X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য সংকটে পানিবন্দি মানুষ

কাজী তানভীর মাহমুদ, রাজবাড়ী
২৫ জুলাই ২০২০, ১৫:৫৮আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২০, ১৬:০৫

বন্যাকবলিত এলাকা পদ্মার পানি বেড়ে রাজবাড়ীর ৫টি উপজেলার ১০ হাজার পরিবারের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট। হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু নিয়ে চরম দুর্দশার মধ্যে দিন পর করছেন বন্যাকবলিতরা।

জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, শুক্রবার (২৪ জুলাই) দৌলতদিয়া পয়েন্টে পানি ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১০৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

রাজবাড়ী জেলা সদর, পাংশা, গোয়ালন্দ ও কালুখালী উপজেলার সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থা রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায়। প্রায় ৪০ মিটার এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে জরুরিভিত্তিতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের কাঠুরিয়া, চরমৌকুড়ি ও আমবাড়িয়া গ্রামের পানিবন্দি পরিবারগুলো একই ইউনিয়নের মুন্সি বেলায়েত হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে তারা পরিবারের সদস্য ও গবাদি পশু নিয়ে এসেছেন। আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

বাঁধ রক্ষার চেষ্টা এলাকাবাসীর শুক্রবার (২৪ জুলাই) গোয়ালন্দ উপজেলার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের দেওয়ান পাড়া, শানিরডাঙ্গা ঘুরে দেখা যায়, অনেক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। কেউ কেউ বাড়িঘর ছেড়ে নগরায়ের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব এলাকার টিউবওয়েল ও মাটির চুলা পানিতে ডুবে গেছে।

বন্যাকবলিত মো. ফজলু বেপারি (৬০) বলেন, ‘রাতে একটানা বৃষ্টির শো শো আওয়াজ হয়, এর পর চারিদিকে থই থই পানি। বিষাক্ত সাপ, পোকা মাকড় ঘুরে বেড়ায়। গত রাতে পাশের বাড়ি থেকে প্রায় তিন হাত লম্বা একটা গোখরা সাপ মারা হয়েছে। রাতের অন্ধকারে ছেলেমেয়েরা কেদে ওঠে। তখন মনে হয়, আমাদের পানির ভিতর ডুবে মরতে হবে।’

স্থানীয় ভ্যানচালক আমিরুল ইসলাম (৩২) বলেন, ‘হাতে টাকা নেই। খাবো কী? রাতে মাছ ধরি, সকালে সাঁতরায়া বাজারে যাই। মাছ বিক্রি করি। যে কয়টা টাকা পাই, তাই দিয়ে চিড়ে মুড়ি কিনা কোনোরকমে বউ-বাচ্চা নিয়ে চলছি। যেদিন জাল পাততে পারি না, সেদিন আর খাওয়া জোটে না।’

অটো রিকশাচালক পানিবন্দি শফিক মণ্ডল (৪৩) বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে বন্যার পানি ঘরে উঠেছে। এ পর্যন্ত সরকারি কোনও ত্রাণ পাইনি।’

বাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা গোয়ালন্দ উপজেলার দেবোগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা গৃহবধূ নাছিমা আক্তার বলেন, ‘বাড়ির উঠানে ও শোবার ঘরে পানি। ৮টি ছাগল পালন করেছিলাম কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য। কিন্তু খাদ্যের সমস্যায় দু’টি মারা গেছে। গত এক সপ্তাহের ১০ কেজি চাল সহায়তা পেয়েছি। তাই খেয়ে কোনো মতে বেঁচে আছি।’

দৌলতদিয়া ৬ নম্বর ফেরিঘাটের মাথায় মহাসড়কে কোরবানির ঈদে বিক্রি উপযোগী দুটি ষাঁড় নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাহির চরের কৃষক ফকের শেখের স্ত্রী তছিরণ বেগম। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়ি-ঘরসহ বাহির চরের বেশিরভাগ বাড়িতে পানি উঠে গেছে। তাই গরু-বাছুর নিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি। তারপরও রাতে ভয়ে ভয়ে থাকি।’

রাজবাড়ী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল করিম জানান, এখন পর্যন্ত প্রশাসনের তথ্য মতে জেলার ৫টি উপজেলায় ৯ হাজার ৯৭০টি পানিবন্দি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী শুকনো খাবার, চাল ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান চলমান আছে। পানিবন্দি প্রতিটি পরিবার যাতে সহায়তা পায় সেদিকে নজর রাখা হয়েছে।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, গত কয়েক দিন ধরে রাজবাড়ী সদরের গোপালবাড়ি এলাকার তারাই ব্যাপারী ও হাকিম বিশ্বাসের বাড়ি সংলগ্ন রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধ দিয়ে পানি চোয়ানোর কারণে এলাকায় পানি প্রবেশ করতে থাকে। এতে করে এলাকাবাসীর মধ্যে বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্ক দেখা দেয়। বিষয়টি জানার পর গত সোমবার বিকাল থেকে ভাঙন রোধে বালু ভর্তি সাড়ে ৪শ' জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করা হয়েছে।

বাঁশের সাকো পার হচ্ছে এ কিশোর গত মঙ্গলবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিফ ইঞ্জিনিয়ার একেএম ওহেদ উদ্দিন চৌধুরী এবং বুধবার সকালে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলশাদ বেগম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সারোয়ার আহম্মেদ সালেহিন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাঈদুজ্জামান খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। একই সঙ্গে স্থানীয়দেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে পানিবন্দি পরিবারের মাঝে ১৩০ মেট্রিক টন চাল, নগদ এক লাখ ৬০ হাজার টাকা, শিশু খাদ্য বাবাদ দুই লাখ টাকা এবং গবাদি পশুর খাদ্য বাবদ আরও দুই লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে রাজবাড়ী এক আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী বলেন, ‘বর্তমানে রাজবাড়ীর বিভিন্ন পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক জায়গায় বাঁধের গোড়া পর্যন্ত পানি চলে এসেছে। এতে বাঁধের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে রাজবাড়ী শহরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে। তাই বাঁধটি রক্ষা করতে হবে। আগামী বছর থেকে স্থায়ীভাবে নদীর পাড় সংরক্ষণ কাজ করা হবে।’

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা