X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভাইরাস ও অভ্যাস

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১১ মার্চ ২০২০, ১৪:৪৫আপডেট : ১১ মার্চ ২০২০, ২২:১২

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা জানাই ছিল বাংলাদেশ বাদ যাবে না, ভাইরাস আসবেই। একশ’রও বেশি দেশে এখন করোনা ভাইরাস তার রাজত্ব কায়েম করছে। বাংলাদেশে এসেছে ইতালি থেকে আসা দু’জনের মাধ্যমে এবং আক্রান্ত আরও একজন তাদের পরিবারেরই। তবে আশার কথা এই, এখন পর্যন্ত নতুন কেউ শনাক্ত হয়নি এবং যারা শনাক্ত হয়েছেন, তাদের অবস্থা স্থিতিশীল।
সরকারকে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে হয়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সঙ্গে তার নিজের এবং দেশের মানুষের আবেগ জড়িত থাকার পরও করোনা ভাইরাস ইস্যুটাকে তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আপাতত ছোট পরিসরেই সারাদেশে উদযাপিত হবে।
কিন্তু ধন্যবাদ দেওয়া যাচ্ছে না সেসব ব্যবসায়ীকে, যারা এ পরিস্থিতিতে স্যানিটাইজার আর মাস্কের দাম বাড়িয়ে দেদার মুনাফা লুটেছে, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে একটা আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে চেষ্টা করছে। তবে একই সঙ্গে যেসব মানুষ এই পণ্য দুটি ক্রয় করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন, তাদেরও সমভাবে নিন্দা করা ছাড়া আর কিছু বলার থাকছে না। 

চিকিৎসকদের দিক থেকে, সরকারের তরফে বলা হচ্ছে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে। তবে ছোট দেশ আর অনেক বেশি মানুষ যে দেশের বাস্তবতা, সেখানে এরকম প্রাথমিক সতর্কতা অবলম্বন আমাদের পক্ষে কঠিন। জনপরিবহনের ভিড়ে অন্যের ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলাও অসম্ভব। কিন্তু কিছু কাজ আছে, যা সরকারকেই বলতে হবে কেন? ভাইরাসের আগমনে তো নিজেদেরই সচেতন হওয়ার কথা। যেমন, যত্রতত্র থুতু ফেলা, পানের পিক ফেলা এবং নাক ঝাড়া বন্ধ করতে কি সরকারের আদেশ অনুরোধ লাগবে? আরেকটি কথা মানানোও বেশ কঠিন, আর সেটি হলো হাত ধোয়া। আমরা কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া দাওয়া করলেও, সাবান দিয়ে কব্জি ডুবিয়ে ধুতে চাই না। এই অভ্যাসটি করতে হবে। করোনার হানা ঠেকাতে হাত ঠিকমতো পরিষ্কার করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ সংক্রামক অসুখ হাত থেকেই ছড়ায়। তাই হাত ধোয়ার সময় সাবান বা ইথাইল অ্যালকোহল মেশানো হ্যান্ডওয়াশের বিষয়টি মাথায় রেখে, নিয়ম মেনে হাত ধুতে হবেই। এতেই অনেকটা নিরাপদে থাকা সম্ভব।

করোনা ভাইরাসের আগ্রাসনে সারা বিশ্বে মানুষের আচরণে বড় পরিবর্তন এসেছে। পশ্চিমা বিশ্বে স্বাভাবিক দুটি কাজ—হাত মেলানো আর আলিঙ্গন করা বন্ধ হয়ে গেছে। এই সময়টায় আমি চেন্নাই হয়ে দিল্লিতে। অন্যান্য বছর হলি উৎসবের যে উন্মাদনা থাকে, এবার তা একদম নেই ভারতে। কয়েকদিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে যখন জানালেন করোনা ভাইরাস-উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি হোলি উৎসবে যোগ দিচ্ছেন না, তখন থেকেই সতর্ক মানুষ ও তার প্রশাসন।

আমাদের প্রধান বিমানবন্দর হযরত শাহজালালে এখন কী পরিস্থিতি জানা নেই, তবে ৭ মার্চ যখন দেশ ত্যাগ করি তখন পরিস্থিতি ছিল খুবই ঢিলেঢালা। এখন হয়তো একটা সাড়া পড়েছে, কারণ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নজরদারিতে আছেন।

রাষ্ট্র তার মতো ব্যবস্থা নেবে, এটা আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু নাগরিক হিসেবে আমাদের নিজেদের সচেতনতার গুরুত্ব অনেক বেশি। মাস্ক আর স্যানিটাইজার নিয়ে যে কাণ্ড হলো, তাতে বোঝা যায় আমাদের অভ্যাস পরিবর্তনের কোনও লক্ষণ নেই। নেই বলেই, সামাজিক মাধ্যমে আমাদের অনেকেই আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। করোনার প্রভাব যতটা ভয়াবহ, তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহভাবে সামাজিক মাধ্যমে এর সম্পর্কে গুজব ছড়ানো। এই রোগ সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই। এতে অকারণে বাড়ছে আতঙ্ক। এমনকি মূল ধারার কিছু কিছু গণমাধ্যমও এই দোষে দুষ্ট। তারা এমন শিরোনাম করছে যেন দেশ স্তব্ধ বা অচল হয়ে গেছে।

আরেকটি বিষয়—অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে, মনে করা হচ্ছে করোনা হলেই মৃত্যু অনিবার্য। গোটা বিশ্বে এখন পর্যন্ত এক লাখের কিছু বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাতে মৃত্যুর সংখ্যা তিন হাজারের আশপাশে। করোনায় মৃত্যুর হার ২ শতাংশেরও কম।

ব্যক্তিগত আচরণ বদলানোই বড় প্রতিরোধ। ইউরোপের দেশগুলোতে কেউ আর কারও সঙ্গে হাত মেলায় না, আলিঙ্গনও করছে না। তারা তাদের দীর্ঘ সময়ের অভ্যাস যদি বদলাতে পারে, আমরা কেন পারবো না নিজেদের বদলাতে। সরকারকে দোষ দেওয়া সহজ, কিন্তু নিজেকে বদলানো কঠিন নয়, যদি সত্যি নিজে বাঁচতে চাই, সমাজকে বাঁচতে দিতে চাই।

তবে সরকারকেও বুঝতে হবে, সবার চাওয়া শেষ পর্যন্ত তার কাছেই। এর আগে বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লু ও বার্ড ফ্লু নিয়েও এক ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, নিপাহ ভাইরাসও সারাদেশকে আতঙ্কিত অবস্থায় ফেলে দিয়েছিল। তাই আমাদের বিমানবন্দরগুলোতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া জনস্বার্থেই বিশেষ জরুরি। করোনা ভাইরাস যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে না পারে সে ব্যাপারে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের দায়। বিদেশ থেকে আসা নাগরিকদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া উচিত হবে। কারণ, আমরা জানি সংক্রামক রোগবালাই ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশি সময়ও লাগে না। 

লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি ও সারাবাংলা

 

/এসএএস/এমএমজে/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নারী উদ্যোক্তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবহার বিষয়ক প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠিত
নারী উদ্যোক্তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবহার বিষয়ক প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠিত
ইউক্রেনকে ৬২ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য
ইউক্রেনকে ৬২ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য
ছেলেকে প্রার্থী করায় এমপি একরামুলকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি
ছেলেকে প্রার্থী করায় এমপি একরামুলকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ টফিতে
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ টফিতে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ