পথে পাওয়া কবিতা
১.
প্রবৃত্তি আমায়ও তাড়ায় যেমন স্বচ্ছন্দ মেঘ
বিবসন দেহ মুখোমুখি কেন নগ্ন আকাশের!
কী অর্থ খুঁজছি ও পরম এতসব অপ্রয়োজনে
সঞ্চয় কিছুই নাই ইহকালের পরকালের
সঞ্চরণশীল মেঘে মেঘে ছড়িয়েছি এই মন
বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে ছড়াচ্ছে মন-জমাট-মেঘ-ভার
আজব রূপের মুখোমুখি আমি-তুমি-হাহাকার
ঘণ্টা শেষে সব সবাই ফিরে চলছে ঘরে ঘরে
কেন যে বিভ্রমে ফিরতে পারি না ঘরে অবসরে
গান বাজছে আকাশে-মাটিতে সুরে-লয়ে-শৃঙ্গার
অথচ অঙ্গার ছড়ানো ঘরে-অফিসে-নদীতেও
কী করে ভুলি পোড়া মুহূর্ত, যদিও উঠছে সূর্য
শৃঙ্গার-আগুন-নদী কিছু নয় এই স্বভাবের—
অজানিতে ফুটে ফুল, বাজছে গান মেঘে-বাতাসে
২.
পরিতাপ কিছু নেই তবে ঘুড়ি উড়ে উড়ে ঠেকে
গেছে বিদ্যুৎ খুঁটিতে, তড়িৎ চলে যাব এমনও না—
কেন যে বিভ্রমে শিমুলের তুলো ভাসছে বাতাসে
মিলাতে পারি না এই আর ওই পারের সংকট
হাট ভাঙা মানুষেরা ফিরছে ঘরে—পাশেই নদী
আমার স্বভাব ভেঙে আছে নদী ও মাটিতে আজ
কোলাহল থেকে নিঃশব্দতা থেকে মুক্তি পাবে তুমি!
ব্যর্থতায় জড়িয়ে আছে দোটানা ও নতুন শব্দ!
কেন যে বারবার হিসাব মেলাতে চাও অথচ
সকল হিসাব-কানুন উড়ছে অনর্থ অভ্যাসে
অভ্যাস ভেঙে জড়তা ভেঙে জ্যোৎস্নায় বনে কেউবা—
অথচ অদৃশ্যের খেলার পুতুল হচ্ছো তুমিও—
জানালা দরজা ভেঙে কোন পৃথিবীতে যাবে আজ!
নদী-সমুদ্র একই স্বভাবে শুয়ে আছে সর্বত্র।
আকৃতি ও মুখোশ
এই আকারে আবদ্ধ হয়ে আছো
নিরাকারে কতটা জ্বলজ্বলে হয়ে জ্বলো।
অশ্রু মেঘের সঙ্গে উড়ছে
পাহাড়ের সঙ্গে সংঘর্ষে ঝড়-বৃষ্টি-বিদ্যুৎ
আচানক বেহুলার বাঁশি শুনে মধ্যরাতে ভাঙে ঘুম
উর্বরতার ভেতরে দ্যাখো কীটনাশকের ঘ্রাণ!
বন্যায় মড়কে বহু লাশের স্তূপ
এত কিছুর পর কেন হাসো পরম!
জ্বলজ্বলে বলে সূর্যের কাছে যাই
কেন পরম অন্ধকারে জ্বলে থাকে তারাপুঞ্জ।
১৩.০৩.২০১৯
অমৃত গুঞ্জনে
সমুদ্রে ভ্রমণে কেন এত তৃষিত আশ্বাস
নৈঃসঙ্গ্যের ঘুড়ি উড়ছে আকাশে নীলে।
চিল ও বিমান ওড়ার যতটা তফাৎ
সেই দূরত্বে উড়ছি আমিও।
যদিও পৌঁছাই না কোনো গন্তব্যে!
উড়ছি বেহিসাব মাতাল বাতাসে!
সমুদ্র আমায় নাও অতল জলে!
বাতাস আমায় ওড়াও নিঃশব্দ পাখায়!
নীলিমা আমায় ডুবাও গভীরে নীলে!
০৯.০১.২০১৯
অকবিতার খসড়া ১
পাহাড়ে উঠেছি আমি
আমিও ব্যথায় কোকিলের গান শুনেছি
নীলে-সাদায় কতটা ফারাক
ফারাক কতটা দিনে-রাতে
মেঘে-মাটিতে আটকে আছি
গ্রহণ করো উষ্ণ-কোমলে
পারঙ্গম আমার ডানা উড়ছে মেঘে
যদিও সঙ্গীন নেমে আসি ধূসর মাটিতে।
অকবিতার খসড়া ২
আহত সিংহের গর্জন শুনছি মেঘে
মাটিতে বুনছো কেন কোমল বীজ
ব্যথায় দ্যাখো গাছ ছুঁয়ে আছে নীল!
ডুবতে চেয়েছি কোমল মুহূর্তে সঙ্গীন!
বন্দি আজ পাখির বাসাতে একা
দিন-রাতগুলো মাখনের মতো নয়!
জয় করবে কোনদিন কোন তারা-জ্বলা-রাত
জয়ে-পরাজয়ে-দিনে-রাতে-একাকার!
অসমাপ্ত
সমুদ্র আমার কাছেই থাকে
আমাকে আহ্বান করে প্রায়ই ভ্রমণে
সমুদ্রে-গহনে তিমির সাঁতারের শব্দ শোনাতে চায়
প্রাত্যহিকতায় এমন ভাঙা আমি
কখনো সমুদ্রে যাওয়া হয় না
অসম্পূর্ণ উদ্যোগ থেকে
সব আয়োজন থেকে
মাটি ও আকাশের সব প্রস্তুতি
আমায় ঘিরেছে অন্ধ-অন্ধকারে
নৈঃসঙ্গ্যের কাছে পূর্ণতা
হল্লার কাছে গোপনতা রেখে
মুহূর্তগুলো ঝুলছে শূন্যে।
২৮.১২.২০১৮