X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
২০২০ ইন্টারন্যাশনাল বুকার প্রাইজ

মারাইকে লুকাশ রাইনেফেল্টের ‘দ্য ডিসকমফোর্ট অফ ইভিনিং’

হলি উইলিয়ামস, অনুবাদ : আদিত্য শংকর
২৯ আগস্ট ২০২০, ১৬:৫৬আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২০, ১৭:২৩

গত ২৬ আগস্ট ঘোষণা করা হয়েছে ২০২০ সালের বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ বিজয়ীর নাম। ‘দ্য ডিসকমফোর্ট অফ ইভিনিং’ উপন্যাসের জন্য এবার এ পুরস্কার পেলেন ২৯ বছর বয়সী ডাচ লেখক মারাইকে লুকাশ রাইনেফেল্ট । বইটি মূল ডাচ থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন মিশেলা হাচিসন, প্রকাশক ফেবার অ্যান্ড ফেবার। মারাইকে লুকাশ রাইনেফেল্টের ‘দ্য ডিসকমফোর্ট অফ ইভিনিং’ ‘একজন ডাচ খামারের মেয়ে এবং তার ধর্মীয়-রক্ষণশীল পরিবারকে ঘিরে অবিচ্ছিন্ন ও বিরক্তিকর ঘটনা নিয়ে নতুন লেখকের আকর্ষণীয় উপন্যাস।'

অস্বস্তিটাই একে হালকা করে দিয়েছে। বুকার পুরষ্কারের জন্য মনোনীত, মারাইকে লুকাশ রাইনেফেল্টের প্রথম উপন্যাস এক পর্যায়ে বিরক্তির দিকে পাঠকদের নিয়ে যায়। রাইনেফেল্ট ২৯ বছর বয়সেই নেডারল্যান্ডে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন।

উপন্যাসটির কাহিনি শুরু ১০ বছর বয়সী ইয়াস নামের একটি মেয়েকে দিয়ে। তার ভাই মাথিসের সঙ্গে আইস স্কেটিং-এ যাওয়ার অনুমতি না-পাওয়া তার মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়, ফলশ্রুতিতে সে অভিশাপ দিতে থাকে, যেন তার খরগোশের বদলে তার ভাই মারা যায় (সে ভয় পেত, বাবা রাতের খাবার হিসেবে তার পোষা খরগোশটার ওপর হয়তো নজর দিয়েছে)।

এবং পরে দেখা যায় সেটাই ঘটেছে, তার ভাই বরফে চাপা পড়ে মারা যায়।

মারাইকে লুকাশ রাইনেফেল্ট (২০১৬) ছবি, উইকিপিডিয়া এরপরের ঘটনা আরও করুণ। পরিবারে নেমে আসে শোকের উন্মাদনা। পরিবারটি ভেঙে পড়ে। সেই ছেলেবেলার বেদনা বাড়তে বাড়তে এরকম একটি ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে যেন, ইয়াসের এরকম মনে হতে থাকে। ক্রমে পরিবারের অন্য সবার আচার-আচরণও তার জন্য পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে। এরকম ঝুট-ঝামেলার মধ্যে টেস্টে তাদের খামারের অনেক গরুর পা ও মুখে রোগ ধরা পড়ে। [উপন্যাসটি ২০০১ সালের মহামারির সময়কে ঘিরে লেখা] যার কারণে তাদেরকে খামারের সব গরু হত্যা করতে হয়।
উপন্যাসে ইয়াসের পরিবারকে ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল দেখানো হয়, যেন লেখক নিজের জীবনকেই লিখছেন। এমনকি পেশায় রাইনেফেল্ট নিজেও একজন খামারি। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ছোটবেলা থেকে তিনি ‘নিষ্ঠুর ঈশ্বরের’ ধারণা নিয়ে বড় হয়েছেন, এমনকি নিজেও অল্প বয়সে তার ভাইকে হারান—যদিও সেসব নিয়ে পরিবারের কাছ থেকে খুব একটা জানতে পারেননি। তার জীবনের মতো নীরবে বুকের ভেতর যন্ত্রণা পুষে রাখাটা উপন্যাসের কল্পিত পরিবারের মধ্যেও আমরা দেখতে পাই, আর সেটাই যেন সকল প্রশ্নের উত্তর। ইয়াসের কথায়, ‘ক্ষেত থেকে যে ফসল উৎপন্ন হয়, সেটা আমরা জানি। কিন্তু আমাদের নিজেদের মধ্যে যা বেড়ে উঠছে তা সম্পর্কে আমরা জানি না।’
মাথিসের মৃত্যুর আগেও অভিভাবকরা পাপ-পরবর্তী শাস্তির প্রতি গাহ্য করতো; বলতো, শারীরিক ক্রিয়াকলাপও লজ্জার উৎস। মাথিসের মৃত্যুর পর, পাপ, পরিতাপ এবং বস্তুগত যেসব শিক্ষা তাদের ছিলো বা যেসব নিয়ম-কানুন তারা মানতো সেগুলোও পরিবারের সবার বেদনার মধ্যে হারিয়ে যায়। পরে তারা সেই শিক্ষা রপ্ত করার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করে।

মনস্তাত্ত্বিকভাবে পরিবারটি এতো সমস্যায় পড়ে যে, সেগুলোর ছাপ পরিবারের সদস্যদের দিকে দৃষ্টি দিলে খুঁজে পাওয়া যাবে। ইয়াস তার প্রচণ্ড ময়লা লাল কোট খুলতে চায় না, তার নাভিতে ড্রয়িং পিন আটকে রাখে এবং তার দেহে দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য বাসা বাঁধে [বলে রাখা ভালো যে, ‘স্ক্যাটোলজিক্যাল উপন্যাস’ খুঁতখুঁতে স্বভাবের লোকদের জন্য নয়]।

তার আরেক ভাই ওবে বিছানার ফ্রেমে নিজের মাথা আঘাত করে এবং প্রাণি হত্যা শুরু করে। অন্যদিকে, তার মা অনেক খাবার তার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন।

‘দ্য ডিসকমফোর্ট অফ ইভিনিং’ উপন্যাসে দেখা যায় চরিত্রগুলো নিজেদের এবং অন্যদের শারীরিক সীমানার সীমাবদ্ধতার পরীক্ষা করছে। ইয়াসের কোষ্ঠকাঠিন্য নির্মূল করার জন্য উদ্ভট চেষ্টা করা হয়—ইয়াসের বোন তার মুখে জিহ্বা ঢুকিয়ে দেয়, পড়তে গিয়ে মনে হবে তা যেন ‘মাইক্রোওয়েভে গরম করে ফেলে রাখা স্টেকের টুকরা’।

এসব ছাড়াও উপন্যাসটিতে অনেক বিরক্তিকর দৃশ্য রয়েছে।

রাইনেফেল্ট এতকিছু লেখার পর দমে যাননি। বয়ঃসন্ধিকালে মানুষের নানা রকমের কল্পনা ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের স্মৃতিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করেছেন উপন্যাসে দেখিয়েছেন। উপন্যাসটি প্রাপ্ত-বয়স্কদের জগৎ সম্পর্কে জানার জন্য সাধারণের যে কৌতূহলী উদ্দীপনা এবং ধাঁধাঁ রয়েছে সেসব তুলে এনেছে। একদিকে ভাইয়ের অবর্ণনীয় [সব দিক বিবেচনায়] করুণ মৃত্যু এবং অন্যদিকে উগ্র ধর্মীয় বিশ্বাসের চাপ, দুইটাই যেন পিছন দিকে পরিবারটিকে প্রচণ্ড রকমের আঘাত দেয়।

রাইনেফেল্টের কাঁচা এবং নিরানন্দময় শব্দমালার মধ্যেও ঘটনাগুলো অদ্ভুতভাবে বর্ণিত হয়েছে।

রোগা আঙুলের গিটগুলো দেখতে ‘বিচ্ছিন্ন হওয়া চিংড়ির মাথার’ মতো লাগে; সুইমিং পুলে পড়ে থাকা ভেজা চিপসগুলো ‘তোমার পায়ে ফোস্কার মতো লেগে থাকবে’। ইয়াসের নিজেরও কল্পনার বর্ণনা রয়েছে : সে তার মৃত দাদীকে কল্পনা করে, ‘চোখের মণি যেন ডিমের কুসুমের মত লিকলিক করে’, মনে হয় চোখের কোটর থেকে বের হয়ে যাবে।

উপন্যাসের শেষে এসে বোধ হয়, রাইনেফেল্ট মনে হয় গল্পটাকে শেষ করার পথ খুঁজছিলেন—ইয়াস বিশ্বাস করে যে, তার মা বেজমেন্টে ইহুদিদের লুকিয়ে রেখেছিলো। যা কিনা অন্যান্য ভ্রান্তির থেকে কম বিশ্বাসযোগ্য এবং দুর্বল। [এখানে, ডাচ সংষ্করণটিতে একটি কৌতুক আছে, তবে ব্রিটিশ প্রকাশনার জন্য প্রচণ্ড আপত্তিকর হওয়ায় ইংরেজিতে ওই অংশটুকু ছাটাই করে প্রকাশ করা হয়। ব্যাপারটি রাইনেফেল্টের কাছে জ্বলন্ত কল্পনাকে পুড়িয়ে অঙ্গার করার মতো ছিলো।]

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভ্যাটেই মিলবে রাজস্ব, অথচ ভ্যাট বাড়াতে অনীহা
ভ্যাটেই মিলবে রাজস্ব, অথচ ভ্যাট বাড়াতে অনীহা
বাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
গ্লোবাল স্কিলস ফোরামে বক্তারাবাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা