X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

পুড়ছে মুরারিচাঁদ

তুষার আবদুল্লাহ
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:০৮আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:১৬

তুষার আবদুল্লাহ মুরারিচাঁদ কলেজে (এমসি) সুন্দর পদ্ম পুকুর আছে। অনেক পদ্ম ফুটে আছে। সিলেটে আমার সহকর্মীরা লোভ দেখালেন। বিকেলের শেষ প্রান্তে দল বেঁধে এমসি কলেজে যাওয়া। আমি হেঁটে ঘুরে ঘুরে কলেজ ক্যাম্পাস দেখছিলাম। শিক্ষার্থীরা ফুটবল, ক্রিকেট খেলছে। কোথাও কোথাও দল বেঁধে আড্ডা দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বাইরে অনেককে দেখলাম, যারা আমাদের মতোই শত বছর পেরিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী কলেজটি দেখতে এসেছেন। যেকোনও বিদ্যায়তন, সেটি দেশে হোক বা বিদেশে, ঘুরে দেখার মতোই।  চরিত্রগত সাদৃশ্য ছাড়াও আছে, প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য। যেমনটি মুরারিচাঁদ। পদ্মপুকুরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা নেমে এসেছিল। কিন্তু পুকুর ভরা পদ্ম যেন চারপাশ আলো করে রেখেছিল। ইচ্ছে বুনেছিলাম—মুরারিচাঁদের এই পদ্মপুকুরে এক চাঁদরাত কাটাবো। ফিরে আসার দিন কয়েকের মধ্যেই দেখলাম পুড়ছে মুরারিচাঁদ। সন্ত্রাসের আগুনে। যাওয়া হয়নি, ভালোলাগার ছাই উড়ানোর শক্তি নেই। কাল আবার পুড়লো মুরারিচাঁদ। এবার ধর্ষকের নষ্ট আগুনে। ঢাকায় বসে রাত থেকে জ্বলছি ঘৃণার অনলে। 

মেয়েটির বয়স উনিশ। গণমাধ্যমে যতটুকু জানলাম। জানার পর থেকে কাঁপছে শরীর। রাতে ঘুম হয়নি। জেগে ছিলাম। অজান্তে চোখের জল গড়িয়ে পড়েছে। ওই মেয়েটি যে প্রায় আমার কন্যার বয়সী। আমার কন্যাও কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বা অমন কোন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভর্তি হবে। সেখানে এমন নেকড়ে ওঁৎ পেতে আছে জানলে কোন বাবার বুক আঁতকে উঠবে না। কাল যে কন্যা গিয়েছিল স্বামীর সঙ্গে, সে ওই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী না। মুরারিচাঁদের রূপ উপভোগ করতে গিয়েছিল প্রিয়জনের সঙ্গে। কিন্তু আমরাতো এমন অনেক খবর পেয়েছি ক্যাম্পাসে সহপাঠী বা রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীদের দ্বারা ধর্ষণ, গণধর্ষণের শিকার হয়েছে অনেক ছাত্রী। কোনও কোনও ক্যাম্পাসে শত ধর্ষণের পর প্রকাশ্যে বীরত্ব প্রদর্শনের দৃষ্টান্তও আছে। অভিজ্ঞতা হলো, যখন ধর্ষণের মতো ঘটনার সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে যায়, তখন সংগঠনগুলো ওই দায়ীদের অস্বীকার করতে শুরু করে। তারা সংগঠনের কমিটিতে নেই। অনেক আগে বহিষ্কৃত বা বহিরাগত, এমন অজুহাত তুলে দায় অস্বীকার করা হয়। অনেক চেষ্টা করে দায় অস্বীকারে কুলিয়ে উঠতে না পারলে, শেষ হাতিয়ার বহিষ্কার, ছাত্রত্ব বাতিল। তারপর আর ওই মামলা বা ঘটনা চলে যায় শীতাতপ বাক্সে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ছাত্র সংগঠন, গণমাধ্যম ভুলে যায়। কিন্তু মানুষের মন থেকে ঘটনাটিকে সরিয়ে দেওয়া যায় না। যখন এমন আরেকটি ঘটনা ঘটে, তখনই সাধারণ মানুষ, মনে করিয়ে দেয় আগের ঘটনাগুলো। কোনও কোনও ঘটনার বিচার হয়নি। কোনও ঘটনা কীভাবে লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে দুঃসহ স্মৃতিতে ফিরে যাওয়া যায়। স্মৃতিগুলো বারবার ফিরে এসে আমাদের অসহায়ত্বের কথা, মেরুদণ্ডহীনতার কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায়।

ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়ন বিদ্যায়তনের চৌহুদ্দির বাইরেও বেপরোয়া গতিতে ঘটছে। খাগড়াছড়িতে প্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটলো একদিন আগে। সাভারে ভাইয়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করলো দুর্বৃত্তরা। বেড়াতে গিয়ে এর আগেও দেশের বিভিন্ন স্থানে গৃহবধূ, শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ, ত্রাণ আনতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার, সন্তানদের সামনে মাকে ধর্ষণ, এমন ঘটনায় আমরা এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি, যা পত্রিকা বা দৃশ্যমাধ্যমে আমরা শুধু চোখ রেখে বা বুলিয়ে চলে যাচ্ছি। কোথায় যাচ্ছি? আমরা গা বাঁচিয়ে চলে যেতে চাই। ভাবি এমন ঘটনা আমার বা আমার পরিবারের বেলাতে ঘটবে না। ভয়ঙ্কর যা ঘটার, সে অন্যের বেলায় ঘটবে। এই ভাবনার সুখনিদ্রা দীর্ঘ হয় না। নেকড়ের বীভৎস হাসিতে একের পর এক পরিবারের সেই নিদ্রা ভাঙছে। যে কোনোদিন কড়া নাড়তে পারে আপনার দরজাতে। তখন আপনার ভালোবাসা, প্রশ্রয় পাওয়া সংগঠনকে অপরিচিত মনে হবে। সেই সংগঠনের কর্মীদের ঘাতক মনে হবে। যেমন মনে হয়েছিল ২০১২ সালে। ছাত্রলীগ মুরারিচাঁদের একটি ব্লক পুড়িয়ে দিয়েছিল। সেই আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদেছিলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী। তারপরও তাদের সামলানে যায়নি। তাই আজ কাঁদছি কন্যার বাবা, মা, অভিভাবকেরা।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, নিহত ১
ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, নিহত ১
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
দ্বিতীয় বিয়ের চার দিন পর বৃদ্ধকে হত্যা, দুই ছেলে পলাতক
দ্বিতীয় বিয়ের চার দিন পর বৃদ্ধকে হত্যা, দুই ছেলে পলাতক
লখনউ ও চেন্নাইয়ের অধিনায়ককে ১২ লাখ রুপি জরিমানা 
লখনউ ও চেন্নাইয়ের অধিনায়ককে ১২ লাখ রুপি জরিমানা 
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ