X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

বামফ্রন্ট এখন ‘রামফ্রন্ট’, লাল মিশেছে গেরুয়ায়

দাউদ হায়দার
২৬ মে ২০১৯, ১৬:৩১আপডেট : ২৬ মে ২০১৯, ১৮:২২

দাউদ হায়দার ভাগ্যিস, জ্যোতি বসু মারা গেছেন, প্রমোদ দাশগুপ্ত মারা গেছেন। নাম্বুদিরিপাদ মারা গেছেন। মোজাফফর আহমদ মারা গেছেন। অশোক মিত্র মারা গেছেন। ফিদেল ক্যাস্ত্রো মারা গেছেন। মাও জে দং মারা গেছেন। কার্ল মার্ক্স তো কবেই মারা গেছেন। বেঁচে থাকলে গায়ে কেরোসিন বা পেট্রল মাখিয়ে পুড়তেন। জনসম্মুখে আত্মহত্যা করতেন। কাঁদতেন না। হা-হুতাশও করতেন না। কারণ নেই করার। কেন করবেন? বামপন্থীরা যে অধঃপতনে গেছে, দেখে বিলাপ বা অশ্রুমোচন নয়। পতনেরও শেষ সীমানা থাকে।
মনে পড়বে আমাদের, জ্যোতি বসুর আত্মজীবনীর কিয়ৎ-অংশ, লিখেছেন, ‘বিপ্লব ও ক্ষমতা একই সঙ্গে নয়। বিপ্লবের সব গতিপথ একত্র করে, একই মোহনায় এনে, দেশের মানুষকে একই সামিয়ানায় সমবেত করে ক্ষমতা দখলই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে বিচ্যুত না হয়ে আমরা গ্রামাঞ্চল থেকে সংগ্রাম শুরু করি। ভারতবর্ষে গ্রামীণরাই খাঁটি মানুষ। শহুরেরা পরগাছা। দোদুল্যমান। ওঁদের দিয়ে বিপ্লব হয় না। বিপ্লবের জন্যে সাধারণ মানুষ। দিনমজুর। কৃষক। শ্রমিক। অত্যাচারিত, পোড়-খাওয়া দরিদ্র মানুষ। তাঁদের পেশিশক্তিই কমিউনিজমের শক্তি। শহুরে বাবুয়ানায় কমিউনিজম অসার মিথ্যে। অহেতুক বুলি কপচালে কমিউনিজম মৃত।
‘... কমিউনিস্টরা যখন আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয় শ্মশান-কবরেও ঠাঁই নেই।’

জ্যোতি বসু পোড়-খাওয়া, সংগ্রামী, দীক্ষিত কমিউনিস্ট, অভিজ্ঞতা থেকেই বলেছেন। জানতেন, কমিউনিস্টরা আদর্শহীন হলে কী ভয়াবহ পরিণতি।

কেউ কি কখনও ভেবেছিল ‘রামে (অর্থাৎ ফ্যাসিস্ত গেরুয়া) আর বামে (বামপন্থী তথা কমিউনিস্ট) এক হবে? সাপে-নেউলের মিলন, একাত্ম? ভারতের লোকসভা নির্বাচনে কী দেখলুম এবার? পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছিল, নির্বাচনি স্ট্রাটেজিও, শত্রুর শত্রু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘায়েল করতেই হবে। শত্রু বধে দোসর বেছে নেয় বিজেপি।

–ভাবটা, শত্রুকে খতম করে, ‘বিজেপি’-কে ঘায়েল করবো?-এই পলিসির অন্তর্ঘাত যে ভয়ঙ্কর, গা গতরে, হাড়েমজ্জায় টের পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বাম রাজনীতি ধূলিসাৎ। একটি আসনও পায়নি লোকসভা নির্বাচনে।

কে ভেবেছিল মহম্মদ সেলিম, বিকাশরনুন ভট্টাচার্য হারবে? কার কাছে বিকাশ হারলেন? অভাবনীয়। তৃণমূলের মিমি চক্রবর্তীর কাছে। মিমি ‘লাফেঙ্গা’ অভিনেত্রী। অতিশয় ‘ফালতু’। বিজেপি প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য সিপিএমের বিকাশ নাকি তৎপর ছিলেন, এই গুজব এখন চাউর।

খবর পেয়েছি কলকাতার যাদবপুর থেকে, সিপিএম-এর সমর্থকদের বয়ানে।

এই বয়ানে, সার্বিক পর্যালোচনায়, সিপিএম নিজের পায়ে কুড়োল মেরে ধূলিসাৎ। বাম রাজনীতি ধূলিসাৎ। ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আর কোনও আশা নেই ভবিষ্যতে। পশ্চিমবঙ্গেও নেই। পরিষ্কার।

পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীরা ভাবেননি দুধকলা দিয়ে কেউটে পুষলে ছোবলের আঘাত। বিজেপি কখনও ভাববে সিপিএম (বামপন্থী) দোসর?

–ভাববে না, ইতিমধ্যেই ঘোষিত।

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ স্পষ্ট বলেছেন, ‘কমিউনিস্ট পার্টিকে বিশ্বাস করি না। দু’মুখো সাপ।’

এই সাপের অস্তিত্ব কতটা বিলুপ্তির, পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টি উদাহরণ। কে ভেবেছিল, তিন দশকের বেশি পশ্চিমবঙ্গে রাজত্ব করেও কয়েক বছরের ব্যবধানে ধূলিসাৎ হবে? কেবল কি পশ্চিমবঙ্গে? ত্রিপুরার চিত্র কী? কেরালায় মাত্র পাঁচটি আসন? গোটা ভারতে (লোকসভা নির্বাচনে) কোথায় অবস্থান?– অবস্থাদৃষ্টে, বাম রাজনীতি ভারতে জায়গা পাচ্ছে না। ধসে গেছে পায়ের তলার জমিন। বদলে হিন্দুত্ববাদিতা। রামের হিন্দুত্ব। বিজেপির রামহিন্দুত্ব। এই হিন্দুত্বে বামপন্থীরা, তথা কমিউনিস্টরা, তথা বামফ্রন্ট এক লহমায় এখন বামফ্রন্ট। লাল মিশেছে গেরুয়ায়। বামরাও ভোট দিয়েছে গেরুয়া বসনের বিজেপি-কে। সিপিএম প্রকাশ্যেই জানিয়েছিল শত্রুর শত্রু মমতা ব্যানার্জিকে ঘায়েল করতেই হবে। করেছে তলে-তলে রামফ্রন্টকে।

বাম রাজনীতির এই দ্বিচারিতা, ভবিষ্যৎ কী, জ্যোতি বসু,অশোক মিত্ররা স্পষ্টই বলেছেন। পশ্চিমবঙ্গে, ভারতে বামের মৃত্যু এতটাই ভয়ঙ্কর, শ্মশানে-কবরেও ঠাঁই নেই। বামফ্রন্ট যদি রামফ্রন্ট হয় (হয়েছে) মজদুর, কৃষক শ্রমিক, মেহনতি মানুষের ধরণীও শূন্য।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

/এসএএস/এমএমজে/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জেনে নিন
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জেনে নিন
হাতিরঝিলে ভাসমান অবস্থায় যুবকের মরদেহ
হাতিরঝিলে ভাসমান অবস্থায় যুবকের মরদেহ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ