‘উত্তরসূরি প্রস্তুত করছেন খালেদা জিয়া’—গত ১২ জুলাই এই শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় বাংলা ট্রিবিউনে। যেখানে বলা হয়, বর্তমান চেয়ারপারসন হিসেবে খালেদা জিয়া আমৃত্যু একই পদে থাকবেন। তবে কমান্ডিং ক্ষমতা পুরোটাই থাকবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে। ভবিষ্যতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদটিকে আরও সুসমন্বিত করে নির্বাহী চেয়ারম্যান বা এ ধরনের কোনও পদ সৃষ্টি হতে পারে বলেও নেতাদের বরাতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়।
এখানে দুটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। এক. খালেদা জিয়া যে আমৃত্যু বিএনপির চেয়ারপারসন থাকছেন সেটি নিশ্চিত এবং দুই. কমান্ডিং ক্ষমতা থাকবে তার ছেলে তারেক রহমানের হাতে।
চ্যালেঞ্জটা হলো, খালেদা জিয়া বর্তমানে সরকারের নির্বাহী আদেশে জেলের বাইরে থাকলেও তিনি দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এই মামলার ভিত্তি কতটা দুর্বল কিংবা এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা—সেগুলো নিয়ে তর্ক বহুদিনের। কিন্তু আদালত যেহেতু রায় দিয়েছেন, সেহেতু বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক—এটিকেই আইনত মেনে নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এ মুহূর্তে কারাগারের বাইরে থাকলেও যেকোনও সময় হয়তো আবার তাকে জেলে যেতে হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে আইনি বিধানের পাশাপাশি সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয়ত, খালেদা জিয়া বহুদিন ধরেই শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং এই যুক্তিতেই বারবার তার মুক্তি অথবা জামিন চেয়েছেন তার আইনজীবী ও দলের নেতাকর্মীরা। এমনকি চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার দাবি এখনও বহাল। তার মানে দেশের অন্যতম প্রধান একটি দলের চেয়ারম্যান হিসেবে আমৃত্যু এমন একজন বহাল থাকবেন, যিনি প্রথমত দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং যেকোনও সময় যাকে পুনরায় জেলে যেতে হতে পারে; যিনি তার বয়স ও নানাবিধ অসুখের কারণে শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থও নন। প্রশ্ন হলো, যাকে ঘিরে এতসব চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা, তাকে কেন আমৃত্যু একটি দলের প্রধান হয়ে থাকতে হবে বা দলের নেতারাই বা কেন মনে করছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন হিসেবে খালেদা জিয়ার কোনও বিকল্প নেই? নাকি দলের নেতাকর্মীরা এ ধরনের ভাবনাকে গর্হিত অপরাধ বলে মনে করেন?
বাংলা ট্রিবিউনের ওই সংবাদে আরও বলা হয়েছে, বিএনপির কমান্ডিং ক্ষমতা পুরোটাই থাকবে তারেক রহমানের হাতে, যিনি বর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদটিকে আরও সুসমন্বিত করে নির্বাহী চেয়ারম্যান বা এ ধরনের কোনও পদ সৃষ্টি করা হতে পারে। অর্থাৎ খালেদা জিয়া যতদিন বেঁচে থাকবেন, তাতে তিনি কারাগারে থাকুন অথবা বাইরে; দেশে থাকুন কিংবা বিদেশে; শারীরিকভাবে যদি তিনি আরও অসুস্থ হয়ে যান, তারপরও তিনিই দলের প্রধান থাকবেন। কিন্তু তার পক্ষে দল পরিচালনা করবেন মূলত তার উত্তরসূরি তারেক রহমান।
প্রশ্ন হলো, কেন খালেদা জিয়ার উত্তরসূরি খোঁজা হচ্ছে বা কেন বিষয়টি সামনে আসছে? এর কারণ কি এই যে, খালেদা জিয়ার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা এবং দলে তার অংশগ্রহণের প্রক্রিয়া এখন বেশ জটিল হয়ে গেছে? নাকি বিএনপিতে তারেক রহমানের নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন? খালেদা জিয়ার মধ্যে কি এরকম একটি শঙ্কা কাজ করছে যে, তার মৃত্যুর পরে দেশের বাইরে থাকা তার ছেলে তারেক রহমানকে দলের প্রধান হিসেবে নেতারা মেনে নেবেন না বা তারেক রহমানের পক্ষে দলীয় প্রধান হওয়া খুব কঠিন হয়ে যাবে; সুতরাং এখনই দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে তারেক রহমানের সাংগঠনিক ক্ষমতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন?
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করলেও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনিই এখন থেকে দলের প্রধান নির্বাহী। যদিও দেশের বাইরে অন্তরীণ অথবা পলাতক থেকে একটি বড় দল পরিচালনা আদৌ যুক্তিসঙ্গত বা বাস্তবসম্মত কিনা, সে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বাস্তবতা হলো, দলের এত ট্র্যাজেডির মধ্যেও, অর্থাৎ মা ও ছেলে দুজনই সাজাপ্রাপ্ত হয়ে একজন কারাগারে এবং আরেকজন বিদেশে থাকা সত্ত্বেও দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে তৃতীয় কাউকে মনোনীত করা হয়নি। এটিই বাংলাদেশের পারিবারিক রাজনীতির হিসাব ও ভয়। ভয়টা এই যে, যদি পরিবারের বাইরে কাউকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে দলের নেতৃত্ব আর জিয়া পরিবারের হাতে ফিরবে কিনা?
অস্বীকার করার উপায় নেই, খালেদা জিয়াকে ঘিরে যেরকম নানাবিধ চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা, তারেক রহমানের ক্ষেত্রেও তা-ই। বরং একটি ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন, তিনি দেশে থাকছেন বা থাকতে পারছেন। কিন্তু তারেক রহমান প্রায় এক যুগ ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন এবং আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন তার পক্ষে দেশে আসা অসম্ভব। দেশে এলেই তিনি গ্রেফতার হবেন। কারণ তিনি তিনটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এর মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন, মানি লন্ডারিংয়ের একটি মামলায় ৭ বছর এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে ১০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তার মানে বিএনপির প্রধান এবং দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা—দুজনই সাজাপ্রাপ্ত এবং এর মধ্যে একজন আইনের ভাষায় পলাতক, আর রাজনীতির ভাষায় বিদেশে আশ্রিত। এরকম কঠিন বাস্তবতার ভেতরে খালেদা জিয়ার পক্ষে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া যতটা সহজ, তারেক রহমানের পক্ষে সেটি অনেক কঠিন। তাছাড়া বিএনপি কোনও আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনৈতিক দল বা নিষিদ্ধ সংগঠন নয় যে, গা ঢাকা দিয়ে গোপনে এই দলের প্রধানকে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিতে হবে। বিএনপি একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল এবং তাদের একটি বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। ফলে প্রশ্ন হলো, এরকম একটি দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা হওয়ার মতো বিকল্প আর কেউ কি নেই, নাকি এক্ষেত্রেও নেতাকর্মীরা কোনও ধরনের বিকল্প ভাবনাকে বিদ্রোহ কিংবা অপরাধ বলে গণ্য করেন? যদি করেন, তাহলে বুঝতে হবে তার পেছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে এবং সেই কারণ শুধু বিএনপিতে নয়, বরং দেশের প্রধান তিনটি দলেই বিদ্যমান।
২.
মূলত বাংলাদেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলই পারিবারিক লিগ্যাসি বহন করে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের মৃত্যুর পরে দলের নেতৃত্ব নিয়ে তার স্ত্রী রওশন এরশাদ এবং ছোট ভাই জিএম কাদেরের মধ্যে যে বিরোধ প্রকাশ্য হয়, তারও পেছনে এই পরিবারতন্ত্র।
দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তম দল আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে কেউ কি শেখ হাসিনার বিকল্প ভাবেন? এমনকি আগামী কাউন্সিলে যদি শেখ হাসিনা নিজেও এই ঘোষণা দেন, তিনি বা তার পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন না বা হতে চান না, দেখা যাবে দলের নেতাকর্মীরাই এর তীব্র বিরোধিতা করবেন এবং ‘মানি না’ বলে মুহুর্মুহু স্লোগান দেবেন। এই স্লোগানের পেছনে তাদের আবেগ ও ভালোবাসা যেমন থাকবে, তেমনি থাকবে ভয় ও সমীহ। আছে আস্থার প্রশ্ন। কারণ যদি সত্যিই শেখ পরিবারের বাইরে থেকে আওয়ামী লীগের কাউকে সভাপতি হতে হয়, তাহলে সেই ব্যক্তিটি কে হবেন এবং তার নেতৃত্বে দল আসলে কতটা এগোতে পারবে, তা নিয়ে নেতাকর্মীরা তো বটেই, সাধারণ মানুষের মনেও নানা প্রশ্নের জন্ম হবে।
বছরের পর বছর ধরে দেশের মানুষ এভাবেই দেখে ও ভেবে অভ্যস্ত, আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব তিনটি পরিবারের হাতেই থাকে। ফলে এখানে চট করে কেউ কোনও একটা বিকল্প ভাবার আগে তার পরিণতি নিয়েও তাকে ভাবতে হয়। যে কারণে বাংলাদেশের পারিবারিক রাজনীতি বা রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের এই জ্যামিতি নিয়ে যখন বিতর্ক ওঠে, তখন সঙ্গত কারণে এই প্রশ্নটিও সামনে আসে, দলের সাধারণ নেতাকর্মী তো বটেই, সাধারণ মানুষও আসলে শেখ পরিবারের বাইরে আওয়ামী লীগ আর জিয়া পরিবারের বাইরে বিএনপিকে ভাবতে অভ্যস্ত কিনা বা ভাবতে পারে কিনা?
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সরাসরি উত্তরাধিকার তার স্ত্রী খালেদা জিয়া এবং ছেলে তারেক রহমান। তাদের অবর্তমানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই হয়তো দলের প্রধান হিসেবে সবচেয়ে উত্তম বিকল্প। কার্যত দলের মহাসচিব বা সাধারণ সম্পাদকই দল পরিচালনা করেন। কিন্তু তারপরও শেষমেশ তার দলের প্রধান হওয়ার সম্ভাবনা কম। এমনকি দলের প্রতিষ্ঠাতার সরাসরি উত্তরাধিকার বা রক্ত সম্পর্কের কাউকে খুঁজে না পাওয়া গেলেও দেখা যাবে পরিবারের সঙ্গে কোনও না কোনোভাবে সম্পর্কিত কাউকে খুঁজে এনে তাকে দলের প্রধান করা হবে। আর এই কাজটি করবেন দলের নেতাকর্মীরাই। এখানে ওই পরিবারের প্রতি তাদের আস্থা ও বিশ্বাসই শুধু নয়, এখানে আরেকটি উদ্দেশ্য থাকে দলের বিভক্তি বা ভাঙন ঠেকিয়ে ঐক্য ধরে রাখা। আর এই ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রধান অস্ত্রই হলো পরিবারতন্ত্র।
ধরা যাক খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান কেউই বিএনপির চেয়ারপারসন থাকতে পারছেন না অথবা তারা নিজেরাই থাকতে চাচ্ছেন না। তখন দলের নেতারাই কিন্তু এই দুজনের বিকল্প হিসেবে হয় তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান অথবা এই পরিবারেরই অন্য কাউকে এনে দলের প্রধানের দায়িত্ব দেবেন। এমনকি তার যদি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা নাও থাকে, তারপরও তাকে এনে বসানো হবে। কারণ এই পরিবারের কাউকে প্রধান করা হলে দলের সিনিয়র ও প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে যারা চেয়ারপারসন হতে চান বা হওয়ার যোগ্য, তাদের সম্ভাবনা কমে যাবে। এই সম্ভাবনাটা নেতারা নিজেরাই বাতিল করবেন। কারণ তাদের নিজেদের মধ্যে কোন্দল আছে। ঈর্ষা আছে। যদি জিয়া পরিবারের কেউ বিএনপির প্রধান না হন তাহলে এই পরিবারের বাইরে অন্য কে প্রধান হবেন, তা নিয়ে যে ধরনের গ্রুপিং হবে, সেই গ্রুপিং ও কোন্দলের কারণে দেখা যাবে যে বিএনপি চার-পাঁচটি ভাগে বিভক্ত হবে যাবে। সেই শঙ্কা বা বিপদ এড়ানোর জন্যই দলের নেতাকর্মীরা চাইবেন, খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান অথবা জিয়া পরিবারে কারও হাতেই বিএনপির নেতৃত্ব থাকুক।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরে বহুধাবিভক্ত ও বিশৃঙ্খল আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করে দীর্ঘদিন পরে হলেও ক্ষমতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কারণেই। তার মানে নিজের যোগ্যতায়ও অনেকে আসতে পারেন। সেখানে পারিবারিক পরিচয় তাকে বাড়তি কিছু সুবিধা দেয় বৈকি।
জিয়াউর রহমানকে হত্যার পরে কোনও বিকল্প চিন্তা না করেই তখন তার স্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে নিয়ে আসা হয় এবং সঙ্গত কারণেই এটা ভাবা সমীচীন যে তখন খালেদা জিয়া বা এই পরিবারের বাইরে অন্য কেউ বিএনপির নেতৃত্বে এলে দলটি কয়েক টুকরো হয়ে যেতো এবং ১৯৯১ সালে এই দলটির ক্ষমতায় আসাও হয়তো কঠিন হয়ে যেতো।
বাস্তবতা হলো, যে দল বা যে ব্যক্তি জনগণের কাছে একবার পরীক্ষিত বা যিনি একবার জনপ্রতিনিধি হয়েছেন, আলোচনা-সমালোচনা বা বিতর্ক যাই থাকুক, দলের ভেতরে এবং নির্বাচনি এলাকায় তার একটা প্রভাব তৈরি হয়। যে কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ওই দল ও ব্যক্তির ব্যাপারে এমন একটা আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি হয় যে, এটা এক ধরনের পরিবারতন্ত্রেরই জন্ম দেয়।
তাহলে পরিবারতন্ত্রের সমস্যাটা কোথায়? এককথায় এর উত্তর দেওয়া কঠিন। অনেক অসুবিধার মধ্যে একটি এ রকম, কোনও এলাকায় বা আসনে পরিবারতন্ত্র শক্তিশালী হলে সেখানে অন্য পরিবারের যোগ্য লোকেরা ছিটকে পড়েন বা তারা রাজনীতিতে সুবিধা করতে পারেন না। কারণ সবাই জেনে যায়, ওই পরিবার থেকেই প্রার্থী দেওয়া হবে। ফলে তারা রাজনীতিতে খুব বেশি ডেডিকেশন দিয়ে কাজ করেন না। আবার মানুষও জানে, ওই পরিবার থেকেই কেউ না কেউ পাবে। ফলে তারাও ঘুরেফিরে ওই পরিবারে লোকেদের কাছেই যায়। তৃণমূলে গণতন্ত্র বিকশিত হওয়ার পথে এই প্রক্রিয়া বা প্রবণতা একটি বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে কখনও প্রকাশ্যে এবং জোরেশোরে কোনও কথা হয় না। কিছু বামপন্থি সংগঠন এবং কিছু বুদ্ধিজীবী কালেভদ্রে এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। যেহেতু দেশের প্রধান দুটি দলই পরিবারতন্ত্র জিইয়ে রেখেছে এবং আগামীতেও রাখবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে, ফলে কেউ এ বিষয়ে আওয়াজ তুললেও তা হালে পানি পায় না।
লেখক: সাংবাদিক।