নরসিংদীর বেলাব থানার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রিনা বেগমের ছেলেকে হত্যার পর তিন বছর ট্রাকচালক হিসেবে আত্মগোপন করেছিল একই এলাকার কবির মিয়া। অবশেষে খুন ও ডাকাতির অভিযোগে অভিযুক্ত সেই কবির সিআইডির জালে ধরা পড়েছে। সিআইডির কাছে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকারও করেছে সে।
গাজীপুরের শ্রীপুর থানার মাওনা বহেরার চালা এলাকা থেকে কবিরকে গ্রেফতার করে সিআইডি। কবির মিয়া গ্রেফতার এড়ানোর জন্য দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিল। তার বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলা, একটি ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
আজ শনিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে সিআইডির সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন সিআইডির ঢাকা বিভাগ ও ঢাকা মেট্রোর ডিআইজি মো. মাঈনুল হাসান।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, আসামি কবির মিয়ার সঙ্গে নরসিংদীর বেলাবো থানার ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ড নারায়ণপুর ইউপি সদস্য রিনা বেগমের দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধ চলে আসছিল। ওই বিরোধের জেরে রিনা বেগমের ছেলে ফরিদকে হত্যার পরিকল্পনা করে কবির। এ ঘটনা বুঝতে পেরে রিনা তার ছেলে ফরিদকে কক্সবাজার পাঠিয়ে দেন।
মাঈনুল হাসান বলেন, এই মামলার আরেক আসামি বাচ্চু মিয়া ও রিনা বেগমের ছেলে সোহরাব ওরফে মূসা এক সঙ্গে রিনার বাসায় ঘুমাতো। শিপন ও বাচ্চু মিয়াকে কবির প্রস্তাব দেয়, ফরিদকে ডেকে এনে তাদের কাছে দিতে। তখন বাচ্চু মিয়া কবিরকে জানায়, ফরিদ কক্সবাজারে অবস্থান করছে। তখন কবির ফরিদের যে কোনও ভাইকে ডেকে আনার প্রস্তাব দেয় বাচ্চু মিয়াকে। বাচ্চু মিয়া তার এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। পরে শিপন ও কবির বাচ্চু মিয়াকে ভয় দেখায় এবং তাকে কিছু টাকা দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানায়, ২০১৭ সালে ১২ অক্টোবর রাত ২টার দিকে শিপন ও কবির বাচ্চু মিয়াকে ডেকে রিনা বেগমের বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসে। পরিকল্পনা অনুসারে বাচ্চু মিয়া সোহরাবকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। তখন শিপন ও কবির সোহরাবকে জাপটে ধরে মুখে গামছা বেঁধে কুকুর মারা স্কুলের পেছনে নিয়ে যায়।
মাঈনুল হাসান বলেন, শফিক ও মিলন সোহরাবের দুই পায়ে ধরে, তুহিন মাথা ধরে, শিপন ডান হাতে ধরে রাখে। প্রথমে শিপন এবং পরে কবির সোহরাবের গলায় ছুরি চালিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় নিহত সোহরাবের মা রিনা বেগম বাদী হয়ে কবিরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে বেলাব থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। বেলাব থানা পুলিশ মামলাটির তদন্ত করছিল। পরে পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে নরসিংদী জেলার পিবিআই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নেয়। পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুবেল শেখ মামলাটির তদন্ত করে মামলার এজাহার নামীয় আসামি কবিরসহ তিন জন এবং এজাহারের বাইরে আরও দুই জনসহ মোট পাঁচ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়। পিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিটের বিরুদ্ধে রিনা বেগমের নারাজির প্রেক্ষিতে আদালত চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে দেওয়া হয়। সিআইডি মামলাটির তদন্তকালে পলাতক আসামি কবির মিয়াকে অভিযান চালিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর থানার মাওনা থেকে গ্রেফতার করলো।
কবির মিয়া নরসিংদী জেলার বেলাব থানার খামারেরচর গ্রামের আবদুল হাইয়ের ছেলে।