X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও নারী চ্যান্সেলর?

দাউদ হায়দার
০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:২৮আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:৩০

দাউদ হায়দার হাসিমুখে নয়, মনের দুঃখেই কথাটি বলেছেন অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, হামবুর্গে, ৩১-তম পার্টি কংগ্রেসে, বিদায়ী ভাষণে, ‘পার্টি প্রধান কিংবা চ্যান্সেলর হয়ে জন্মগ্রহন করিনি। দল থেকে, চ্যান্সেলর পদ থেকে একদিন অবসর তো নিতেই হবে।’
সিডিইউ (ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন)-র পার্টি কংগ্রেসের সভাঘরে যখন বলছিলেন, দেখা গেলো (টিভির পর্দায়) শুকনো, করুণ চেহারা। মুখখানি বিষাদাচ্ছন্ন।
একটানা ১৮ বছর সিডিইউ’র চেয়ারওম্যান ছিলেন (২০০০-২০১৮) অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। তাঁর বিদায়ে, টিভিতেই দেখা গেছে দলের অনেকের চোখে জল, পকেট থেকে ন্যাপকিন বের করে চোখ মুছছেন। কেউ-কেউ অবশ্য খুশি। বিশেষত, দলের ভিতরে অ্যাঙ্গির (অ্যাঙ্গেলা-র বদলে ‘অ্যাঙ্গি’ নামেই জনমহলে পরিচিত) যারা কঠোর সমালোচক, বিরুদ্ধবাদী। যেমন ফ্রিডরিষ মেৎস্-এর সমর্থককুল। ইয়েনস স্পান-এর সমর্থকরা।
সিডিইউ’য়ের ইতিহাসে দেড়যুগব্যাপী কেউ-ই দলীয় প্রধান পদে বহাল থাকেননি। অ্যাঙ্গি ব্যতিক্রম। এবং এও ব্যতিক্রম জার্মানির কোনও চ্যান্সেলর একটানা ষোলবছর ক্ষমতাসীন হননি (২০২১ সালে অ্যাঙ্গি পদত্যাগ করবেন। চ্যান্সেলরপ্রার্থী হবেন না। হতে পারবেন না। কেননা দলের কেউ নন, দল থেকে পদত্যাগী। ‘দলের সদস্য পদ থেকেও বিদায় নেবেন’, জানিয়েছেন।)।
জার্মানিসহ ইউরোপের অনেক দেশেই (পৃথিবীর বহুদেশে। হোক উন্নত-অনুন্নত, গণতান্ত্রিক।) দলীয় প্রধানই নির্বাচনে জয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত। চেয়ার দখলকারী। জার্মানির বেলায় অন্যথা। অন্তত এখন পর্যন্ত।
ইউরোপের মাত্র দুটি দেশ (ব্রিটেন। জার্মানি) নারী রাষ্ট্রকর্তা পেয়েছে। একবার পেয়েছে স্ক্যান্ডেনিভিয়ানের আইসল্যান্ড। একবার মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েল। সেই দিক থেকে এশিয়া চ্যাম্পিয়ন। ভারত-বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান-ইন্দোনেশিয়া (বার্মায় ডি ফ্যাক্টর রাষ্ট্রকর্তা অন সাং সু চি)। এইসব দেশে নাকি নারীস্বাধীনতা সামান্য! ভারতের অনেক রাজ্যেই নারী মুখ্যমন্ত্রীর দাপট বহাল তবিয়তে।
অ্যাঙ্গির নিন্দুকেরা কয়, ‘সে কহে বিস্তর মিছা যে কহে বিস্তর। মঞ্চে একবার উঠলে বকবকানির শেষ নেই, কান ঝালাপালা, কখন শেষ করবেন, নিজেরও অজানা।’
-কী আশ্চর্য, দল থেকে পদত্যাগে, বিদায়ী ভাষণ মাত্র ছয় মিনিটের। নিজের কোনও গুনগান নয়, বরং ‘ভুল করলে মার্জনাপ্রার্থী।’ একটি মোক্ষম-কথা বলেছেন, ‘দীর্ঘকাল দলে ক্ষমতাসীন হলে, রাষ্ট্রের কর্তা হলে নিজের দাপট জাহির করেন। দলে শত্রু তৈরি হয়। রাষ্ট্রপ্রশাসনেও শত্রু সংখ্যা বাড়ে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও সন্দেহ নানারকম। অপছন্দের মাত্রা বেড়ে যায়। ভালো কাজেরও নিন্দা। মন্দ কাজের তুলোধুনা। ‘ফ্লাইস্ট’ (সম্ভবত- বা, হতে পারে। ইংরেজিতে ‘পারহ্যাপস’), কোনও-কোনও ক্ষেত্রে, আমিও ভুলচুক করেছি। করতেই পারি। ধোঁয়া তুলসীপাতা নই। মানুষমাত্রেই ভুল করে। বিশ্বাস করি, আমিও মানুষ।’
কোনও একটি রাজনৈতিক দলের কে পার্টি প্রধান হলেন (অনেক দেশে), কারোর মাথা খামচানোর বিষয় নয়। কিন্তু জার্মানির ক্ষেত্রে বিষয়। পার্টি প্রধান যদি নির্বাচনে জয়ী, অবধারিত চ্যান্সেলর। রাষ্ট্রের পয়লা মাথা।
সিডিইউ-ইয়ের ৩১-তম পার্টি কংগ্রেসে (অ্যাঙ্গির পদত্যাগ, দলীয় নেতার পদে) চেয়ারম্যান নির্বাচিত আনেগ্রেট ক্রাম্পকারেনবাউয়ার (এ কে-কে নামে অধিক পরিচিত)। বলা হয় তাঁকে ‘মিনি মেরকেল’। কেন? একে-কে অ্যাঙ্গেলা মেরকেলেরই সাক্ষাৎ-স্যাঙ্গৎ। অ্যাঙ্গেলা মেরকেল তাঁকে পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল করেছেন। অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের গবুচন্দ্র। অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের প্রায়-সব নীতিরই সমর্থক। তিনি, অ্যাঙ্গিকে ‘রাজনীতির দেবী’ মনে করেন।
আনেগ্রেট সিডিইউ-র সেক্রেটারি জেনারেল হওয়া সত্ত্বেও জারল্যান্ড রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন (২০১১-১৮)। আনেগ্রেটের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্রিডরিষ মেৎস, কিছুতেই সহ্য করতে পারেন না অ্যাঙ্গিকে। পনের বছর আগে দলে ছিলেন। পদত্যাগ করেন। হঠাৎ-ই প্রত্যাবর্তন। আইন ব্যবসায় ধনী, মিলিয়নার। অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়েনস স্পান। কৌতুক এই, অ্যাঙ্গির মন্ত্রী, স্বাস্থ্যদপ্তরে। দুজনেই পরাজিত।
তিন পুত্রসন্তানের জননী আনেগ্রেট, স্বামী হেলমুট, মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার। আনেগ্রেটের জন্ম ১৯৬২ সালের ৯ আগস্টে। ফরাসি, ইংরেজি, গ্রিক, পোলিশ অনর্গল বলতে পারেন। ‘বাংলা নয় কেন?’ জিজ্ঞেস করেছিলুম একবার। ‘রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়েছি। নিশ্চয় বাংলা শেখা উচিত।’ বলেন।
ফুটবল খেলোয়াড়দের কাছে আনেগ্রেট খুবই আদরনীয়, একসময় ফুটবল খেলতেন, ২০১১ সাল থেকে ফিফার Women’s World Cup- এর ট্রাস্টি মেম্বার।
২০২১ সালে যদি সিডিইউ জয়ী হয়, নেত্রী আনেগ্রেট কাম্প্র-কারেনবাউয়ার, নিশ্চিত চ্যান্সেলর। নারীকুল বলছে, আবারও একজন নারী চ্যান্সেলর? চমৎকার। অপেক্ষমাণ। ‘জেয়ার শ্যোন। ডয়েচল্যান্ড ইস্ট গ্রোস (শ্রেষ্ঠ)’ ।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
প্রস্তুত বলী খেলার মঞ্চ, বসেছে মেলা
প্রস্তুত বলী খেলার মঞ্চ, বসেছে মেলা
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
দুই মাসে ব্র্যাক ব্যাংকে আড়াই হাজার কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন 
দুই মাসে ব্র্যাক ব্যাংকে আড়াই হাজার কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন 
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি হয়নি
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি হয়নি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ