X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসারের ‘ফ্রন্টলাইন স্টাফে’র চাহিদা উপেক্ষিত

শাহানা হুদা রঞ্জনা
০৬ এপ্রিল ২০২০, ১৯:২৬আপডেট : ০১ মে ২০২০, ১৩:২৯

শাহানা হুদা রঞ্জনা করোনার জন্য দেওয়া সাধারণ ছুটি কেমন কাটাচ্ছে জানার জন্য ফোন করলাম ভাইয়ের কাছে। ফোন ধরলো তার স্ত্রী। জানালো আমার ভাই কাপড় ধুচ্ছে বাথরুমে, কাজেই পরে আমাকে ফোন করবে। আমি বললাম, বাহ ভালো তো, ঘরের কাজে তোমাকে সাহায্য করছে। বলল, উপায় নাই আপু, বাসায় গৃহকর্মী ছুটিতে, কাজ না করলে ভাত বন্ধ। শুধু কাপড় ধোয়াই না, আমার শরীরটা একটু অসুস্থ বলে অনেক কাজই করছে। এরপর উৎসাহ পেয়ে খোঁজ নিলাম আমার আরেক ভাইয়ের বাসায়। সে ডিম ভাজি, টেবিলে খাবার দেওয়া এবং তোলা, ফ্যান মোছাসহ বাথরুম ধোয়ার কাজগুলো করছে। ও খুব আনন্দ নিয়ে বলল, অফিসের কাজের ঝক্কির চেয়ে কিন্তু ঘরের কাজটা বেটার। পরিশ্রম হলেও টেনশন কম। এরকম আরও কিছু কিছু পুরুষের কাজের ফিরিস্তি পেলাম গত কয়েকদিনে। বিশেষ করে বাসার হেল্পিং হ্যান্ড ছুটিতে থাকাতে গৃহস্থালি কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক হয়েছে।
এই ছুটি ঘোষণার পরপরই দেখলাম বেশকিছু পুরুষ বন্ধুও ব্যাপকভাবে ঘরের কাজে নিযুক্ত হয়েছে। তারা শুধু নিযুক্ত হয়েই ক্ষান্ত হয়নি, ফেসবুকে ছবি দিচ্ছে, ভিডিও দিচ্ছে। তারা যে সত্যিই গৃহস্থালি কাজে হাত লাগিয়েছে, এর সচিত্র প্রতিবেদন। যাক ভালোই হলো। আমার প্রতিষ্ঠান মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বহু বছর যাবৎ ঘরের কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ করানোর জন্য নাটক, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, লেখালেখি, মানববন্ধন ইত্যাদি করে করে হয়রান হয়ে গিয়েছি। আর এই এক করোনাভাইরাস এসে আমাদের জীবনকে একেবারে পাল্টে দিলো। গৃহস্থালি কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলো।

নারীরা দেখলাম তাদের পুরুষ সহযোগীদের জন্য করোনাকালে কার্ডও বানিয়েছেন। লিখেছেন, ‘প্রিয় পুরুষ ভাইয়েরা—আপনি যে ঘরে বসে আছেন, খাচ্ছেন, ঘুমাচ্ছেন, সেটা আপনারই বাসা। নিজেকে মেহমান ভেবে ভুল করবেন না। যান ঘরের কাজে অংশ নিন।’ হ্যাঁ এটাই ঠিক। এদেশের অধিকাংশ পুরুষ নিজেকে মূল উপার্জনক্ষম মনে করে বলে নিজেকে সংসারের মেহমানই ভাবেন। যার স্ত্রী বাইরের কাজ করেন না, তিনি তো নিজেকে ভাবেনই। সেই সঙ্গে যার স্ত্রী চাকরি বা অন্য কাজ করে টাকা আয় করেন, তিনিও নিজেকে মেহমানই ভাবেন। তারা প্রত্যাশা করেন, তারা বাইরে থেকে ঘরে আসবেন আর এরপর তাদের প্রতি মেহমানের মতো আচরণ করা হবে। অথচ ঘরের স্ত্রী চাকরি বা ব্যবসা করলেও তাকেই ঘরের বাকি কাজগুলোও করতে হয়।

তাহলে কি আমরা ধরে নেবো এক করোনা এসে নারীর কাজ কমিয়ে দিলো? পুরুষরা কাজে হাত লাগিয়ে নারীকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন? একেবারেই চিত্রটি তা নয়। দেশে-বিদেশে দুর্যোগ-দুর্বিপাকে নারী আর শিশুই সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখে পড়ে।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বের সব দেশের নারীদের মতোই বাংলাদেশের নারীদের ভূমিকাই হবে মুখ্য। যেকোনও সমস্যা চলাকালে পরিবারের কাজের ভার নারীর কাঁধেই এসে পড়ে। একজন মা সংসারের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রধান আনন্দদাত্রী, খাদ্যের প্রধান জোগানদাতা, প্রধান সেবাদানকারী এবং প্রধান শিক্ষকও বটে। যখন কোনও জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তখন মা বা সংসারের নারী সদস্যটির সামনে সেই পরিস্থিতি ম্যানেজ করার মতো কোনও উপায় বাতলানো থাকে না। কিন্তু তাকেই সবধরনের ভীতি, ভার ও দুশ্চিন্তা বহন করতে হয়।

করোনাভাইরাস মায়েদের জন্য চরম মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে তারা ঠিকমতো বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। অন্যদিকে বিশেষ যত্নআত্তি সন্তানের প্রতিপালন, সংসারে বয়স্ক মানুষের দেখাশোনা এবং নিজের কাজের দায়িত্ব, ওয়ার্ক ফ্রম হোম সবই করতে হচ্ছে। এর বাইরে আরও আছে অর্থনৈতিক মন্দা বা বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আতঙ্ক। সংসারে সবার মুখে অন্ন জোগান দেওয়ার দায়িত্ব। সরকারি ছুটি শুরু হলেও ব্যাংকগুলো এখনও চলছে, অথচ ডে-কেয়ারগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংক কর্মী, ডাক্তার, নার্স ও সাংবাদিক মায়েদের দায়িত্ব আরও বহুগুণ বেড়ে গেলো।

বিশ্বজুড়ে মায়েরা সংসারে কেয়ার গিভার এবং গৃহস্থালি কাজের মানুষ হিসেবে বাবার চেয়ে দ্বিগুণ দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু যখন দেশে মহামারি শুরু হয়, তখন নারীরা বিশেষ করে নারী নেতৃত্বাধীন সংসারগুলো খুবই বিপদে পড়ে। যেমন, পড়েছেন হেনা বেগম। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টুকটাক পার্লারের কাজ করেন। গর্ভবতী মায়েদেরও সেবা-শুশ্রূষা করেন। ওই টাকা দিয়েই দুই ছেলেমেয়ের পড়ার খরচ চালান। সংসারেও টাকা দিতে হয়। তা না হলে একবেলাও ঠিকভাবে খাওয়া হয় না। স্বামী অস্থায়ী কাজ করেন। এখন করোনার জন্য কারোই কাজ নাই।

একই অবস্থা পুতুল রানীর। সে পথের পাশে চুড়ি বিক্রি করে দিনে, সন্ধ্যায় পিঠা অথবা পিঁয়াজু-বেগুনি। তার আয়েই তার তিন ছেলেমেয়ের খরচ চলে। এখন সব বন্ধ। বাড়িতে কোনও ভিটামাটিও নাই। কীভাবে ঘরভাড়া দেবে, কী দিয়ে ছোট ছেলেটার চিকিৎসা চালাবে সে জানে না। তার ছোট ছেলেটা ছোটকাল থেকেই অসুস্থ। এই একক মায়েদের চিন্তা দুর্যোগে আরও অনেক বেড়ে যায়। পুতুল রানী আরও যে সমস্যাটার কথা বলল, সেটা নিয়ে আমরা কখনও ভাবিই না। সে জানালো, ‘আপা আমি যেখানে থাকি, সেখানে ১৫-১৬ জনে এক বাথরুম ব্যবহার করে। সকালে পুরুষরা কাজে বাইর হইয়া গেলে, আমরা যে মাইয়ারা থাকি, তারা যাই। এখন তো কাজ নাই কারও। ২-৪ জন দ্যাশে চইলা গেছে, কিন্তু বাকি যারা আছে, তারাও অনেক। মাইয়া বড় হইছে। এই করোনা হইলো গরিব মাইয়াগো লাইগ্গা আপদের ওপর আপদ।’ সে বলল, ‘সরকারি সাহায্য না হইলে আমাদের না খাইয়া মরতে হইবো।’ এরকম বহু হেনা বেগম ও পুতুল রানী এখন অবরুদ্ধ ঢাকায় আটকা পড়ে আছেন।

একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরিরত নীলুফার জাহান বলেন, করোনাভাইরাস যেন সবকিছু সমস্যা নিয়ে আমাদের মতো মায়েদের ওপর জাকিয়ে বসলো। ‘আমার দুইটা ছোট বাচ্চা। দু’জনের স্কুল ও ডে-কেয়ার বন্ধ। সারাদিন ওদের দেখতে হচ্ছে। এই হাত ধুচ্ছে কিনা, মাটি থেকে কিছু তুলে মুখে দিলো কিনা, কোনও জিনিস না ধুয়েই হাত দিয়ে দিচ্ছে কিনা। এক বাচ্চার নাক দিয়ে সর্দি পড়া মাত্র টেনশনে মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্য বাচ্চা একবার কাশি দিলেও ভয় পেয়ে যাচ্ছি। আর সারাদিন রান্নাবান্না করতে করতে, ঘর পরিষ্কার রাখতে গিয়ে জীবন শেষ। সঙ্গে অফিসের কাজ।’ নীলুফারের স্বামী ব্যাংকার বলে অফিসেও যেতে হচ্ছে তাকে। সেটাও তার একটি বাড়তি চিন্তা। নীলুফার বলল, ‘খুবই হতাশাজনক অবস্থা আমার জন্য।’

‘যেকোনও ধরনের সমস্যা জেন্ডার অসমতাকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যায়।’ বলেছেন ইউএন উইম্যানের এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানবিক ও দুর্যোগ ঝুঁকি বিষয়ক অ্যাডভাইজার মারিয়া হল্টসবার্গ। সবসময় প্রমাণিত হয়েছে যেকোনও দুর্যোগে নারীরা অসমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

ইউনেস্কোর সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে মায়েরা বাসায় কাজের অসমান বোঝা বহন করেন। একারণে তারা হতাশাবোধ করেন। করোনার কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার মিসেস সুং এর মতো অনেক মাকে চাকরি গুটিয়ে বাচ্চাদের সময় দিতে হয়েছে। চাকরির ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার জেন্ডার অসমতা অনেকটাই নিচের দিকে। ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের তথ্য অনুযায়ী চাকরির বাজারে নারীর অংশগ্রহণের তালিকায় ১৫৫টি দেশের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান ১২৭। সেখানে মেয়েরা সংসারের কাজে বেশি সময় দিলে চাকরিচ্যুতির ভয় আছে। এখনও কর্মজীবী মায়েদের বোঝা বলে মনে করে অনেক অফিস। মনে করে বাচ্চা না থাকলে মেয়েরা কাজে বেশি সময় দিতে পারবে।

এমনকি জাপানের ক্ষুদ্র নারী ব্যবসায়ীদেরও কেউ কেউ মনে করেন বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ থাকা মানে মায়ের ওপর অতিরিক্ত কাজের ভার। এক সাক্ষাৎকারে একজন জাপানি মা বলেছেন, সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল তার টিন এই ছেলেকে ম্যানেজ করে ঘরে রাখা।

নারীর ওপর শুধু কি কাজের চাপ? সংসারের চাপ? বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মার্চ মাসে প্রকাশিত একাধিক রিপোর্ট ও সমীক্ষা বলছে, করোনার কারণে ঘরবন্দি বহু দেশেই পারিবারিক সহিংসতার ছবিটা একই রকম। ১৭ মার্চ থেকে লকডাউনে রয়েছে ফ্রান্স। তার ১১ দিন পরে সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ফ্রান্সে পারিবারিক সহিংসতা ৩০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। রাজধানী প্যারিসে পরিসংখ্যানটা আরও বেশি, ৩৬ শতাংশ। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সমীক্ষাও বলছে, লকডাউনে থাকা চীন ও আমেরিকাতেও বাড়িতে থাকা মেয়েদের ওপরে অত্যাচার অনেক বেড়েছে। সেসব দেশে হেল্পলাইনগুলো সচল। ইমেইল ও ফোনের মাধ্যমে তারা অভিযোগ গ্রহণ করছে।

আনন্দবাজারে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ভারতে গৃহবন্দি নারীর ওপর শারীরিক নির্যাতন বেড়ে গেছে বলে জাতীয় মহিলা কমিশনের তথ্য তুলে ধরে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই। উত্তর ভারত বিশেষ করে পাঞ্জাব থেকেই বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে পিটিআই জানিয়েছে। জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপারসন রেখা শর্মা বলেছেন, ‘বাড়িতে বসে হতাশায় ভুগছেন পুরুষরা। তাই মহিলাদের ওপর যাবতীয় হতাশা উগরে দিচ্ছেন।’

করোনাকালে বলা হচ্ছে নার্সরা সব হাসপাতালের ফ্রন্টলাইন স্টাফ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে এই আপৎকালীন সময়ে স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ খাতের শতকরা ৭০ ভাগ স্টাফই নারী। চীনা মিডিয়া তাদের নার্সদের প্রশংসা করলেও, নার্সদের কাজ করতে গিয়ে খুবই কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে। তাদের অনেককে মাথার চুল ফেলে ন্যাড়া হতে বাধ্য করা হয়েছিল। বিবিসি জানিয়েছে, একজন নার্স বলেছেন হাসপাতাল স্টাফরা খাওয়া, বিশ্রাম এমনকি টয়লেটে যাওয়ারও সুযোগ পেতো না এই ১০ ঘণ্টায়। এরমধ্যে মেয়েদের ওপর বোঝা ও বৈষম্যের মাত্রা ছিল আরও বেশি। হুবেই প্রদেশের করোনাভাইরাস সিস্টার সাপোর্ট ক্যাম্পেইনের এক কর্মকর্তা বলেছেন মেয়েদের ঋতুকালীন কোনও সুবিধা দেওয়া হতো না। এতগুলো মেয়ে যে কাজ করছে, তাদের সবচেয়ে জরুরি জিনিস এই ঋতুকালীন সুবিধা দেওয়াটা একেবারে উপেক্ষিত ছিল।

কাজেই পরিবারের পুরুষ সদস্যরা আপৎকালীন সময়ে যতটাই এগিয়ে আসুক না কেন, তা ক্ষণস্থায়ী এবং সংসারের কাজের হিসেবে খুব একটা উল্লেখযোগ্যও নয়। বরং দুনিয়াজুড়ে পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধির হার এটাই প্রমাণ করে যে কোয়ারেন্টিনেও নারী বিপদের মধ্যেই আছে। নারীর ওপর ঘরে-বাইরে কাজের চাপ ছাড়াও রয়েছে সংসার ব্যবস্থাপনার চাপ। সবক্ষেত্রেই প্রমাণিত হয়েছে নারী সংসারের ‘ফ্রন্টলাইন স্টাফ’ হওয়া সত্ত্বেও তার চাহিদা সবসময়ই উপেক্ষিত।

লেখক: যোগাযোগকর্মী

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
ভারতের একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৬
ভারতের একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৬
কুষ্টিয়ার তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
কুষ্টিয়ার তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
‘গাজার গণকবরে অন্তত ২০ জনকে জীবন্ত দাফন’
‘গাজার গণকবরে অন্তত ২০ জনকে জীবন্ত দাফন’
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ