এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন মার্কিন কবি লুইজ গ্ল্যুক। সুইডিশ অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, লুইজ গ্ল্যুককে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে তার অসামান্য কাব্যকণ্ঠ ও নিরাভরণ সৌন্দর্যবোধের কারণে, যা ব্যক্তিসত্তাকে সার্বজনীন করে তোলে।
লুইজ গ্ল্যুক ১৯৪৩ সালের ২২ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে এক হাঙ্গেরিয়ান বংশোদ্ভূত ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। যে কারণে তার বংশনাম ইদ্দিশ ভাষার অন্তর্গত।
লুইজ গ্ল্যুক ১৯৬৮ সালে ‘ফার্স্টবর্ন’ কবিতার বই প্রকাশের ভেতর দিয়ে কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি পেশায় ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার কবিতার বই ১২টি, গদ্যের বই ২টি। তিনি ‘ওয়াইল্ড আইরিস’ কবিতার বইয়ের জন্য ১৯৯৩ সালে সাহিত্যে পুলিৎজার লাভ করেন।
ডিসেম্বরের শুরুতে ক্রোটন-অন-হাডসনে*
ম্লান রোদে হাডসনের
বরফ জমে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।
হাড়ের ভেতর শুনছি ঠনঠন শব্দ—
মাত্রই ঝরে যাওয়া ধূসর বরফগুলো
নদীর পশম হয়ে গেছে, স্থির।
গত বছর যেদিন গাড়ির চাকা অচল হয়েছিলো
আজ ঠিক সেদিনই ছুটছি আমরা
ক্রিসমাসের উপহার বিলাতে।
প্রবল ঝড়ে তারের উপর
ভেঙে পড়েছে পাইনের ডালপালা…
আমি তোমাকে চাই।
*ক্রোটন-অন-হাডসন একটি স্থানের নাম।
ডুবে যাওয়া শিশুরা
দ্যাখো তুমি, ওদের কোনো বাছ-বিচার নেই
ওরা তো ডুববেই।
প্রথমে বরফের টানে ওরা নামবে—
শেষমেষ ডুবে গেলে
মৃত্যু এসে ওদের নিশ্চুপ করে দেবে।
তারপর সমস্ত শীতকাল
উলের মাফলার ভেসে থাকবে পেছনে,
আর অন্ধকার হাতে পুকুর ওদের গুটিয়ে নেবে।
কিন্তু মরণ আসে অনেক ধারায়,
আগে থেকেই যেন ছিলো খুব কাছে।
যেহেতু সবসময় ওরা যুক্তির কাছে ঘেঁষেনি—থেকেছে নির্ভার।
তাই বাকিটা কেবল স্বপ্নের মতো—
বাতি আর নরম সাদা কাপড়ে ঢাকা
পুরোটা টেবিল—তাদের শরীর।
তবু এখনো তাদের নামগুলো শুনতে পায় তারা
যেন টোপগুলো পুকুরের ভেতরে পিছলে যাচ্ছে :
কীসের অপেক্ষায় আছো?
ঘরে ফেরো, ঘরে ফেরো,
সুস্থির এবং নীল জলের অতলে হারিয়ে যাও
অল হ্যালোজ
এমনকি এখন দৃশ্যগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে
অন্ধকার নেমে পড়ছে পাহাড়ে,
ষাঁড়গুলো নুয়ে পড়ছে নীল জোয়ালে।
মাঠগুলো যেন গুছিয়ে রাখা।
নতুন দাঁতের মতো উঠছে চাঁদ
আর
চারপাশে ফুটেছে হলুদ সিঙ্কফয়েল—
তার ভেতর পথের সীমানায়
সারি সারি আটি গাদা করে বাঁধা।
ফসলের বিরানকাল আসে এভাবে,
যেনবা মড়ক লেগেছে।
মহিলারা জানালায় ঝুঁকে এসে বাড়াচ্ছে হাত
কিছু পাওয়ার আশায়—
আর শস্যের সোনালি রঙ ডাকছে তাদের
এদিকে এসো—এসো এদিকে
গাছ থেকে তারা বেরিয়ে আসে শিরশির করে।