X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ তার আদর্শে অটুট থাকুক

লীনা পারভীন
২৩ জুন ২০১৯, ১৫:১৬আপডেট : ২৩ জুন ২০১৯, ১৫:১৭

লীনা পারভীন আমি ১৯৭৬ সালে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলাম। রাজনৈতিক ইতিহাসের যে পাঠ, তার পুরোটাই বই পড়ে আর পূর্বসূরিদের কাছ থেকে শুনে শুনে। বয়স কম থাকার কারণ এবং ঢাকার বাইরে থাকায় ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের উত্তাপ সেভাবে পাইনি। ১৯৭১ সাল পূর্ববর্তী লড়াই সংগ্রামের কিছুই দেখিনি। এমনকি দেশটির জন্মদাতার শাসনামলও দেখার মতো সৌভাগ্য হয়নি আমার।
বয়স বেড়েছে, দেখার চোখ প্রসারিত হয়েছে। জানার চেষ্টা ও তৃষ্ণাও বেড়েছে। রাজনৈতিক সচেতন পরিবারে জন্মের কারণে জেনেছিলাম এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামক একটি রাজনৈতিক দলের হাত ধরে, যার নেতা ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান, যাকে জাতির পিতা বলা হয়। বাংলার আপামর সাধারণ জনতা যাকে ভালোবেসে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামে অভিহিত করেছিল। কিন্তু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল জানার সীমানা। একজন বঙ্গবন্ধু এবং জাতির পিতাকে এর চেয়ে বেশি জানার সুযোগ ছিল না সে সময়টাতে। জেনেছিলাম আওয়ামী শাসনামল ছিল দুঃশাসনের এক জ্বলন্ত উদাহরণ, যে সময়টাতে সাধারণ মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারতো না। ছোট মনে তাই প্রশ্ন রয়েই গিয়েছিল। পারিবারিকভাবে জানি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল, কিন্তু পাঠ্যবইয়ে তেমন কিছু সরাসরি পাওয়া যেত না। আবার সামাজিকভাবে প্রচার ছিল দলটির বিরুদ্ধে। শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ হিসেবে প্রচার করা হতো তার ও পরিবারের লুটতরাজের কাহিনি। সরল মনে বিশ্বাস করিনি কখনও। অন্তত এটুকু বুঝতাম, যে ব্যক্তি নিজের জীবনের সবকিছুকে তুচ্ছ করে কেবল একটি দেশকে স্বাধীন করবে বলে শপথ নিয়েছিলেন, সেই একই ব্যক্তি কেমন করে নিজ দেশের ক্ষতি চাইতে পারেন?

প্রশ্ন ছিল বলেই বুঝতে শেখার পর থেকে জানতে চেয়েছি। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা ও তার পরিবারকে হত্যার মাধ্যমে যে ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল, এ বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলাম অনেক পরে। ’৭৫ পরবর্তী সময়কাল বিবেচনা করলেই দেখা যায়, সে সময়ে কারা ক্ষমতায় এসেছিল। পাকিস্তানি শাসনামলকে যারা ভালোবেসে হৃদয়ে স্থান দিয়েছিল, তারাই দখল করে রেখেছিল এদেশটাকে। আর সেজন্যই জানার ক্ষেত্রে ছিল অসংখ্য বাধা ও বিপত্তি। ইতিহাস পাঠ যতটুকু ছিল, সেখান থেকে বুঝতে পারলাম—বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম আওয়ামী মুসলিম লীগ হিসেবে হলেও পরবর্তী সময়ে নামটি থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ফেলা হয় এবং এর পর থেকেই দলটি বাস্তবিক অর্থেই কাজ করতে থাকে আপামর জনগণের দল হয়ে ওঠার। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই দলটির ভূমিকা ও গুরুত্বকে উপেক্ষা করার কোনও অবকাশ এখনও তৈরি হয়নি।

স্বাধিকার আন্দোলনের যতগুলো স্তর আছে, তার সবকটিতেই জড়িয়ে আছে এই দলটির নাম। রাজনৈতিক আর কোনও দলের ইতিহাস এত গৌরবময় হতে পারেনি। সৃষ্টিকাল থেকে হিসাব করলে মূলত শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই বিকাশ ঘটেছিল দলটির। ইতিহাসের এই অবসংবাদিত নেতা ছিলেন অনন্য, যার বিকল্প এখনও কেউ নেই। আওয়ামী লীগ নিয়ে অনেক সমালোচনা থাকতেই পারে। আছেও। সেইসব সমালোচনাকে অগ্রাহ্য করে দলটিকে বিবেচনাও করা যাবে না। একদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বৃহত্তর দল, অন্যদিকে ঐতিহ্য ও আন্দোলন সংগ্রামের এক অবিকল্প নাম। সময়ের বিবর্তনে দলটির উত্থান-পতনও আছে। তবে প্রাকৃতিক উত্থান-পতনের চেয়েও উদ্দেশ্যমূলকভাবে মাটিচাপা দেওয়ার প্রয়াসই চোখে পড়ে বেশি। ’৭৫ থেকে এ পর্যন্ত নানা প্রকার হীন চক্রান্ত ও আক্রান্তের ইতিহাস।

ষড়যন্ত্রকারীরা হয়তো ভেবেছিল শেখ পরিবারকে ধ্বংস করতে পারলেই বাংলার মাটি থেকে মুছে ফেলা যাবে বঙ্গবন্ধু ও তার দল আওয়ামী লীগের নাম। কিন্তু বিধি বাম। সে আশা পূরণ হলো না। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বেঁচে গেলেন কিছুটা ভাগ্যের আশ্রয়েই। অনেক লড়াইয়ের পর নিজ দেশে ফিরে এলেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ফিরে এসেই লড়াইয়ের মাঠে নেমে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। কাণ্ডারি হয়ে সামনে এলেন আবার। শত্রুমহলে অস্থিরতার আভাস পরিষ্কার। হলো না, হচ্ছে না। কী করা যায়। কেমন করে করা যায়। আবারও আঘাত হানার পরিকল্পনা। আবারও আগস্ট। এবার ১৫ নয়, ২১ আগস্ট। একবার ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা গিয়েছিল দীর্ঘ ২১ বছর। দূরে থাকলেও দলটিকে মুছে ফেলা যায়নি, কারণ দলটির জন্ম হয়েছিল এই মাটি থেকেই। গড়ে ওঠার পেছনে ছিল এ মাটির সূর্যসন্তানেরা আর প্রচুর পরিমাণে ত্যাগী নেতাকর্মী, যারা কারও হুকুমের অপেক্ষা না থেকেও দলকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল সামনের দিকে এবং আশায় ছিল কবে আসবে তাদের নেতা। নেতা এলেন এবং হালও ধরলেন। দলের ভেতরে আবারও প্রাণ ফিরে এলো। আবারও লড়াইয়ের আরেক নাম হয়ে উঠলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

ঐতিহ্যবাহী এই দলটি বর্তমানে নতুন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে, যার সামনে আছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। যার নেতৃত্বে প্রশংসা আজ দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের সীমানায় আলোচিত। তবে একটি বিষয় ভুলে গেলে চলবে না, ঐতিহ্যবাহী এ দলটিকে টিকে থাকতে হবে। এই বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই প্রয়োজন। আজকে আমি যে এই আশা ব্যক্ত করছি তার পেছনেও আমার একটাই স্বার্থ। আর সে স্বার্থ হচ্ছে আমার অস্তিত্বের স্বার্থ। আমার পরিচয়কে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারে, আমার দেশকে উন্নত দেশের কাতারে নেওয়ার স্বপ্ন দেখাতে পারে, তলাবিহীন ঝুড়ি ট্যাগ থেকে মুক্তি দিতে পারে, অর্থনৈতিক সক্ষমতার স্বপ্ন দেখাতে পারে, এমন নেতা আমার ৪২ বছরে আগে পাইনি কখনও। আর এই একটি স্বার্থেই আমি চাই আওয়ামী লীগ যেন তার জন্মের ঐতিহ্য থেকে সরে না আসে। আওয়ামী লীগের একটাই ভিত্তি, সেটা হচ্ছে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস। এ বিশ্বাসকে আঘাত করে এমন কাজ থেকে বিরত থাকবে দলটি। জনস্বার্থকে বিঘ্নিত করে এমন রাজনীতির চর্চায় যেন জড়িয়ে না পড়ে, এটুকু আশাই কেবল করা যায়।

বঙ্গবন্ধু যে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষতার স্বপ্ন নিয়ে দলটিকে গড়তে চেয়েছিলেন, প্রতিটা সৈনিক যেন সেই স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে দেশ গড়ায় ভূমিকা রেখে যায়, একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আজকের এই ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এটাই চাওয়া। ‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস নয়, ঐতিহ্য ও উন্নয়নের শপথে নতজানু নয়’—এই শপথ নিয়ে এগিয়ে যাক ঐতিহ্যের ধারক এ দলটি।

লেখক: কলামিস্ট

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘রানা প্লাজার দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ করতে হবে’
‘রানা প্লাজার দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ করতে হবে’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাকি দুই টি-টোয়েন্টিতে অনিশ্চিত রিজওয়ান
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাকি দুই টি-টোয়েন্টিতে অনিশ্চিত রিজওয়ান
প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে বিএনপি নেতা বললেন ‘রিজভী ভাই আমাকে ফোন করেছিলেন’
প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে বিএনপি নেতা বললেন ‘রিজভী ভাই আমাকে ফোন করেছিলেন’
‘যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে সামাজিক কুসংস্কার’
‘যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে সামাজিক কুসংস্কার’
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ