X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধু হত্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিশ্বাসঘাতকতা

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
২৭ আগস্ট ২০২০, ১৫:২০আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২০, ১৫:২৯

হায়দার মোহাম্মদ জিতু বার্ট্রান্ড রাসেল-এর ‘Has man a future?’ গ্রন্থে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, সৃষ্টির শুরুতে মানুষই ছিল অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় সবচেয়ে বিপন্ন এবং দুর্বল প্রাণী। কারণ অন্যান্য প্রাণীর মতো মানুষ ততটা হিংস্র কিংবা শীতকালে নিজেকে আবৃত করবার মতো লোমশ ছিল না। কিন্তু মানুষের একটা ‘বিষয়’ ছিল। যা তাকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে, করেছে অনন্য। আর তা হলো তার মস্তিষ্ক।
সময়ের ধারাবাহিকতায় মানুষ তার সেই মস্তিষ্ককে আজ এতটাই শাণিত করেছে যে আজ বিশ্বের সকল শক্তিই তার কেন্দ্রমুখী। কিন্তু সৃষ্টির শুরুতে অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে লড়াই, অবিশ্বাস এবং নিজেকে টিকিয়ে রাখার সেই পুরনো বর্বরতা এবং বধ করবার কৌশল ভুলতে পারেনি। যা প্রবাহিত হয়ে চলেছে রক্তে রক্তে এবং জিনগত মাধ্যমে। ফলাফল পুরনো সেই অবিশ্বাস, বর্বরতা এবং কৌশল আজ ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে নিজের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিশ্ব সংসারে। যদিও এও সত্য যে নিজের পারিবারিক শিক্ষা এবং মননের মাধ্যমে মানুষ সেই পুরনো অবস্থা জয় করবার সক্ষমতা রাখে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ এমনই একটি বর্বরতার সাক্ষী হয়েছে। আর সেই বর্বরতার শিকার বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবার।

বঙ্গবন্ধু তাঁর নিজের জীবনের সর্বস্ব বিলিয়ে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ১৩ বছর নির্যাতন সহ্য করেছেন, অসীম ত্যাগের বেদনায় বাঙালির স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার ফুল স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। অথচ তাঁকেই ট্র্যাজিকভাবে হত্যা করেছে কিছু পশুর দল।

পূর্বাপরই বাঙালির স্বপ্ন বাস্তবতাকে বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্র ঘিরে রেখেছিল। সেখানে বহুপাক্ষিক সমঝোতার চাপও ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেই সব চাপ, নির্যাতন সহ্য করে সকল প্রলোভন-প্রণোদনা উপেক্ষা করে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলার শোষিত মানুষের পাশে ছিলেন। বেঁচে থাকার ৫৫ বছরে তিনি জেলেই ছিলেন ১৩ বছর। 

আমরা জানি জীবন বাস্তবতায় মানুষকে শৈশবের একটা দীর্ঘ সময় পাড়ি দিতে হয়। তাই সে হিসেবে তাঁর অর্জন তাঁর আয়ুষ্কালকে ছাড়িয়ে গেছে বহু ব্যঞ্জনায়। যার মাঝেই তিনি দিয়ে গেছেন ৫৬ হাজার বর্গমাইলের স্বাধীন বাংলাদেশ।

দৃশ্যমান বাস্তবতায় দ্রুতগতির প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে এখানকার মানসিক উন্নয়ন সাধন হয়নি। ফলে দক্ষতা বেড়েছে, উৎপাদন বেড়েছে কিন্তু হারিয়ে গেছে প্রজ্ঞা। তাই এক গোত্রের একটা পিঁপড়া যেমন অন্য গোত্রের ভেতর প্রবেশ করলে হত্যা করে তেমনি সামান্য স্বার্থে আঘাত হানলে মানুষই মানুষকে হত্যা করে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে কাদের স্বার্থ কায়েম হয়েছে এই তালিকা করলেই স্পষ্ট হয়ে যায় তাঁকে হত্যার কার্যকারণ। এখানে ভিনদেশি পরাজিত শক্তি তো ছিলই, পাশাপাশি ছিল তথাকথিত এলিট শ্রেণির সুবিধা ভোগের লালসা। কারণ তিনি কৃষক-শ্রমিকের জন্যই দেশ স্বাধীন করতে চেয়েছিলেন এবং করেছিলেন।

এ বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলে কোঠার সেপাই, মাহমুদুল হকের জীবন আমার বোন এর মতো উপন্যাসের মধ্য দিয়ে। যেখানে দেখা যায় বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে নিম্নবর্গীয়রাই অগ্রগণ্য ছিলেন।

একারণেই বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে এখানকার তথাকথিত একটি এলিট অংশ পূর্বাপরই বিরোধিতা করে গেছেন এবং আজ  অবধি করে যাচ্ছেন। যার প্রমাণ এই মাটিতেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কিছু দোপায়ি জন্তুকে উল্লাস করতেও দেখা গেছে। আর এখন এই অবশিষ্ট জান্তব অংশের টার্গেট বাঙালির শান্ত সাহস বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। যাকে ইতিমধ্যেই ২১ বার হত্যার চেষ্টাও করা হয়েছে।

ক্ষমতাকেন্দ্রিক এই যে হত্যা এবং হত্যা চেষ্টা—এসব নিয়ে বর্তমানের প্রশ্ন উত্থাপন জরুরি। কারণ সংবিধান, আইনের শাসন এবং নিজেকে সুনাগরিক হিসেবে দাবি করলে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড এবং তার প্রেক্ষাপটের (পূর্ব ও পরবর্তী) ময়নাতদন্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি এই ধরনের জাতীয় বিষয়কে যারা রাজনৈতিক এজেন্ডা হিসেবে পক্ষে-বিপক্ষে দ্বিখণ্ডিত করে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং হত্যাকারীদের রাষ্ট্রীয় সুবিধা দিয়েছে তাদেরও জনগণের আদালতে আনা জরুরি।

কারণ দেখা গেছে তৎকালীন ক্ষমতাসীনরাই এই ডেপুটেশনে যোগ দেওয়া হত্যাকারীদের ১৯৮০ সালে ফরেন ক্যাডার সার্ভিসের আওতাভুক্ত করেছিল। যা বিশ্ব ইতিহাসে একেবারে নজিরবিহীন। অর্থাৎ মানুষ হত্যার বদলে পুরস্কার! তবে এই বিষয়গুলোকে এখন ময়নাতদন্তের আদলে নজরদারি জরুরি।

তাছাড়া বৈদেশিক দূতাবাসে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই দেশের মতামত গ্রহণ করা হয়। সেক্ষেত্রে যারা আজন্ম বঙ্গবন্ধু-বাংলাদেশের বন্ধু ছিলেন তারা কেন সেই বন্ধুর-ই রক্তে রঞ্জিত হাতকে নিজেদের দেশে গ্রহণ করলেন সেটা অনুসন্ধান জরুরি। কারণ সেই দেশগুলোর অবস্থাও ছিল আমাদের মতো। এক্ষেত্রে একক পোল্যান্ড-ই বেইজিং থেকে বদলি হওয়া বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী মেজর ডালিমকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

ভিন্নভাবে বললে, তৎকালীন সময়টায় সেই খুনিদের বিদেশি দেশগুলোতে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কারা মধ্যস্থতা বা ওকালতি করেছেন সে সূত্রগুলোও অনুসন্ধান আবশ্যক। কারণ এই এক আচরণেই স্পষ্ট হওয়া সম্ভব ওই বৈদেশিক সূত্রগুলোর লাভ-ক্ষতির হিসাব এবং এখানকার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ বিশ্বাসঘাতকতা।

লেখক: প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ

[email protected]

 

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ