সোহরাব সেপেহরি (১৯২৮-৮০) গত শতাব্দীর কবি হলেও তাকে আধুনিক ইরানের প্রধান কবিদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শুধু কবি নয়, চিত্রকর হিসেবেও তিনি বিখ্যাত। চিত্রশিল্পীর দৃষ্টি আর ইরানি আধ্যাত্মবাদের সংমিশ্রণে তিনি কবিতার নিজস্ব জগত গড়েছেন। নিচের তিনটি কবিতায়ও তার ইন্দ্রিয়াতীত ভাবনার উপস্থিতি লক্ষ্যণীয় ।
প্রসঙ্গত, তৃতীয় কবিতাটির প্রথম লাইন থেকে ইরানি চলচ্চিত্রকার আব্বাস কিয়ারোস্তামী তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘বন্ধুর বাড়িটা কোথায়’(খনে-ইয়ে দুস্ত কোজাস্ত)-এর নাম গ্রহণ করেছিলেন।
ঘাস থেকে ঘাসে
এই অন্ধকারে
এক হরিণশাবকের কথা ভাবি
যে আসবে এবং
আমার অবসাদের ঘাসগুলো খেয়ে যাবে
এই অন্ধকারে
টের পাই আমার দুহাত
বৃষ্টির দিকে প্রসারিত আর ভেজা
যে বৃষ্টি ভিজিয়েছে মানুষের আদিম প্রার্থনা
এই অন্ধকারে
দরজা খুলে প্রাচীন ঘাসদের ডাকি
সেই সোনালী রঙের দিকে
পৌরাণিক দেয়ালে দেয়ালে
আমরা যার তামাশা দেখেছি
এই অন্ধকারে
উৎসমূলগুলো দেখি
আর
মৃত্যুর নতুন গজানো চারার জন্য
জলের অর্থ রেখে যাই
দৃষ্টিকোণে মরূদ্যান
যদি আমার সন্ধানে আসো
মনে রেখো আমি কোনো স্থান নই
স্থানিক মাত্রা পেরিয়ে আমি এমন এক স্থান
যেখানে বাতাসের শিরায় শিরায় বুনোফুল নাচে
আর দূরবর্তী অরণ্যের খবর নিয়ে আসে
যেখানে বালিতে সেই দক্ষ অশ্বারোহীর পদচিহ্ন
যে আফিমের পাহাড় বেয়ে শিখরের দিকে গেছে
স্থানের সীমানা পেরুলে আকাঙ্ক্ষার ছাতা খুলে যায়
পাতার গোড়ায় তৃষ্ণার বাতাস লাগতেই
বৃষ্টির ঘণ্টা বেজে ওঠে
মানুষ এখানে একা
আর এই নির্জনতায়
জ্ঞানবৃক্ষের ছায়া অনন্ত অবধি প্রসারিত
যদি আমার সন্ধানে আসো
ধীরে আর কোমলভাবে এসো
যেন মাটির পাত্রের মত নাজুক আমার নির্জনতা
ভেঙে না যায়
পথনির্দেশ
“বন্ধুর বাড়িটা কোথায়?”
প্রত্যুষে এক ঘোড়সওয়ার জিজ্ঞেস করে
আকাশ থমকে গেল
দু’ঠোঁটের কোণে ফোটানো আলোর ডালপালা
বালির অন্ধকারকে দান করে
পথচারী তাকে দূরের একটা সাদা পপলার গাছ দেখালো
বললো:
“ওই গাছটার ঠিক আগে
বাগানের মধ্য দিয়ে একফালি পথ যা বিধাতার স্বপ্নের চেয়েও সবুজ
সেখানে ভালোবাসা সত্যের নীল ডানার মত দৃশ্যমান
সে গলির শেষ মাথা পর্যন্ত যাও
সেখানে বুঝদারির সীমানার বাইরে
নির্জনতার ফুলের দিকে মুখ ফিরিও
ফুলের দিকে দুই কদম বাকি থাকতে
পৃথিবীর পৌরাণিক অমরত্বের স্থায়ী ঝর্ণার পাশে থেমো
তখন একটা স্বচ্ছ ভয় তোমাকে জড়িয়ে ধরবে
সেখানে স্থানের খাঁটি তারল্যে
তুমি পাতার মচমচ ধ্বনি শুনতে পাবে
দেখতে পাবে সোজা উঁচু পাইনের ডগায়
একটা শিশু
আলোর বাসা থেকে পাখির ডানা তুলে আনছে
তাকে জিজ্ঞেস করো:
বন্ধুর বাড়িটা কোথায়”