X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বুলেটিন বন্ধের পেছনের কথা

মোস্তফা হোসেইন
১৮ আগস্ট ২০২০, ১৪:১৭আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২০, ১৪:১৯

মোস্তফা হোসেইন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তথ্য জানার অধিকার আছে নাগরিকের। দুর্যোগকালে তথ্য বিস্তৃত হওয়ার স্বার্থে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করাটা শুধু রেওয়াজই নয়, তথ্য প্রবাহের জন্যও অতি জরুরি। এই আলোকে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর যে স্বাস্থ্য বুলেটিন প্রচার করতো তা বন্ধ করার পর স্বাভাবিকভাবেই সাধারণের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। কোন কারণে এটি বন্ধ হলো? এখন তো সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগও ছিল না যে, কর্তৃপক্ষ তাদের দুর্বলতা কিংবা ব্যর্থতা লুকানোর জন্য এমনটা করতে পারেন? 
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ হয়েছেন, তিনি যোগদানের পর কিছু নতুন পদক্ষেপও নিয়েছেন। ফলাফল কী হবে তার জন্য ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মানুষ বলতে শুরু করেছে, যাহোক টনক নড়েছে তাহলে। কিন্তু তিনি যোগ দেওয়ার পর যখন এই পরিবর্তন হলো তখন একটু থমকে দাঁড়াতে হচ্ছেই। যদিও তার নির্দেশে বুলেটিন প্রচার বন্ধ হয়নি। কাকতালীয়ভাবেই বন্ধ হওয়ার আগে তিনি যোগদান করেছেন। তবে যারা বন্ধ করেছেন, তারা যে এটি আগের ডিজি থাকলেও করতেন তা অনুমান করা যায়।

এই বুলেটিনে কি স্বাস্থ্য অধিদফতরের কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনও ক্ষতি হতো? সময় নষ্ট হওয়ার কথাও বলা যাবে না। কারণ তারা বুলেটিন প্রচার না করলেও করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত প্রেস রিলিজ প্রচার করবে বলে জানিয়েছে ইতোমধ্যে। তার মানে হচ্ছে— বুলেটিন প্রচারে যেটুকু কাজ করতে হতো এখনও তাই করতে হচ্ছে।  

এই তথ্যগুলো সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ও অধিকতর কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে গণমাধ্যমে বুলেটিন আকারে প্রচার করা। অধিকতর তথ্য প্রবাহের জন্য সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়াটা আরও গ্রহণযোগ্য এবং কার্যকরও বটে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যকে কতটা যথার্থ বলে মনে করা যায়? স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘চার মাস, পাঁচ মাস তো হলোই, এখন একটু কন্ট্রোল হচ্ছে বলে আমরা মনে করি, একটু কমে আসছে। রেগুলার ওইভাবে একজন ব্যক্তি দিয়ে প্রেস ব্রিফিং না করে প্রেস রিলিজ দেওয়া হবে।’

মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্য মনে হচ্ছে, করোনার বিষয়টি একটা হালকা কিছু। ‘চার-পাঁচ মাসতো হলোই।’ তাহলে তারা কি ক্লান্ত হয়ে গেছেন, দিনে ১০/১৫ মিনিট সময় ব্যয় করতে গিয়ে? নাকি তিনি মনে করেন, এটা এমন কোনও বিষয় না যার পেছনে মাসের পর মাস সময় নষ্ট করতে হবে। জবাব বাংলাদেশের যে কোনও মানুষেরই জানা। তিনি বলেছেন, রেগুলার ওইভাবে একজন ব্যক্তি দিয়ে প্রচার করার বিষয়। তাহলে একজন ব্যক্তিও এখানে বিষয়। তাহলে তারা মন্ত্রণালয়ও কাজটি করতে পারে। তাদের প্রচার বিভাগ আছে। সচিব আছেন অধস্তন কর্মকর্তারা আছেন। একজন ব্যক্তিকে যদি ভালো না লাগে তারা একাধিক ব্যক্তিকে কাজে লাগাতে পারেন। তাই বলে বন্ধ করে দেওয়া হবে কেন?

বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সূত্র বলেছে, কাজটি হয়েছে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে। উপরে উক্ত বক্তব্য এবং অতীতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এখনও ব্যাপকতর। মনে হতে পারে, স্বাস্থ্য অধিদফতর বুলেটিন প্রচারের পক্ষেই ছিল, কিন্তু মন্ত্রণালয় না চাওয়াতে তাদের বুলেটিন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। 

স্বাস্থ্য অধিদফতর আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে টানাপড়েন দীর্ঘদিনের। এই টানাপড়েনের বহিপ্রকাশ বিভিন্ন সময়ই চোখেও পড়েছে। এই বুলেটিন বন্ধ করার বিষয়েও এই টানাপড়েন কাজ করছে এমনটাও মনে করছে কেউ কেউ। যেমন এত বড় সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য অধিদফতর নিতে পারে না এমন একটি বাক্য কিন্তু ইতোমধ্যে প্রচার হয়েছে। 

করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় যে জাতীয় পরামর্শক কমিটি রয়েছে, তারাও বিষয়টি সম্পর্কে জানে না। তাদের সঙ্গে কোনও আলোচনাও হয়নি এই বিষয়ে। কোনও কোনও মাধ্যমে বলা হচ্ছে—আগামী মিটিংয়ে বিষয়টি আলোচিত হতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে—ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার পর আলোচনা করে কী হবে? সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যইতো পরামর্শক কমিটি। সিদ্ধান্ত নিয়ে পরামর্শ করার কী থাকতে পারে? এই বিষয়ে পরামর্শক কমিটির একাধিক ব্যক্তির মতামতও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তারা এই সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন।

মানুষ অত্যন্ত আগ্রহসহ এই বুলেটিন দেখতো। আমার ঘর দিয়েই প্রমাণ করতে পারি। এই বুলেটিনের কারণে দুপুরের খাবারের সময় পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। বুলেটিন দেখে তারপর খাওয়ার টেবিলে যেতো ঘরের সবাই। সমকালে টেলিভিশনের অন্য কোনও প্রোগ্রাম এতটা জনপ্রিয়তা পায়নি। মানুষ এটাকে বিনোদন নয়, প্রয়োজনীয় বলে গ্রহণ করেছিল। হয়তো বলা হবে—সংবাদমাধ্যমে তো জানানো হবেই। সংবাদমাধ্যমে অবশ্যই প্রচার করবে, কিন্তু এখন যেভাবে সরাসরি জানার সুযোগ ছিল, সেটা আর থাকবে না। ৩৫ মিনিটের খবর শুনতে গিয়ে মানুষকে ১ ঘণ্টা টিভির সামনে বসে থাকতে হয়। তাও আবার কাঙ্ক্ষিত খবরটি খবরের কোন অংশে থাকবে সেটাও দর্শকের পক্ষে জানা সম্ভব হবে না। খবরের কাগজে সংবাদ পড়ায় ইতোমধ্যে বড় একটা পরিবর্তন হয়েছে তাও লক্ষণীয়। করোনা আক্রমণের পর অধিকাংশ মানুষ বাসায় খবরের কাগজ রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন। পত্রিকা পাঠকদের একটি অংশ মাত্র অনলাইনে পত্রিকা পড়েন। মোট কথা করোনার কারণে পত্রিকা পাঠক আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়েছে। ফলে পত্রিকা পড়ে জানার সুযোগটিও এখন সীমিত হয়ে পড়েছে। 

এই অবস্থায় ক্ষমতার টানাটানি নয়, মানুষের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে দ্রুত ব্রিফিংয়ের ব্যবস্থা করাটাই হবে যৌক্তিক। বুলেটিনে শুধু যে করোনা সম্পর্কেই মানুষকে সচেতন করা হতো তা নয়। মাঝে মাঝে ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ে কথা বলেছেন তারা। যা জনসচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। সংক্রামক কিংবা অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ে এরকম স্বাস্থ্য বুলেটিন এমনিতেও প্রচার হতে পারে। সেই জায়গায় করোনা দুর্যোগকালে ব্রিফিং/বুলেটিন বন্ধ করার কোনও যুক্তি নেই। আমরা আশা করবো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরামর্শক কমিটির বৈঠকের আগেই আবার ব্রিফিং শুরু করবে। একতরফা বক্তব্যদানের পরিবর্তে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ থাকলে শুধু করোনা নয়, স্বাস্থ্য বিষয়ক আরও অন্য বিষয়েও তথ্য প্রচার হতে পারে যা সাধারণ মানুষকেই উপকৃত করবে। আশা করি বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনা করবে মন্ত্রণালয়।

লেখক: সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ের গবেষক।

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ