X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

জলে ভাসা ঈদ

তুষার আবদুল্লাহ
০১ আগস্ট ২০২০, ১৫:০১আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২০, ১৬:৫৭
 


তুষার আবদুল্লাহ

নবীনগর থেকে ফোন এসেছিল। জানতে চাইছে, ঈদে গ্রামে যাচ্ছি কিনা?  কেউ আবদার তুলছেন, গ্রামে যেতেই হবে। নিজ গ্রাম না হোক, উপজেলা শহর নবীনগর তো যেতে হবেই। লোভ দেখাচ্ছেন ভরাট মেঘনা, তিতাস এবং বুড়ির। গ্রামের ভেতর যে কয়টি খাল এখনও টিকে আছে, নগরায়ণের সঙ্গে লড়াই করে, তারা দুই কূল উপচে উঠছে প্রায়। মাছের প্রলোভন থাকবেই। পাশাপাশি দুই একটি ফোন সাবধানও করে দিচ্ছে, যাওয়া ঠিক হবে না। গ্রামে গ্রামে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। এ সময় গিয়ে বিপদ সঙ্গে আনার কী দরকার। আমি হাসি। বিপদের মহাসমুদ্দুরে ভেলায় ভাসা জেলেকে এই বিপদ সংকেত দেখানোটা বড্ড ছেলে মানুষী। আসলে মুশকিল হলো গ্রামে কার কাছে যাবো? কাউকে না কাউকে তো অপেক্ষায় থাকতে হয়। অপেক্ষার সুতোর টান না পড়লে কি আর মন উড়ে? 

একসময় লাটাইয়ের পর লাটাই ছিল গ্রামজুড়ে। সেই মন লাটাই কবে ভেঙে গেছে। আকাশে মিলিয়ে গেছে মন ঘুড়ি। এখন মুঠোফোনের খুদেবার্তা, ভিডিও বার্তাতেও মন ঘুড়ি দোলে না। লাটাইয়র লাইটায়ের টান না পড়াতে যাওয়া হয় না, এবারও হলো না যাওয়া।

তবে গ্রামের খোঁজ-খবর চলে আসে ঠিকঠাক। ঈদ এলো বলেই রেওয়াজ মতোই খবর নেই, এবার কোনও কোনও বাড়িতে বিয়ে আছে। সই বা দোস্তি পাতানো হবে কোনও বাড়ির সঙ্গে কোনও বাড়ির। কুরআন খতমের নিয়ত করেছেন কারা? সে এক অদ্ভুত সময় ছিল, কোরবানি ঈদে গ্রামে গেলে দেখা যেতো উৎসবের যেন বান ছুটেছে। যা শহরে বসে আঁচ করার উপায় নেই। ঈদের পর দিন থেকেই বাড়ি বাড়ি মাইক বাজছে।  মাইকে শবিনা খতমের সুরেলা সুর। যেসব বাড়ির মানুষ বিদেশ থাকেন, সেই বাড়িগুলোতে শবিনা খতমের আয়োজন হতো বেশি। আমি শবিনা খতমের বাড়ি গিয়ে দেখতাম কেমন মাথা দুলিয়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা কুরআন পড়ে যাচ্ছে। খতম বাড়ির বিশেষ খাবারের প্রতিও আমার লোভ ছিল। খতম উপলক্ষে ভালো মন্দ খাবারের আয়োজন হতো। নিমতন্ন পেতাম প্রায় সব বাড়ি থেকেই। খাওয়া হতো কম। তবে বিয়ে বাড়ির খাবার কখনও বাদ দেইনি। বিয়ের উৎসব জমতো আসলে বর্ষায়। নৌকা সাজিয়ে মাইকে গান বাজিয়ে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম বরযাত্রী হয়ে যাওয়া। আহ্, এমন ভ্রমণের কোনও তুলনা নেই। সঙ্গে বাড়তি পাওনা প্যাঁক খেলা। বর-কনের আত্মীয়দের মধ্যে নিজ নিজ বাড়ির উঠোনে এমন খেলা হতো। অন্য মৌসুমের বিয়ের ভালো লাগার বিষয় ছিল পালকি। আমি নিজেও এমন পালকিতে গিয়েছিলাম ছোট চাচার বিয়েতে। মাঝে মধ্যে সই বা দোস্তি পাতানোর উৎসবও দেখেছি। সেখানেও কত আচার।

এর বাইরে ছিল আরেক উৎসব। সেটি হলো খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নৌকা বাইচ তো বর্ষার বাড়তি পাওয়া। অন্য সময় ফুটবল খেলার আয়োজন হতো। তবে আমার অপেক্ষা থাকতো নাটক বা যাত্রার প্রতি। গ্রামের তরুণরা আগে থেকেই নাটক, যাত্রার রিহার্সেল করে রাখতো। শহরের মানুষেরা এসে এক দুই দিন রিহার্সেলে যোগ দিয়ে নাটক বা যাত্রা নামিয়ে দিতো। এই যাত্রা আর নাটকই হয়ে উঠতো ঈদ উৎসব মূল উপলক্ষ। কোরবানিতে এমন বর্ষায় গোশত নিয়ে বাড়ি বাড়ি যেতাম নৌকা নিয়ে। গোশত বিতরণ করতে গিয়ে গ্রামের সকল বাড়ি দেখা হতো, বাজারে দেখা হওয়ার বাইরের মানুষগুলোর সাথেও পরিচয় হয়ে যেতো। একেক বাড়ি থেকে একেক রকম উপহারও পেতাম। মুড়ির মোয়া, পুলি পিঠা থেকে শুরু করে আম-ডাব, ফুলে নৌকা ভরতো। এমন উৎসব শহরে কোথায় মিলবে? আমি গ্রাম থেকে ফিরে শহরের বন্ধুদের উৎসবের একেকটি টুকরো বলে কল্পনার জগতে নিয়ে যেতাম। যেমন, এখন আমি কল্পনার ‘ড্রোন’-এ চড়ে একবার ঘুরে দেখে আসতে চাই আমার গ্রামের সেই ঈদ। 

দুঃসংবাদ হলো, এমন ভরা শ্রাবণে নৌকা নিয়ে গোশত বিতরণের সুযোগ নেই। খাল ভরাট। ইঞ্জিনচালিত অটো নিয়ে গ্রাম ঘুরে আসার ধামাকা অফার এখন। যাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে ভাবে না কেউ। সবার মুঠোফোনে এখন উপচেপড়া রঙিন সংস্কৃতি। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। শহর ভেসে যাবে হয়তো জলে আজও। কিন্তু আমার ঈদ ভেসে যাচ্ছে সাদাকালো ঈদ হারানোর আফসোসে।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ