশেহারা’।

ডিপার্টস্টোরে এখন দেদার বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিক ব্যাগের বদলে কাগজের ব্যাগ। কিন্তু ক্ষণস্থায়ী ব্যাগ। জলে ভিজে নষ্ট। স্থায়ীত্বও বেশি নয়। অন্য উপায় কী? পাটের ব্যাগ। পাটের ব্যাগ ‘এনভায়ারমেন্টাল’। স্বাস্থ্যের জন্যেও উপকারী। গ্রিন পার্টির এই প্ররোচনায় বাজারে পাটের ব্যাগ দুর্লভ, বহু দামি। একজন বললেন, ‘পাট বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গের ‘সোনালি সম্পদ’, এই চমৎকার সুযোগ কেন নিচ্ছে না? পাটই এখন বিশ্বের আসল ব্যবসা। ‘ন্যাচারাল ফাইবার’ পাটে তৈরি ব্যাগ, মাথার টুপি, শাল, জামার ডিমান্ড সাংঘাতিক। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ কেন এই সুযোগ নিচ্ছে না? বিশ্ববাজারে পাটই এখন আসল চাহিদা। আমরা পাট চাই। পাটের বিশাল বাজার তৈরি এখন। এই সুযোগ হেলায় হারাবেন না’। পাটের বিশাল ব্যবসা, হাতছাড়া অনুচিত।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ