X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যর্থ হবে জেনেই ট্রাম্পের পরিকল্পনা সমর্থন করছেন নেতানিয়াহু?

বিদেশ ডেস্ক
৩১ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:৫৮আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২০, ২৩:৫১

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা ও জামাতা জ্যারেড কুশনারের শান্তি থেকে সমৃদ্ধি পরিকল্পনার অনেক কিছু নিজেই হয়তো লিখতেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু। পুরো পরিকল্পনাকে নেতানিয়াহুর বড় ধরনের সাফল্য হিসেবে পড়ে ফেলা যায়। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তিনি চান এটি সফল হোক। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে এমন কথাই তুলে ধরেছে।


ব্যর্থ হবে জেনেই ট্রাম্পের পরিকল্পনা সমর্থন করছেন নেতানিয়াহু?

১৯৪৭ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘে পৃথক ইহুদি ও আরব রাষ্ট্রের পরিকল্পনার ঐতিহাসিক ভোটাভুটি নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটি পূর্ণ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছিল। ওই বিজ্ঞাপনের শিরোনাম ছিল, বিভাজন ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান করবে না!

ইউনাইটে জায়োনিস্ট-রেভিশিওনিস্ট অব আমেরিকার পক্ষ থেকে ওই বিজ্ঞাপনটি প্রচার করা হয়েছিল। সংগঠনটির পক্ষ থেকে ওই পরিকল্পনার সমালোচনা করে দাবি করা হয়েছিল, এতে ইহুদিদের ঐতিহাসিক মাতৃভূমি কেড়ে নেবে। সংগঠনটির একজন নির্বাহী পরিচালক ছিলেন এবং যিনি বিজ্ঞাপনের খসড়া তৈরি করেছিলেন তিনি হলেন ড. বি. নেতানিয়াহু।

৭২ বছর পর আরেক বি. নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রে হাজির হন আরেকটি নতুন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরতে। বেনজিয়ন নেতানিয়াহু যে বিভাজন পরিকল্পনার সমালোচনা করেছিলেন এবং তার ছেলে বেনিয়ামিন সম্প্রতি যে পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে।

১৯৪৭ সালে যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রস্তাব করা হয়েছিল তাতে পুরো ভূখণ্ডের ৪৩ শতাংশ ছিল। ২০২০ সালের পরিকল্পনায় পুরো ফিলিস্তিন টুকরো টুকরো খণ্ডাংশ। ৭২ বছর আগের পরিকল্পনায় জেরুজালেম ছিল আন্তর্জাতিক শহর, কিন্তু ২০২০ সালে তা পুরোপুরি ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে। তবে ইসরায়েলি ডানপন্থীদের আশঙ্কা, উভয় পরিকল্পনার নীতি একই রয়েছে।

এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা পুরোপুরি ইসরায়েলের পক্ষ ঘেঁষা এবং আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন কোনও ফিলিস্তিনি নেতাই তা গ্রহণ না করলেও, তাতে গুরুত্বপূর্ণ ইহুদি ভূখণ্ড জুডিয়া ও সামারিয়া (পশ্চিম তীর) অন্য রাষ্ট্রের অধীনে দেওয়া হয়েছে।

এ কারণে ডানপন্থী, ধর্মীয় রাজনীতিক, যেমন নাফতালি বেনেট ও বেজালেল স্মটরিখ কিংবা ইয়েশা কাউন্সিল অব সেটেলমেন্টের নেতারা ইসরায়েলি দখল অভিযানকে উচ্চকণ্ঠে সমর্থন করলেও পুরো পরিকল্পনার অন্য বিষয়গুলো নিয়ে ঘোর আপত্তি জানাচ্ছেন। ইসরায়েলের ঐতিহাসিক পুরো ভূখণ্ডে ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় তাদের যে আদর্শ রয়েছে, পরিকল্পনাটি সেই আদর্শের বিরোধী।

এই পরিকল্পনা সমর্থন করে নেতানিয়াহু কি বাবার সংশোধনবাদী নীতি লঙ্ঘন করেছেন? ১৯৯৩ সালের ‘অ্যা প্লেস অ্যামং দ্য নেশন্স’ বইয়ের হালনাগাদ সংস্করণ ‘অ্যা ডিউর‍্যাবল পিস’ নামের বইয়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটে নিজের সমাধান তুলে ধরেছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ২০০০ সালের সংশোধিত সংস্করণে ‘ওসলো প্রক্রিয়াকে ব্যর্থ’ উল্লেখ করে তিনি স্পষ্ট করেছিলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি শান্তির নয়, বিপর্যয়ের নীতি।

নেতানিয়াহু যা করতে রাজি ছিলেন সেগুলোর মধ্যে ছিল নিজেদের শাসন পরিচালনার জন্য ফিলিস্তিনিদের কিছু ক্ষমতা দিতে। তবে এতে রাষ্ট্র হিসেবে সাধারণত যেসব আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার থাকে সেগুলো ছিল না।

২০০৯ সালের জুনে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চাপে নেতানিয়াহু কিছুটা নিজের অবস্থান থেকে সরে আসতে শুরু করেছিলেন। এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, যদি বেসামরিকীকরণের নিশ্চয়তা, ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলকে যদি ফিলিস্তিন স্বীকৃতি দেয় তাহলে তিনি সত্যিকার শান্তিচুক্তিতে রাজি আছেন। ইহুদি রাষ্ট্রের পাশে একটি বেসামরিকীকৃত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র।

কিন্তু ঘনিষ্ঠভাবে নেতানিয়াহুর ওই ভাষণ খেয়াল করলে দেখা যায়, তিনি অবস্থান পাল্টেছেন শব্দার্থিকভাবে। ভবিষ্যৎ শান্তিচুক্তিতে তিনি বসতি সরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি হননি। বলেছেন, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামূলক সীমান্ত থাকবে। তিনি জোর দিয়েছিলেন, ফিলিস্তিনিরা যেন ইসরায়েলকে ইহুদিদের জাতীয় ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং জেরুজালেম থাকবে ইসরায়েলের রাজধানী।

অন্য কথায়, নেতানিয়াহু জানতেন ফিলিস্তিনিরা এই প্রস্তাব কখনও মেনে নেবে না। এটি হলো সেই ‘নিজস্ব-সরকার’ যা ৯ বছর আগে তিনি বইয়ের সংশোধিত সংস্করণে উল্লেখ করেছেন। তিনি শুধু ওবামার চাপের কারণে কিছুটা প্রসন্ন হয়েছিলেন। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বিষয়ে তখনও নেতানিয়াহুর অবস্থান পাল্টায়নি, যা এখনও অব্যাহত আছে।

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে কেমন অর্থনৈতিক সুবিধা পাবে সেটাতে জোর দিয়ে অনেক কথা বলেছিলেন। দাবি করেছেন, ‘নতুন সম্মানজনক ভবিষ্যৎ, আত্মনির্ভরতা ও জাতীয় গর্ব’ নিয়ে ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘আশা, আনন্দ, সুযোগ ও সমৃদ্ধি’ অপেক্ষা করছে।

কিন্তু ওই দিন নেতানিয়াহু একবারও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কথা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। শুধু একবার ট্রাম্পকে বলেছেন, ‘আপনার শান্তি পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের জন্য পথ খুলে দেবে’। তবে তার কথায় মনে হয়নি ফিলিস্তিনিরা এই পথ ধরে এগুবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বলেছেন, আমি জানি এই পথের শেষে পৌঁছাতে তাদের অনেক দীর্ঘ সময় লাগবে। এমনকি এই পথের দিকে শুরুর পদক্ষেপ নিতেও তাদের অনেক সময় লেগে যেতে পারে। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা যদি সত্যিকার অর্থে এই পথে এগুতে চায়, তারা যদি সত্যিকার অর্থে ইহুদি রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা যদি পরিকল্পনার সব শর্ত মেনে আগাতে চায়, তাহলে ইসরায়েল পাশে থাকবে।

/এএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
সর্বশেষ খবর
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!