X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

আড়াই লাখ জীবন বাঁচাতে পারবো কি?

কাজী জাহিন হাসান
২২ মার্চ ২০২০, ১৭:০৯আপডেট : ২২ মার্চ ২০২০, ১৭:১২

কাজী জাহিন হাসান বাংলাদেশে কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) সংক্রমণে দুইজনের মৃত্যুর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশের বেশিরভাগ হাসপাতালে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের কোনও কিট নেই; চিকিৎসকরা বলছেন (অফ দ্য রেকর্ডে) গত কয়েক মাসে প্রচুর সংখ্যক ‘অস্বাভাবিক নিউমোনিয়ায়’ আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন, তারা কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন। ফলে কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে।     
গত কয়েক মাসে প্রচুর পরিমাণ কোভিড-১৯ সংক্রমণ হওয়া বিভিন্ন দেশ (যেমন, ইতালি) থেকে ফিরে এসেছেন বহু বাংলাদেশি; এসব বিদেশফেরতকে নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছিল, কিন্তু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো বলছে তাদের অনেকেই তা মানেননি।
খুব সম্ভবত কয়েক জন বিদেশফেরত সংক্রমিত মানুষ ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিয়েছেন আর সেকারণে খুব শিগগিরই আমরা বিপুল সংখ্যক আক্রান্ত দেখতে পারবো। সম্প্রতি কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়া বেশ কয়েকজন বিদেশফেরতদের পরিবারের সদস্য। ফলে এটা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিরা পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকিতে ফেলেছেন। 

এই মুহূর্তে জরুরি হলো যারা বর্তমানে নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে আছেন বা সম্প্রতি ছিলেন তাদের সবার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া। বিদেশফেরত এবং তাদের সঙ্গে থাকা পরিবারের সদস্যদের কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরীক্ষা করা প্রয়োজন; আর কারও সংক্রমণ ধরা পড়লে তাকে একটি নিরাপদ কোয়ারেন্টিন ফ্যাসিলিটিতে নিয়ে যাওয়া দরকার।

গত কয়েক মাসে অস্বাভাবিক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের এবং তাদের সঙ্গে থাকা পরিবারের সদস্যদেরও পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কারও সংক্রমণ ধরা পড়লে তাদেরও নিরাপদ কোয়ারেন্টিন ফ্যাসিলিটিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

কোভিড-১৯ এর সম্ভাব্য বিপদকে আমাদের অবহেলা করা উচিত হবে না। অন্য দেশগুলোতে আমরা দেখেছি স্বাস্থ্যবান মানুষদের মধ্যে এই সংক্রমণে মৃত্যুর হার দুই শতাংশ, কিন্তু ইতোমধ্যে আগে থেকেই অন্য কোনও শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত মানুষের মধ্যে এই হার অনেক বেশি।

ঢাকা শহরের ঘনবসতিপূর্ণ বস্তিগুলোতে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের বাস। এই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সম্ভবত সামাজিক শিষ্টাচার (সোস্যাল ডিসটান্সিং) মেনে চলা সম্ভব হবে না, যদি না আমরা আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারি, এবং তাদের কোয়ারেন্টিন ফ্যাসিলিটিতে সরিয়ে নিতে পারি। এসব ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব না হলে বস্তির সব মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে। 

বস্তিবাসীর অনেকেই ইতোমধ্যে ডায়রিয়া ও টাইফয়েডে (বিশুদ্ধ পানির অভাবে এগুলো সাধারণ অসুখ) আক্রান্ত হওয়ায় তাদের মধ্যে (কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে) পাঁচ শতাংশ মৃত্যু হারের আশঙ্কা করা যৌক্তিক।

হিসাব খুবই সহজ: ৫০ লাখ সম্ভাব্য আক্রান্তের মধ্যে পাঁচ শতাংশের মৃত্যু হলে ঢাকা শহরের বস্তিতেই আমাদের আড়াই লাখ মানুষের মৃত্যু দেখতে হবে, যদি সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া না হয় (জরুরি ভিত্তিতে)।

আমাদের যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ কোভিড-১৯ পরীক্ষার কিট থাকে তাহলে ঢাকার বস্তিতে বসবাসকারী সম্ভাব্য সব কোভিড-১৯ রোগীর পরীক্ষা করে ফেলা উচিত। সংক্রমণ ধরা পড়লে তাদের অবশ্যই কোয়ারেন্টিন ফ্যাসিলিটিতে সরিয়ে নিতে হবে। সমস্যা হলো সামান্য অসুস্থতায় আক্রান্ত মানুষেরা পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যাবেন না; আসলে তাদের যাওয়াও উচিত হবে না কারণ হাসপাতালে গেলে তারা আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন (যদি তারা আগে থেকে আক্রান্ত না হন)।

সামান্য অসুস্থতায় আক্রান্ত মানুষও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। আমরা সংক্রমণের গতি কমাতে পারবো, কিন্তু থামাতে পারবো না।

সম্প্রতি জানা গেছে, দুটি কোয়ারেন্টিন ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। এটা স্বাগত জানানোর মতো উদ্যোগ; ‘নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিন’ কাজ না করায় এখন কোয়ারেন্টিন ফ্যাসিলিটির খুব দরকার। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের সমাজে যেখানে একটি ছোট জায়গায় পরিবারের অনেক সদস্য একসঙ্গে বাস করে সেখানে ‘নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিন’ কাজে আসবে না।  

চীনে হোটেলগুলোকে কোয়ারেন্টিন ফ্যাসিলিটিতে পরিণত করা হয়; এটা চমৎকার সমাধান ছিল; কোয়ারেন্টিন ফ্যাসিলিটিকে অবশ্যই পরিষ্কার হতে হয় এবং কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষদের অবশ্যই খাবার দিতে হয়। বহু হোটেল এখন খালি পড়ে রয়েছে; সেগুলোকে কোয়ারেন্টিন ফ্যাসিলিটিতে পরিণত করতে মালিকদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা করা উচিত।

সব হাসপাতালে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ সংক্রমণে সন্দেহভাজন রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসক ও নার্সদের সঠিক পিপিই’র (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) ব্যবস্থা করাও আবশ্যক। বহু সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হয়ে পড়তে পারে।

ঢাকার বস্তিতে যদি করোনা ভাইরাসের বিস্তার থামাতে চাই, তাহলে অবশ্যই হাজার হাজার মানুষকে কোয়ারেন্টিনে পাঠাতে হবে, লাখ লাখ মানুষকেও পাঠাতে হতে পারে। প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিন করতে বিশ্বের বহু শহর ‘লকডাউন’ করে দেওয়া হয়েছে।

লকডাউনে সাধারণত সব ধরনের প্রকাশ্যে জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট, বেশিরভাগ খুচরা দোকান এবং বেশিরভাগ অফিস; ফার্মেসি, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও সুপারমার্কেট বাদে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ঢাকা শহর লকডাউন করা হলে ব্যাপক দুর্ভোগ নেমে আসবে; কর্মস্থল বন্ধ হয়ে গেলে বহু শ্রমজীবী মানুষ খাবার কেনার সক্ষমতা হারাবে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো খাবার রেশনিং ব্যবস্থার মতো করে লাখ লাখ মানুষের খাবার সরবরাহ করতে না পারলে সম্ভবত সরকারও লকডাউন কার্যকর করতে পারবে না।

লেখক: চেয়ারম্যান, টু-এ মিডিয়া লিমিটেড।

 

 

/জেজে/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
ইরান হামলা বন্ধ করলেও ছায়াশক্তিরা সক্রিয়
ইরান হামলা বন্ধ করলেও ছায়াশক্তিরা সক্রিয়
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ