X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাই জেলায় জেলায় মাল্টিপ্লেক্স

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৬:০৮আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৬:০৯

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বাংলাদেশের সিনেমাকে বাঁচাতে হলে হল চাই। ঝুলে পড়া সিঙ্গেল স্ক্রিন নয়, চাই মাল্টিপ্লেক্স, এমনটাই বলা হচ্ছিল সেই কবে থেকে। কিন্তু সেই মাল্টিপ্লেক্সও আর বাঁচতে পারছে না বলে মনে হচ্ছে।
মঙ্গলবার এক হৃদয় ভেঙে দেওয়া খবর এলো এই শহরে যে, বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের স্টার সিনেপ্লেক্স আর কখনও খুলবে না। করোনা মহামারিতে দেশের অন্যান্য সিনেমা হলের মতো আপাতত বন্ধ মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল স্টার সিনেপ্লেক্সের সব শাখা।
যুগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে এগিয়ে চলার মতো উদ্যম, উদ্যোগের অভাবে দেশের সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে গত দশকের গোড়া থেকে। হাতে গোনা কিছু সিনেমা হল কোনোরকমে টিকে আছে। বাংলা চলচ্চিত্রের মান নেই, ভালো সিনেমা হয় না, দর্শক দেখে না এবং দর্শকের সংখ্যা তলানিতে ঠেকায় আর যেগুলো এখনও কোনোরকমে টিকে আছে সেগুলোও বন্ধ করার কথা ভাবছেন মালিকেরা।

মান্ধাতা আমলের প্রেক্ষাগৃহে বসে সিনেমা দেখার মতো আগ্রহ দেখাচ্ছে না নতুন প্রজন্ম। কিন্তু মাল্টিপ্লেক্স? সেটি কেন বন্ধ হবে? বাংলাদেশে মাল্টিপ্লেক্সের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৮ বছর আগে বসুন্ধরা সিটির এই স্টার সিনেপ্লেক্স দিয়ে। দেশ-বিদেশের অনেক বড় বড় তারকা, গুণিজন এখানে এসেছেন। দেশের মানুষ সিনেপ্লেক্স বলতেই এই শপিংমলের স্টার সিনেপ্লেক্সকেই বুঝতো। সেটির এমন অক্স্মাৎ বিদায়ে অনেকেই তাদের কষ্টের কথা প্রকাশ করছেন।

ক্যাবল টিভি আসার পর থেকেই আশা ক্রমে ক্ষীণ হচ্ছিল। কিন্তু তারপরে প্রযুক্তির জোয়ারে ভেসে গেলো সিনেমা হল। কিন্তু আধুনিক মাল্টিপ্লেক্স এভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে, সে কথা কি কেউ ভেবেছে? অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, মানুষকে বলে দেওয়া হচ্ছে, ‘বাড়িতে বসে কম্পিউটারে একটা সিনেমা ডাউনলোড করে কত আরাম করেই দেখা যায়, কী প্রয়োজন তোমার এতদূর যাওয়ার?’

এক ছাদের তলায় খাওয়া, কেনাকাটা,সিনেমা দেখা—সবকিছুই চাই একসঙ্গে। কিন্তু সিনেমার জন্য সেই সেই লড়াইটাও আর থাকছে না, যদিও কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে সঙ্কটে কারণে উদ্যোক্তারা নিজেরা নয়, বরং বসুন্ধরা সিটি শপিংমল কর্তৃপক্ষই সিনেমা হলটি বন্ধ করতে সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দিয়েছে। 

চলচ্চিত্র নিয়েই একটা সমন্বিত ভাবনা প্রয়োজন। আমরা বেশ বুঝতে পারছি যে, তেজগাঁও রেললাইনের ধারে এফডিসিতে উৎপাদিত বাংলা ছবি চালিয়ে হল বা সিনেপ্লেক্স কিছুই জিইয়ে রাখা যাচ্ছে না। কয়েক বছর আগে হল মালিকরা বাঁচামরার হিসাব করছিলেন দুয়েকটি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার ছবি চালানোর মধ্য দিয়ে তাদের হল টিকিয়ে রাখার শেষ লড়াইটি করতে। কিন্তু সেটিও সফল হয়নি। পেশিশক্তির কাছে হার মানলো যখন সরকারের কাছেই কিছুটা অক্সিজেন চাচ্ছিলেন হলমালিকরা।

বাংলা চলচ্চিত্রের কথা আমরা জানি। দুর্বল কাহিনি, দুর্বল নির্মাণ, দুর্বল সম্পাদনা—সব মিলিয়ে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, অনেক দিন আগেই অনেকেই হলে যাওয়া ছেড়েছে। পরিবার নিয়ে অনেকেই আর যায় না সিনেমা দেখতে। ঘাম-চিটচিট শরীরে সিনেমা দেখবে মানুষ, এমন ভাবনাই যেন এ শিল্পের কর্ণধারদের মনোজগতে।

যারা ভালো ছবি সৃষ্টি করতে চান, যারা নতুনত্ব আনতে চান, তাদের হয়রানি করা, নিরুৎসাহিত করাই এফডিসি কেন্দ্রিক কিছু পরিচালক, প্রযোজক আর শিল্পীর কাজ। ‘গাঁজাখুরি সিনেমা’ চালিয়ে চালিয়ে হলগুলোর ইমেজটাও যে সেরকম হয়েছে সেটা তারা মানেন না।

সময় এসেছে ভাবনার জগতে পরিবর্তন আনার। চলচ্চিত্র হলো একটি জাতির সৃজনশীল বহিঃপ্রকাশ। এখন যারা এফডিসিতে ছবি নির্মাণ করছে সেখানে সংস্কৃতি আছে কিনা দেখতে হবে। বলা হয় ভালো গল্পের অভাব। কিন্তু গল্প আসবে কোথা থেকে? সংস্কৃতির চর্চা যারা করেন তাদের সঙ্গে উঠাবসা নেই এফডিসি কেন্দ্রিক চক্রের। আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির উঠাবসা নেই প্রযুক্তির সঙ্গেও। বলা হয় চলচ্চিত্র এখন দাঁড়িয়ে নেই, একেবারে শুয়ে পড়েছে। এখন হিরো-হিরোইন উভয়ই প্রযোজক ধরে আনেন। প্রযোজক নিয়ে আসেন এবং প্রযোজক তার সম্পূর্ণ প্রভাব পরিচালকদের ওপর চাপান। প্রযোজক যাকে নিতে বলছেন তাকেই নিতে হচ্ছে, ছবির ধরনও বলে দিচ্ছেন প্রযোজক।

প্রথম কাজ হলো বাঁচানো। শুধু শুনতে হয় একের পর এক হল বন্ধের খবর। ঢালিউডে সিনেমার ছিটেফোঁটা আছে কিনা খুঁজে দেখা দরকার। আছে কেবল রাজনীতি। কে কাকে বহিষ্কার করছে, কে কাকে হুমকি দিচ্ছে, এসব ছাড়া কোনও গল্প নেই এই পাড়াটার। সেই পাড়ায় যে দুয়েকজন যোগ্য আছেন, প্রচেষ্টা হলো তাদের বেকায়দায় ফেলা, প্রয়োজনে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা।

সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনও সুস্থতার লক্ষণ নয়। সিনেপ্লেক্স বন্ধ হওয়া আরও বেশি খারাপ সংকেত। একটা বড় সমস্যা হলো বাংলা সিনেমায় প্রযুক্তির প্রসার ও উপযুক্ত ব্যবহার চোখে পড়ে না। যেসব প্রিন্টের ছবি এদেশের দর্শকদের দেখানো হয় সেগুলো এযুগের ঝাঁ-চকচকে সিনেমার ডিজিটাল প্রিন্টের সঙ্গে তুলনা করা চলে না।

বিদেশের বাজার তো অনেক দূরের ব্যাপার, দেশের বাজারেই এফডিসি’র সিনেমা এখনও সেই ঘুলিঘুপচির জায়গাতেই পড়ে রয়েছে। অথচ পাশের পশ্চিমবঙ্গের টালিগঞ্জের ছবি লাফিয়ে লাফিয়ে কয়েকশ’ গুণ এগিয়ে গেছে। তফাৎটা শুধুই অর্থনৈতিক নয়। অনেক বেশি শিক্ষা আর রুচির। আয়নাবাজিসহ বেশ কিছু নতুনদের নির্মিত ছবি প্রমাণ করেছে ভালো ছায়াছবির চাহিদা ঠিকই আছে, কিন্তু জোগান নেই।

বসুন্ধরা মার্কেট কর্তৃপক্ষ হল বন্ধ করেছে, কিন্তু সরকার উদ্যোগ নিতে পারে ৬৪ জেলায় ৬৪টি মাল্টিপ্লেক্স করার। চলচ্চিত্র মানুষের, এর উৎসবও মানুষের। চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বাণিজ্যিকীকরণ, সুস্থ ও রুচিশীল বিনিয়োগ এখানে আনতে সরকার আর সিনেমাপ্রেমীদের একটা যৌথ উদ্যোগে মানুষ পাশে থাকবেই।

লেখক: সাংবাদিক।

 

 
/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ